ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মদিনা শরিফের জুমার খুতবা

বৃষ্টি আল্লাহর নিদর্শন

শায়খ আহমদ বিন আলী আল হুজাইফি
বৃষ্টি আল্লাহর নিদর্শন

তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি এমন একটি বন্ধন, যা ভাঙে না; এমন একটি গিঁট, যা খুলে যায় না; এমন একটি পোশাক, যা খুলে যায় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।’ (সুরা তালাক : ২-৩)। আমরা যখন মহাবিশ্বের বই ঘেঁটে দেখি, এর পৃষ্ঠাগুলো ওল্টাই, এর সৌন্দর্য এবং সূক্ষ্মতার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করি, তখন আল্লাহর সৃজনশীলতায় বিস্মিত হই। এগুলো সৃষ্টিকর্তার পরিপূর্ণতা এবং সৌন্দর্যের প্রমাণ বহন করে। সঠিক চিন্তার অধিকারী ব্যক্তি যত তাড়াতাড়ি এটি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং এর দিকে দৃষ্টি ফেরায়, তত দ্রুত আল্লাহর সেজদায় পড়ে যায়। এ বিশাল মহাবিশ্বের প্রতিটি পরমাণুতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আল্লাহর বড়ত্বের নিদর্শনগুলো বিস্ময়করভাবে প্রদর্শিত হয়। সবকিছুর মধ্যে একটি নিদর্শন রয়েছে, যা ইঙ্গিত করে- তিনি এক অনন্য।

বৃষ্টি আল্লাহর নিদর্শন

নিঃসন্দেহে সেই পূর্ণতা ও সৌন্দর্যের নিদর্শন এবং এর প্রকাশের দৃশ্যগুলোর একটি হলো, আকাশ তার থেকে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করে, পৃথিবীকে সবুজে সুশোভিত করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ভূমির উর্বরতা তাদের অনুর্বরতার পরে এবং খরার পরে আকাশকে ভিন্নরূপে ফিরিয়ে দেন। যেন আকাশের হাসি ভ্রƒকুটি করার পরে নরম হয়ে যায়। দুঃখের পরে আনন্দের সতেজতা ফিরিয়ে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর রহমতের ফল দেখে নাও, কীভাবে তিনি মৃত্তিকার মৃত্যুর পর তাকে জীবিত করেন। নিশ্চয় তিনি মৃতদের জীবিত করবেন এবং তিনিই সবকিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।’ (সুরা রুম : ৫০)।

বৃষ্টি আল্লাহর আদেশে প্রবাহিত হয়

বৃষ্টি আল্লাহর অনুমতিতে পৃথিবীতে জীবনের আত্মায় প্রবাহিত হয়। এটি শাখায় পানির প্রবাহের মতো তার সংযোগস্থলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। কারণ, বৃষ্টি একটি আত্মার মতো; যা সবকিছুকে নতুন জীবন দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস করবে না?’ (সুরা আম্বিয়া : ৩০)। পৃথিবী বৃষ্টি বর্ষণে আনন্দিত হয়। আনন্দের সংবাদে প্রেয়সীর আকুল অভ্যর্থনায় তাকে গ্রহণ করে। বৃষ্টি আল্লাহর একটি বিশেষ রহমত; যাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি আল্লাহর করুণা এবং সৃষ্টিকুলের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ প্রকাশ পায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন নাকি আমি বর্ষণ করি?’ (সুরা ওয়াকিয়া : ৬৮-৬৯)।

বৃষ্টি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন

বৃষ্টির অবতরণ আল্লাহর প্রভুত্ব এবং একত্বের বড় প্রমাণ। বৃষ্টি বর্ষণ আল্লাহর সৃষ্টি ও পরিচালনায় তাঁর স্বতন্ত্রতার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর। যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। আশা করা যায়, তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারবে। যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে। অতএব, আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকেও সমকক্ষ কোরো না। বস্তুত এসব তোমরা জানো।’ (সুরা বাকারা : ২১-২২)। প্রভুত্বে যিনি এক, তিনিই উপাসনার একমাত্র যোগ্য। পবিত্র তিনি, যিনি তাঁর সৃষ্টিকে সঠিক পথ দেখান। আল্লাহতায়ালা সব ধরনের শিরক থেকে পবিত্র।

৪ রজব ১৪৪৪ (২৭ জানুয়ারি ২০২৩) তারিখে মদিনার মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন আল মামুন নূর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত