হে প্রিয়তম রাসুল
তামিম মাহবুব
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
হৃদয়ের কাফনে যখন থরথরে হরফের মেলা বসে, কপাট খুলে হুড়মুড় করে ঢোকে ঝাপসা আঁধার। ঘুরে ঘুরে আমার গদ্যের অলিগলিতে হেসে হেসে ভেসে ওঠে মুহাম্মদের সমুজ্জ্বল নাম। মুহাম্মদ! তোমার নামের বাঁকে বাঁকে কত শত জোনাকের বাস। এক ফালি চাঁদের মায়াবী মুখ যেন মেশকের ভারে নুয়ে নুয়ে পড়ে। ঠিকরে পড়ে ফিনিক ঝরা দুধস্নাত জোছনা। তোমার বরকতি আগমনেই তো কণ্ঠ বাতাসে-উচ্ছ্বাসে উচ্চকিত হয়- তালাআল বাদরু আলাইনা। মুহাম্মদ! তুমি জাহালাতের মরুর বুক চিরে বইয়েছ সত্যের খোরস্রোতা স্রোতস্বিনী। পাথুরে হৃদয়ে ফুটিয়েছ সুরভিত সন্ধ্যামালতি। মরণোন্মুখ মানবতা পেয়েছে সঞ্জীবনী শ্যামলীমা। তোমার সান্নিধ্যের পরশে সাধারণ ভূষিত হয়েছে ‘সাহাবা’ নামে। আত্মপরিচয় ভোলা মানুষগুলোর রাত কেটে যায় নিমগ্ন তেলাওয়াতে, তাহাজ্জুদের সেজদায়। দিন কাটে এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহ’র মাঝে।
একাকার ছিল পৃথিবীর সব পবিত্রতার শুভ্রতা
মুহাম্মদ! আমার হৃদয়ের পরতে পরতে ছিটিয়ে আছে কত প্রেমের গোলাপজল, ভাবনার সোনাঝরা রোদ্দুর, ভালোবাসার রেখা রেখা সজীবতা, দিগন্তের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া সূর্যের মতো স্নিগ্ধতা। সবকিছু তোমাকে ঘিরেই। ঝিরঝিরে বৃষ্টির দিনে, জোছনার রং ছাওয়া রাতে, তারা ঝরা সন্ধ্যায় তুমি ভেসে ওঠ মনমুকুরে। মহামানব হে! আমার হৃদয়ের চাদর বিছিয়ে দিলাম। সবুজ গম্বুজের কালো ছায়ায় তুমি দেখা দাও। আস্বাদন করাও দিদারের মধুমাখা স্বাদ। হে প্রিয় মুহাম্মদ! মেঘের কোলে পিটপিট করে তাকায় সূর্য। নীরব মিটিমিটি হাসে বাতাসে দোলা কলমি ফুল। এসব ধূসর তোমার চাহনিতে, শুধুই ধোঁয়াটে। তোমার ঠোঁট বেয়ে মুক্তো ঝরত ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিজলের মতো। এতে মিশে একাকার ছিল পৃথিবীর সব পবিত্রতার শুভ্রতা। জড়িয়ে ছিল যেন কাশফুল। হরফের সাঁকো বেয়ে যাই। পড়ে যাই সিরাতের কালো কালো হরফ। তখনও অনুভব জুড়ে শুধুই তুমি সদা সতত। এটাই হৃদয়ের অনুলিপি। কিছুটা আলো, কিছুটা ছায়া। কোশ কোশ সুখ। তোমার নাম যেন নিটোল দিঘির জল। এখানে আমার সুখময় যাপিত সন্ধ্যারা নড়ে ওঠে। ঢেউ খেলে। জড়ো করে নৈঃশব্দ্যতা।
সবুজ গম্বুজের নিচে স্বপ্নের সাদাকালো রং
মুহাম্মদ! তুমুল বিষাদের মৌসুমে জমাট বেঁধে যায় মন। হৃদয়ের আলনায় তুলে রাখি সব যত্নআত্তির মহব্বত আর ইশকের বাতচিত। বেভোল হয়ে কত শব্দের চিল এঁটে দিই ডায়েরির টানা দাগে। ঝলমলে দিনের মতো প্রেম হয়তো ভাসে না। তবু ঝাপসা আঁধার হয়ে কোথা হতে যেন কেউ প্রেমের ছায়া ফেলে এসব ভাঙা ভাঙা বাক্যে। হে প্রিয় রাসুল! হাওরের টলমল জলে যখন আকাশ ফকফকা ভাসে, এক আকাশ বাসতে পারি না বলে ঝাপসা থেকে যায় সব ভালোবাসার আলাপন। যেন কেউ শীতের ঘনীভূত আঁধার ছিটিয়ে দিয়েছে দিনলিপির দেয়ালে দেয়ালে। নিষ্প্রাণ এসব জুমলায় আমি কত কিছু লিখে ফেলি। কত ভাব এঁকে চলি।
অনুবাদ করি দিলের। তবু তোমায় অনুবাদ করার সাহস যেন ডানা মেলা সালওয়ার মতো হাওয়া হয়ে যায়। তবু ঠোঁট ভিজিয়ে দরুদ পাঠাই। পুলকিত হই। বারবার সবুজ গম্বুজের নিচে ছড়ানো ছায়ায় ঠেকাতে চাই কপাল, লেপে দিতে চাই আমার অনুভব, কল্পনা আর যতসব স্বপ্নের সাদাকালো রং। মুহাম্মদ! তোমার নামের দোলায় আমার জীবনের মধু ফুরাক।
জীবনের উপায়ন্তে তোমার ভাবনায় কাটুক বিকেল সায়াহ্ন। তোমার নামের দরুদ শোনাই হাসনাহেনাকে, বকুলকে। মুঠো মুঠো দরুদ রাখি চিলের ডানায়, সোনার পলকে, কোমল পাপড়িতে। মুখে আওড়িয়ে লিখি- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।