দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পেতেই বাণিজ্য চুক্তি করা হচ্ছে
ইআরএফের ভার্চুয়াল সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য সুবিধা পেতেই সরকার পিটিএ বা এফটিএ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে শুল্ক আয় হ্রাসের সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে এগিয়ে যেতে হলে দক্ষতার সঙ্গে বাণিজ্য করতে হবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাণিজ্যে দক্ষতা অর্জন করেছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে রিসার্চ পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এবং ফ্রাইডরিচ এবার্ট স্টুফটুং এর সহযোগিতায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ভূ-অর্থনীতি ও বাংলাদেশ শীর্ষক ওয়েবিনারে (সেমিনারে)’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন বাণিজ্য কূটনৈতিক চলছে, আমাদেরও এ সুবিধা নিতে হবে। কূটনীতিকদের দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখতে হবে। এরইমধ্যে বাংলাদেশও কাজটি শুরু করেছে। কূটনীতিকদের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশ দ্রুত রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে পারবে। এশিয়া এখন বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোক্তা বিবেচনায় এশিয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। এশিয়ার মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন মানসম্পন্ন পণ্য কিনতে চায়। ফলে এশিয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার হতে পারে। এশিয়ার বাজার ধরে রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। রপ্তানি কারকরাও এখন এশিয়ার বাজারগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এশিয়াই হবে বড় বাজার।
টিপু মুনশি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ বিশ্ববাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশ সরকারের সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে বিশ্বের মন্দা অর্থনীতির মাঝেও আমরা ভালোভাবেই টিকে আছি। বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আশা করা যায় কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাবে।
ইআরএফের প্রেসিডেন্ট শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এম হুমায়ুন কবীর, এমসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। সেমিনারে বিষয়ের ওপর কী-নোট উপস্থাপন করেন র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এমএ রাজ্জাক, এফইএসএমএস এর আবাসিক প্রতিনিধি টিনা ব্লোহোম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
বাণিজ্য সচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন বলেছেন, বিশ্ববাজারে হালাল পণ্যের চাহিদা আছে। দিন দিন চাহিদার আলোকে এসব বাজার আরও প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের হালাল পণ্যের এসব বাজার দখলের সুযোগ আছে। পর্যাপ্ত হালাল পণ্য ও দক্ষ জনবল আমাদের আছে। এটা নিয়ে কাজ করলে হালাল পণ্যের বিশ্ববাজারে বড় অবদান রাখতে পারব। অনেক দেশ হালাল সার্টিফিকেশন অথরিটি গঠন করে কাজ করছে। সেখানে আমাদের সুযোগ আরও বেশি রয়েছে। নিজেদের সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা সফল হবো।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা দেখলে দেখা যায়, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটছে, বাংলাদেশে তার প্রতিফলন ঘটে, বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন বা রপ্তানিতে কী ঘটছে, ইউরোপে তার প্রতিফলন ঘটে। গত ফেব্রুয়ারিতে আমাদের সাপ্লাই চেইন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়। কাঁচামাল স্বল্পতার কারণে আমাদের আইটেম রপ্তানিতে বাধা তৈরি হয়। আবার আমরা কী করছি সেটা সবাই দেখে। গ্র্যাজুয়েশনের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি।
ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন আরও বলেন, আমাদের পরবর্তী টার্গেট নেপাল। আমরা চাই আমাদের পোশাক খাত (আরএমজি) আরও বড় হোক। পাশাপাশি প্লাস্টিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, জুট-এগ্রোবেজ প্রডাক্ট প্রসারিত হোক। আইসিটি নিয়ে ২০২৫ সালে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি টার্গেট নিয়েছি। আবার হালাল পণ্য নিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। এ নিয়ে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে।