ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মদিনা শরিফের জুমার খুতবা

উত্তম প্রতিবেশীর গুরুত্ব

শায়খ সালাহ বিন মুহাম্মদ আল বুদায়ের
উত্তম প্রতিবেশীর গুরুত্ব

লোকালয়ে কিংবা শহরে একসঙ্গে যারা থাকে, তারাই একে অপরের প্রতিবেশী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ শহরে আপনার প্রতিবেশী অল্পই থাকবে।’ (সুরা আহযাব : ৬০)। আল্লাহতায়ালা বাড়ির প্রতিবেশীকে সম্মান করতে, তার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হতে আদেশ করেছেন; সে তার বংশের কাছাকাছি হোক বা দূরের হোক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘উপাসনা কর আল্লাহর, শরিক কোরো না তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে। পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়, এতিমণ্ডমিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতি সৎ ও সদয় ব্যবহার কর। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক-গর্বিতজনকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা : ৩৬)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম সঙ্গী সে-ই, যে তার বন্ধুর কাছে ভালো এবং আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে-ই, যে তার প্রতিবেশীর কাছে ভালো।’ (মুসনাদে আহমদ)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে।’ (মুসনাদে আহমদ)।

সদ্ব্যবহারে নিজের কল্যাণ

যে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, তা তার নিজের জন্যই কল্যাণকর হয়; আর যে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদয় হয়, তার ঘরে বরকত নেমে আসে। প্রতিবেশীর সম্মানের মধ্যে রয়েছে- তার প্রতি সদয় থাকা, আস্থা রাখা, দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা, স্খলন ক্ষমা করা, পদস্খলনকে বর্জন করা, পবিত্রতা ও চুক্তি রক্ষা করা, উপদেশ দেওয়া এবং সাহায্যে সাড়া দেওয়া ও প্রতিদান দেওয়া। এ ছাড়া তার প্রয়োজন পূর্ণ করা, তাকে সাহায্য করা, তার সার্বিক যত্ন নেওয়া, ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা এবং প্রতারিত, বিপথগামী ও প্রতারক হওয়া থেকে বিরত থাকা চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, যার প্রতিবেশী তার পাপাচার থেকে নিরাপদ নয়।’ (বোখারি ও মুসলিম)। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদয় হোন এবং গরিব, এতিম, বিধবা ও অভাবী লোকদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করুন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে মোমিন নয়, যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে, আর সে নিজে পরিপূর্ণ খেয়ে থাকে।’ (বোখারি)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘হে আবু যর! যদি তুমি ঝোল রান্না কর, তবে ঝোলের সঙ্গে আরও পানি যোগ কর এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে তা শেয়ার কর।’ (বোখারি)।

উত্তম প্রতিবেশীর গুরুত্ব

পরিদর্শন, সামাজিকতা এবং শিশুদের দেখাশোনার মাধ্যমে প্রতিবেশীরা একে অপরের নৈতিকতা অর্জন করে। মনীষীরা বাড়ি নির্মাণের আগে প্রতিবেশী বেছে নিতেন। প্রতিবেশী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে জ্ঞানী লোকেরা বলেন, ‘বাড়ির আগে প্রতিবেশী এবং রাস্তার আগে সঙ্গী। আপনার বাড়ি কেনার আগে প্রতিবেশীকে চিনুন। যে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, তার আচরণ খারাপ হয়ে যায়।’ ঘরে সুখের জন্য উত্তম প্রতিবেশী আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন মুসলমান ব্যক্তির সুখ হলো একটি প্রশস্ত বাসস্থান, ভালো প্রতিবেশী এবং একটি আরামদায়ক বাহন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ)। তাই সন্দেহ, অশ্লীলতা ছড়ায় এমন প্রতিবেশী থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে দূরে রাখা উচিত। তাদের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা খারাপ প্রতিবেশী থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। কারণ, (এদের কারণে) নেক প্রতিবেশী তোমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’ (সুনানে নাসাঈ)।

সুখী ব্যক্তির পরিচয়

যে তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারে, সে-ই সুখী। প্রতিবেশীরা তার জন্য কল্যাণের দোয়া ও প্রশংসা করে। কারণ, প্রতিবেশীদের জবান হলো ভারসাম্যের জবান এবং অপব্যবহার বা অনুগ্রহের প্রমাণ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে বলল, ‘আমি কি করে বুঝব- ভালো করেছি নাকি খারাপ করেছি?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শোন- তুমি ভালো করেছ, তাহলে তুমি ভালো করেছ। আর যদি তাদের বলতে শোন- অন্যায় করেছ, তাহলে তুমি ভুল করেছ।’ (মুসনাদে আহমদ)। ওমর (রা.) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তির তিনটি গুণ থাকে, তবে তার ভালো সম্পর্কে সন্দেহ করবে না। তা হলো- যদি তার আত্মীয়, প্রতিবেশী এবং তার সঙ্গী তার প্রশংসা করে।’

১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৪ (৬ জানুয়ারি ২০২৩) তারিখে মদিনার মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন আল মামুন নূর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত