ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মদিনা শরিফের জুমার খুতবা

বান্দার অধিকারের গুরুত্ব

শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল বুয়াইজান
বান্দার অধিকারের গুরুত্ব

আল্লাহতায়ালা যা নির্দেশ করেছেন, সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। যা নিষেধ করেছেন, তা এড়িয়ে চলতে হবে। আল্লাহর কাছে যেসব বিষয়ের হিসেব দিতে হবে, সেসব ব্যাপারে আজই সতর্ক হতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সুরা যিলযাল : ৭-৮)। পৃথিবী পরীক্ষাকেন্দ্র। আর পরকাল প্রতিদান পাওয়ার স্থান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। পার্থিব জীবন ধোঁকা বৈ কিছু নয়।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫)।

অধিকার আদায়ের গুরুত্ব

মানুষের হক তথা অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। কেননা, এ ব্যাপারে অবহেলার জন্য পরবর্তীতে অনুশোচনা করতে হয়। মানুষের অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করার কারণ হলো, এটি একটি ভারী বোঝা; একটি উপদেশ এবং জটিল হিসেব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেদিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার কাছ থেকে নেওয়া হবে, আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।’ (বোখারি : ১৫৩৪)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা কি বলতে পার, দরিদ্র (দেউলিয়া) কে?’ সাহাবিরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে যার দিরহাম (টাকাণ্ডপয়সা) ও আসবাবপত্র (ধন-সম্পদ) নেই, সেই তো দরিদ্র।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সেই প্রকৃত অভাবগ্রস্ত, যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও জাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও অমুককে মেরেছে। এরপর অমুককে তার নেকআমল থেকে দেওয়া হবে, তমুককে নেকআমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর তার কাছে (পাওনাদারের) প্রাপ্য তার নেকআমল থেকে পূরণ করা না গেলে ঋণের বিনিময়ে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম : ৬৩৪৩)। যদি অনুভব করা যেত, মানুষদের অবস্থা সেদিন কেমন হবে! আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সেদিন মানুষ তার ভাই, মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকে পলায়ন করবে। প্রত্যেকের সেদিন নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।’ (সুরা আবাসা : ৩৪-৩৭)।

অপরিচিতদের অধিকারের গুরুত্ব

মানুষের অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। অপরিচিতদের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা চাই। যাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই, তাদের অধিকার হচ্ছে তাদের ক্ষমা করা এবং তাদের অভিযোগের সমাধান করা। পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের ব্যাপারেও আল্লাহকে ভয় করা চাই। কেননা, আল্লাহ? এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। পিতামাতা ও সন্তানের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা চাই। স্বামী-স্ত্রীর হক তথা একে ওপরের অধিকারের ব্যাপারেও আল্লাহকে ভয় করতে হবে। দয়া, স্নেহ ও করুণা দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর এক নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন; যেন তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম : ২১)।

নিকটাত্মীয় ও স্বামী-স্ত্রীর হক

আল্লাহতায়ালা নিকটাত্মীয় ও স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নারীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর।’ (সুরা নিসা : ১৯)। তিনি আরও বলেন, ‘পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনি স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর। তবে নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।’ (সুরা বাকারা : ২২৮)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা পারস্পরিক সহানুভূতির কথা ভুলে যেও না।’ (সুরা বাকারা : ২৩৭)। আল্লাহতায়ালা বৈবাহিক বিধান এবং অধিকার আইন করেছেন, তাই তিনি প্রত্যেক পক্ষের জন্য বিধান, অধিকার এবং কর্তব্য তৈরি করেছেন। তিনি তাদের জন্য শাস্তি ও হিসাব নির্ধারণ করেছেন। এটি পরীক্ষাকেন্দ্র। তাই আল্লাহকে ভয় করতে হবে। তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুভব করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থের জন্য দায়ী। পুরুষ তার পরিবারের অধিকারের জন্য দায়ী, নারী তার সংসার ও স্বামীর অধিকারের জন্য দায়ী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ মেনে চল, যদি ঈমানদার হও।’ (সুরা আনফাল : ১)।

১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৪ (১৮ জানুয়ারি ২০২৩) তারিখে মদিনার মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন আল মামুন নূর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত