ঢাকা রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হজের পর দেশে ফেরা হাজিদের বিশেষ আমল ও দোয়া

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
হজের পর দেশে ফেরা হাজিদের বিশেষ আমল ও দোয়া

হজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। তারা অনেক কষ্ট করে শারীরিক ও আর্থিক এই ইবাদত সম্পাদন করেছেন। তাদের উদ্দেশে হজ-পরবর্তী করণীয় ও দিকনির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন- ‘অতঃপর যখন তোমরা (হজের) যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে নেবে, তখন (মিনায়) এমনভাবে আল্লাহর (জিকির) স্মরণ করবে, যেমন (জাহেলি যুগে) তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদের স্মরণ করতে অথবা তার চেয়েও বেশি গভীরভাবে (স্মরণ করবে)। এমন কিছু লোক আছে যারা বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়ায় (সাওয়াব) দান কর।’ মূলত তাদের জন্য পরকালে (কল্যাণের) কোনো অংশ নেই। পক্ষান্তরে তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোজখের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা বাকারা : ২০০- ২০১)।

ইসলামণ্ডপূর্ব যুগে আরবের লোকেরা হজ সম্পাদন করেই মিনায় মেলার আয়োজন করত। তাই আল্লাহতায়ালা জাহেলি যুগের সে রীতির পরিবর্তন করে মানুষকে নির্দেশ দেন যে, হজের পর মেলা নয় বরং আল্লাহর স্মরণই সর্বোত্তম। আর তা মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত রাখা আবশ্যক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজের উদ্দেশ্যে যাওয়া লোকদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে কী করতে হবে তা বর্ণনা করেছেন প্রিয়নবী (সা.)। হাদিসে এসেছে, হজরত কাব বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।’ (বোখারি)।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত হজের দীর্ঘ সফর শেষে যখন কোনো মানুষ নিজ বাড়িতে ফিরবে তার উচিত নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা অতঃপর ঘরে ফেরা। এ নামাজ আদায় করা প্রিয়নবীর অনুসরণীয় সুন্নত আমল।

মসজিদ থেকে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নিজ ঘরে প্রবেশের পরও শুকরিয়াতান দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাত নামাজ পড়বে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনও দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার)।

নিরাপদে হজ পালন করে দেশে ফিরে আসার পর শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেওয়াও বৈধ। হাদিসে এসেছে- হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি পশু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবায়ে কেরাম তা থেকে আহার করেছেন।’ (বোখারি)।

হজ পরবর্তী সময়ে বেশি বেশি এ জিকির করা- রাব্বানা আতিনা ফিদ্?দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখেরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান নার।’ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোজখের যন্ত্রণাদায়ক আগুন থেকে রক্ষা কর।’

মনে রাখতে হবে, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে হজ-পরবর্তী সময়ে বিশাল আয়োজনের ব্যবস্থা করা ইসলাম সমর্থন করে না। যেখানে সমাজের উঁচু থেকে নিচু সব শ্রেণির মানুষ আসবে আর আয়োজনকারীকে বাহবা দেবে। এমনটি যেন না হয়। মূল কথা হলো- হজ পালনকারীর প্রতিটি কাজই হবে আল্লাহ সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। সুস্থ শরীরে সুন্দর ও নিরাপদে হজ পালন করে বাড়ি ফেরার পর বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণে নিজেকে নিয়োজিত করাই হবে একজন হজ পালনকারীর কাজ। শুধু তাণ্ডই নয়, হজ-পরবর্তী জীবনের প্রতিটি কাজই হবে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে। তাই হজ থেকে ফিরে আসার পর স্থানীয় লোকজন যেমন হজ পালনকারীকে শুভেচ্ছা জানাবে, তেমনি হজ পালনকারী ব্যক্তিও তার শুভাকাক্সক্ষীদের জন্য কল্যাণের দোয়া করবেন। পরস্পর মুসাহাফা ও কোলাকুলি করবেন। দোয়ার আয়োজন করবেন। এমনটি করা মোস্তাহাব। তবে কোনোভাবেই ফুল দিয়ে বরণ বা ফুলের মালা বিনিময় কিংবা স্লোগান দেওয়া ইত্যাদি আয়োজন করা ঠিক নয়।

হজ পালনকারীর পবিত্র নগরী মক্কা থেকে আসার সময় যদি জমজমের পানি নিয়ে আসেন, তবে তা লোকদের পান করানো মোস্তাহাব। অসুস্থ ব্যক্তিদের আরোগ্য লাভের নিয়তে পান করানোও বৈধ। হাদিসে এসেছে- ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বাইতুল্লাহ জেয়ারত করে আসার সময় জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে আসতেন।’ (তিরমিজি)।

সর্বোপরি হজে মাবরুর নসিব হলে হজ পালনকারী ব্যক্তি সদ্য প্রসূত ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। তাই হজ পালনকারী ব্যক্তি হজ-পরবর্তী জীবনে নিজেকে নিষ্পাপ কুলুষমুক্ত রাখতে দুনিয়ার সব কাজেই আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা একান্ত জরুরি। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহর সব হজ পালনকারীকে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক আমৃত্যু জীবনযাপন করার তৌফিক দান করুন। হজ করেছেন বিধায় নামাজ আদায় করা দরকার কিংবা লোকে হাজী বলবে, এ নিয়ত পরিহার করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত