নবীপ্রেমিক সাহাবিদের ঈমানদীপ্ত দাস্তান

আবদুল্লাহ নোমান

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বমানবতার অনুপম রূপকার মহানবী (সা.)। যাঁর আগমনে ধন্য এ ধরা। যাঁর সৌরভে আমোদিত এ পৃথিবী। ইতিহাসের বর্ণিল পাতায় নবীপ্রেমের হাজারো ঘটনা সমুজ্জ্বল রয়েছে এখনও, যা যুগের পর যুগ মানুষের হৃদয়জগৎকে আলোকিত করে। চেতনাকে সমৃদ্ধ করে। বিশ্বাসকে দৃঢ় করে। নবীজীবনের উষালগ্ন থেকে শুরু করে অসংখ্য নবীপ্রেমিকের আগমন ঘটেছে মনোরম এ বসুন্ধরায়। যাদের বুকের সিন্দুকে ছিল নবীপ্রেমের অমূল্য ধন। হৃদয়ের মণিকোঠায় ছিল রাসুলপ্রেমের অতুলনীয় রতন। তারা নিজেদের জীবনের চেয়েও নবীজি (সা.)-কে অধিক ভালোবেসেছেন। জীবনের পরতে পরতে নববি সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরেছেন। প্রিয়নবী (সা.)-এর স্নেহধন্য সাহাবায়ে কেরাম (রা.) তার প্রতি প্রেমণ্ডভালোবাসা ও আত্মত্যাগের যে অবিশ্বাস্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা শুধু বিস্ময়করই নয়; নজিরবিহীনও বটে। তারা পেয়ারা হাবিবের একটু সান্নিধ্যের সৌরভের আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনতেন। তার মুখ নিঃসৃত অমূল্য বাণী শ্রবণে ধন্য হওয়ার জন্য ব্যাকুল মনে উন্মুখ হয়ে থাকতেন। নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসায় সবকিছু বিসর্জন দিয়েছিলেন হাসিমুখে। যারা মুহূর্তেই নিজেদের প্রাণোৎসর্গ করতেও প্রস্তুত থাকতেন তার একটু ইশারায়। তারা ছিলেন নবীপ্রেমের প্রকৃত ফেরিওয়ালা। তাই তো আবু সুফিয়ান (রা.) ইসলাম গ্রহণের আগেই অকপটে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ‘আমি কাউকে এতটা ভালোবাসতে দেখিনি, মুহাম্মদ (সা.)-কে তার সঙ্গীরা যতটা ভালোবাসে।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম : ২/১৭২)।

নবীপ্রেমে ঈমানের পূর্ণতা

ঈমানের পূর্ণতা উপলব্ধি করার মাপকাঠি হলো, নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা। নবীপ্রেমের সুরভিত পুষ্প, যার হৃদয়ে যত প্রস্ফুটিত হবে, তার ঈমান তত পূর্ণাঙ্গ বলে ধর্তব্য হবে। নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসাবিহীন কেউ পরিপূর্ণ মোমিন হতে পারে না। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতামাতা, সন্তান-সন্তুতি ও সব মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব।’ (বোখারি : ১৫)। এ শুধু মুখরোচক নীতিবাক্য নয়; বরং একজন মোমিনকে অবশ্যই নবীপ্রেমের সিঁড়ি বেয়ে এ কাঙ্ক্ষিত স্তরে উত্তীর্ণ হতে হবে। সবকিছুর ওপর, সবার ওপর প্রাধান্য দিতে হবে আল্লাহর বিধানকে, রাসুল (সা.)-এর আদর্শকে; এমনকি নিজের প্রাণ এবং সন্তান-সন্তুতির ওপরও। তবেই সে স্বীকৃতি লাভ করবে ঈমানের পূর্ণতার। ওমর (রা.)-এর ঐতিহাসিক ঘটনাই যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) বলেন, একদিন আমরা নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। নবীজি (সা.) ওমর (রা.)-এর হাত ধরা ছিলেন। ওমর (রা.) বলে উঠলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার জান ছাড়া।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘না ওমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মোমিন হতে পারবে না) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও প্রিয় না হই।’ পরক্ষণেই ওমর (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, এখন তা হয়েছে; আল্লাহর কসম! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও প্রিয়।’ এবার নবীজি (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ ওমর! এখন হয়েছে।’ (বোখারি : ৬৬৩২)।

আবু বকর (রা.)-এর নবীপ্রেম

আবু বকর (রা.) ছিলেন প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রধান সাহাবি ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণের মহাসৌভাগ্য আল্লাহতায়ালা তাকেই দিয়েছেন। তিনি ইসলামপূর্ব যুগে যেমন নবীজি (সা.)-এর কল্যাণকামী ছিলেন, তেমনি ইসলামণ্ডপরবর্তী সময়েও ছিলেন তাঁর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। নবীপ্রেমের নজরানা পেশ করেই গেছেন আমৃত্যু। তিনিই ছিলেন নবীজি (সা.)-এর ঐতিহাসিক হিজরতের সফরসঙ্গী। ছিলেন গারে সাওরের একনিষ্ঠ বন্ধু। তা ছাড়া নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে কাফেরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নানা প্রতিকূলতায় ও বিপদাপদে মজবুত ঢাল হিসেবে নবীজি (সা.)-এর পাশে ছিলেন। এ জন্য সময়ে অসময়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে তিনি সব সহ্য করেছিলেন হাসিমুখে। ছুড়ে দেওয়া পাথরকে ফুলরূপে বরণ করেছিলেন প্রিয়তম নবীজি (সা.)-এর অকৃত্রিম ভালোবাসায়। শত্রুবাহিনীর সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তিনি যেমন ছিলেন বিচক্ষণ ও আপসহীন, তেমনি ছিলেন অদম্য সাহসী এবং অতন্দ্র প্রহরী। বিশেষ করে, নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের পর আরব দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে যখন ধর্মত্যাগ, ইসলামবিদ্বেষ এবং রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ অবমাননার এক প্রলয়ঙ্করী ঝড় উত্থিত হয়েছিল এবং এ প্রবল ঝড়ের ঝাপটায় দুর্বল ঈমানদার ও নওমুসলিমদের অন্তর থেকে ঈমানের আলো নিভু নিভু হয়ে গিয়েছিল, ভয়ানক সে মুহূর্তে অত্যন্ত দৃঢ়তা এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে আবু বকর (রা.) শত্রুবাহিনীর মোকাবিলা করেছিলেন। আর এসব কিছুই ছিল প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ও গভীর মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। মৃত্যুশয্যায়ও প্রেমাস্পদের প্রতি তার এ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ব্যাকুল মনে। তিনি আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন, তার মৃত্যু যেন হয় সেদিনে, যেদিনে প্রিয়তম নবীজি (সা.)-এর মৃত্যু হয়েছিল। বর্ণিত আছে, মৃত্যুশয্যায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নবীজি (সা.) কোন দিন ইন্তেকাল করেছেন?’ আয়েশা (রা.) জানালেন, ‘সোমবার’। তিনি বললেন, ‘আজ কী বার?’ আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, ‘সোমবার’। তখন তিনি বলেন, ‘হায়, যদি আমার মৃত্যু রাতের আগেই হতো!’ (বোখারি : ১৩৮৭)।

ওমর (রা.)-এর নবীপ্রেম

নববি পরশ পাথরে ধন্য অন্যতম সাহাবি ওমর (রা.)। তিনি যেমন ছিলেন নবীপ্রেমে পাগলপারা, ছিলেন বিচক্ষণ ও সাহসী। যার নাম শুনলেই বাতিলের মনে কম্পন সৃষ্টি হতো। তাগুতের মসনদ গুঁড়িয়ে দিতে তিনি ছিলেন প্রবাদ পুরুষ। রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালে তিনি এত বেশি বিরহ-বিধূর হয়ে পড়লেন যে, বলতে লাগলেন, ‘আল্লাহর কসম! রাসুল (সা.) মারা যাননি; তিনি তার রবের কাছে গেছেন, যেভাবে গেছেন মুসা ইবনে ইমরান (আ.)। ৪০ রাত তিনি নিজ সম্প্রদায় থেকে অনুপস্থিত ছিলেন। অবশেষে তিনি ফিরে এসেছেন। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই রাসুল (সা.) ফিরে আসবেন। যারা বলবে, রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাদের হাত-পা কেটে ফেলব।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম : ২/৬৫৫)। আবু সালামা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) আমাকে বলেছেন, রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর খবর পেয়ে আবু বকর (রা.) ‘সুনহে’ অবস্থিত তার বাড়ি থেকে ঘোড়ায় চড়ে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে লোকজনের সঙ্গে কোনো কথা না বলে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং রাসুল (সা.)-এর দিকে অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একটি হিবারাহ ইয়ামেনি চাদরে আবৃত ছিলেন। আবু বকর (রা.) নবীজি (সা.)-এর মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করে তার ওপর ঝুঁকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন। এরপর কান্না করতে লাগলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আমার পিতা আপনার জন্য কোরবান হোক! আল্লাহ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্রিত করবেন না। তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য অবধারিত ছিল, তা তো আপনি কবুল করেছেন।’ আবু সালামা (রা.) বলেন, আমাকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, (তারপর) আবু বকর (রা.) বাইরে এলেন। তখন ওমর (রা.) লোকজনের সঙ্গে বাক্যালাপ করছিলেন। আবু বকর (রা.) তাকে বললেন, ‘বসে পড়ুন’। তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। (আবার) বললেন, ‘বসে পড়ুন’। তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। আবু বকর (রা.) কালেমায়ে শাহাদতের দ্বারা বক্তব্য শুরু করলেন। লোকেরা ওমর (রা.)-কে ছেড়ে তার দিকে আকৃষ্ট হন। (আবু বকর (রা.) একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন)। তিনি বললেন, ‘যারা মুহাম্মদ (সা.)-এর ইবাদত করে, নিশ্চয়ই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি কখনও মৃত্যুবরণ করবেন না।’ এরপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন, ‘মুহাম্মদ রাসুল ছাড়া কিছুই নন; তার আগেও বহু রাসুল অতিবাহিত হয়েছেন। তার যদি মৃত্যু হয়ে যায় কিংবা তাকে হত্যা করে ফেলা হয়, তবে কি তোমরা উল্টো দিকে ফিরে যাবে? যে কেউ উল্টো দিকে ফিরে যাবে, সে কখনও আল্লাহর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ অতিসত্বর কৃতজ্ঞদের পুরস্কার দান করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৪৪)। আল্লাহর কসম! মনে হচ্ছিল, যেন আবু বকর (রা.)-এর তেলাওয়াত করার আগে লোকদের জানাই ছিল না যে, আল্লাহতায়ালা এ আয়াত নাজিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াতটি তার কাছ থেকে শুনতে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ওই আয়াত তেলাওয়াত করতে শোনা গেল। (বোখারি : ১২৪১)। বোখারির অন্য বর্ণনায় আছে, ওমর (রা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি যখন আবু বকর (রা.)-কে ওই আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনলাম, তখন ভীত হয়ে পড়লাম। আমার পা দুটি যেন আমার ভার নিতে পারছিল না। এমনকি আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। যখন তাকে আয়াতটি তেলাওয়াত করতে শুনতে পেলাম, তখন বুঝতে পারলাম, নবীজি (সা.) ইন্তেকাল করেছেন।’ (বোখারি : ৪৪৫৪)।

নবীপ্রেমের টুকরো টুকরো ঝলক

জগৎ ও জগৎবাসীর ওপর প্রিয় নবীজি (সা.)-এর যেমন অপার অনুগ্রহ ও করুণা রয়েছে, তেমনি মানবতা ও বিশ্বসভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রেও রয়েছে তার অনবদ্য অবদান। যার ঋণ কখনও পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন মহানবী (সা.)-এর হাতেগড়া শিষ্যকুল, তার স্নেহধন্য আলোকিত কাফেলা সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। তাই তো তারা যে কোনো নববি আদেশ পালনে উন্মুখ হয়ে থাকতেন সদা। তার যে কোনো হুকুম পালনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন বিনাবাক্যে। নববি নির্দেশনা পালনে প্রতিযোগিতা করতেন পরস্পরে। নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে তাদের ছিল আত্মার সম্পর্ক, হৃদয়ের বন্ধন। প্রেমিকের কাছে প্রেমাস্পদের সবকিছুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকে। তার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি বস্তুর জন্য থাকে মনের টান। এমনকি প্রিয়তমের মুখের লালাও মনে হয় রসগোল্লার চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি। উরওয়া ইবনে মাসউদ (রা.) ইসলাম গ্রহণের আগে হোদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকদের পক্ষ হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন। রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের কাছে যেই ঈমান জাগানিয়া অনুভূতি পেশ করেছিলেন, তা হাদিসের কিতাবে এখনও দেদীপ্যমান, ইতিহাসের পাতায় এখনও সমুজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক রাজা-বাদশাহর কাছে প্রতিনিধি হয়ে গেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশির কাছেও গেছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মদ (সা.)-কে তার সঙ্গীরা যেভাবে ভক্তি করে, সেভাবে আমি আর কাউকে দেখিনি তাদের বাদশাহকে ভক্তি করতে। আল্লাহর কসম! তিনি থুতু ফেললেই তাদের কেউ না কেউ তা হাতে নিয়ে নেয় এবং তা চেহারায় ও শরীরে মাখে। তিনি যখন তাদের আদেশ করেন, তখন তারা তার আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি অজু করেন, তখন তার অজুতে ব্যবহৃত পানি পাওয়ার জন্য লড়াই করার উপক্রম হয়।’ (বোখারি : ২৫৮১)।

মৃত্যুশয্যায়ও প্রিয়তমের স্মরণ

নবীপ্রেমে উদ্দীপ্ত সাহাবায়ে কেরাম যেমন প্রিয়তম নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসতেন, তেমনি মহব্বত করতেন তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেও। তাই তো নবীজি (সা.)-এর মু-িত চুল মোবারকও মাটিতে পড়তে দিতেন না তারা; বরং পরম সৌভাগ্য মনে করে নিজ হাতেই নিয়ে নিতেন বরকতের ছোঁয়া পেতে। আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে দেখেছি, তার চুল মোবারক মু-ন করা হচ্ছে, আর তার সাহাবিরা তাকে ঘিরে আছে। তারা চাইছিলেন, তার একটি চুলও যেন মাটিতে না পড়ে; বরং কারও না কারও হাতেই পড়ে।’ (মুসলিম : ২৩২৫)। আলোর কাফেলা সাহাবিদের কাছে প্রিয় রাসুল (সা.) ছিলেন চেতনার বাতিঘর। তার ভালোবাসায় তাদের হৃদয়জগৎ ছিল টইটম্বুর। তাই তো মৃত্যুর বিছানায়ও তার কথা ভোলেননি সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.)। তিনি মৃত্যুশয্যায় বলেছেন, ‘এ পৃথিবীতে আমার কাছে রাসুল (সা.)-এর চেয়ে অধিক প্রিয় ও মহান আর কেউ নেই। আমার হৃদয়ে তার সম্মান ও মর্যাদার এ অবস্থা ছিল যে, আমি তার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারতাম না। আমাকে যদি তার দেহাবয়বের বর্ণনা দিতে বলা হয়, আমি পারব না। কারণ, আমি দু’চোখ ভরে তাকে দেখতে পারিনি।’ (মুসলিম : ১৯২)।

লেখক : সিনিয়র মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম