মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা), টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায়, ফরজ নামাজের জামাতে সামনের কাতারে জায়গা ফাঁকা রেখে মুসল্লিরা পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে যায় এবং তাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা ছাড়া সামনের কাতার পূর্ণ করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় কি তাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ হবে?

উত্তর : কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখা মাকরুহে তাহরিমি। কোনো জামাতের নামাজে সামনের কাতার খালি রেখে মুসল্লিরা পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে গেলে কাতার পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনে ওই মুসল্লিদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। এতে নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার গোনাহ হবে না। (মুসনাদে আহমদ : ৫৭২৪, রদ্দুল মুহতার : ১/৬৩৬, আদ্দুররুল মুনতাকা : ১/১৮৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাদ্দুর : ১/২৬৯)।

প্রশ্ন : আমরা জানি, নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা গোনাহ; কিন্তু কখনও এমন হয় যে, নামাজ শেষে বসে তাসবিহ পাঠ করছি, এর মধ্যেই পেছনে তাকিয়ে দেখি, আমার সোজা বরাবর পেছনে একজন নামাজ পড়ছে। এরূপ নামাজির সামনে বসা থেকে উঠে চলে গেলে কী গোনাহ হবে?

উত্তর : নামাজির সামনে অবস্থানকারী প্রয়োজনে ডানে বা বামে সরে যেতে পারবে। এতে নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার গোনাহ হবে না। হাদিসে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তা নামাজির সামনে দিয়ে চলাচল করা বা আসা-যাওয়া করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবশ্য নামাজির সামনে অবস্থানকারী ব্যক্তির প্রয়োজন না থাকলে অপেক্ষা করাই ভালো। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১০৪, ফাতহুল বারি : ১/৬৯১, রদ্দুল মুহতার : ১/৬৩৬, ইলাউস সুনান : ৫/৮১, ইমদাদুল আহকাম : ১/৮০৯)।

প্রশ্ন : কখনও কখনও শেষ রাতে তাহাজ্জুদ শেষ করার পর যদি দেখা যায় যে, কিছুক্ষণ আগে সুবহে সাদিক হয়ে গেছে; তবে এ নামাজ নফল হিসেবে গণ্য হবে কি-না?

উত্তর : সুবহে সাদিকের আগে নফল শুরু করার পর নামাজ শেষ করার আগেই যদি সুবহে সাদিক হয়ে যায়, তাহলেও তা বাতিল হবে না এবং মাকরুহও হবে না। তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। (তাবঈনুল হাকায়েক : ১/২৩৪, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫২, আল বাহরুর রায়েক : ১/২৫৩, রদ্দুল মুহতার : ১/৩৭৪)।

প্রশ্ন : মাসবুক হওয়ার ক্ষেত্রে মুসল্লি কখনও কখনও ইমামের সঙ্গে পাওয়া রাকাতের সংখ্যা ভুলে যায়। এমন ব্যক্তি যদি তার সঙ্গেই নামাজে যুক্ত হওয়া কোনো মাসবুকের প্রতি লক্ষ্য করে অবশিষ্ট নামাজ শেষ করে, তবে নামাজ সহিহ হবে?

উত্তর : মাসবুক তার পাশের লোকের প্রতি খেয়াল করে ছুটে যাওয়া রাকাতের কথা স্মরণ করে নামাজ পড়লে তার নামাজ হয়ে যাবে। তবে নামাজে ভালোভাবে মনোযোগী হওয়া উচিত; যেন এমন ভুল না হয়। (শরহুল মুনয়া : ৪৬৭, ফতোয়ায়ে খানিয়া : ১/১০৪, আল বাহরুর রায়েক : ১/৩৭৮, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৯২, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৯৭)।

প্রশ্ন : অনেক সময় রুকুতে যাওয়ার পর কোনো কোনো মুসল্লির দ্রুত গতিতে মসজিদে প্রবেশের শব্দ শোনা যায়। এ অবস্থায় ওই মুসল্লির রাকাত পাওয়ার জন্য ইমাম সাহেব রুকুতে একটু দেরি করলে শরয়ি কোনো সমস্যা হবে কি-না?

উত্তর : ইমামের কর্তব্য, সুন্নাহসম্মত পন্থায় নামাজ আদায় করা। কোনো আগন্তুক মুসল্লির রাকাত পাওয়ার জন্য রুকু কিংবা কেরাত লম্বা করা উচিত নয়। অবশ্য কেউ যদি মুসল্লিদের রাকাত পাওয়ার আশায় কেরাত বা রুকু লম্বা করে থাকে, তাহলে এতে নামাজের ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিশেষ কোনো মুসল্লির মনোরঞ্জনের জন্য এমনটি করা জায়েজ নয়। (আল মুহিতুল বোরহানি : ২/১১৫, ফতোয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়্যা : ১/১০৮, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/১৫৫)।

প্রশ্ন : অনেক সময় মাসবুক মুসল্লির তাশাহুদ শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেন। এমতাবস্থায় মুসল্লির করণীয় কী?

উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেওয়ার পর মুসল্লি তাশাহুদ শেষ করেই দাঁড়াবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তাশাহুদ শেষ না করে দাঁড়ালেও নামাজ হয়ে যাবে। তবে এটি নিয়মসম্মত নয়। তাই এরূপ করা উচিত নয়। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ২/১৯২, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৯০, রদ্দুল মুহতার : ১/৪৬, ইমদাদুল আহকাম : ১/৫৫১)।