ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা), টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে শোয়ানোর নিয়ম কী?

উত্তর : মুমূর্ষু ব্যক্তিকে যদি সহজে কেবলামুখী করে শোয়ানো সম্ভব হয়, তাহলে সেভাবেই শোয়ানো উত্তম হবে। আর কেবলামুখী শোয়ানোর দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো, বেহেশতি জেওরে উল্লিখিত পদ্ধতি; আরেকটি হলো, আমাদের দেশের হিসেবে উত্তর দিকে রোগীর মাথা ও দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে ডান কাত করে শোয়ানো। এটি অধিক উত্তম ও সুন্নাহসম্মত। তাই সম্ভব হলে এভাবে শোয়ানো উত্তম হবে। অন্যথায় বেহেশতি জেওরে যেভাবে শোয়ানোর কথা আছে, অর্থাৎ পশ্চিম দিকে পা ও পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে এবং মাথার নিচে উঁচু কোনো বস্তু দিয়ে কেবলামুখী করে শোয়াবে। যদি কেবলামুখী করে শোয়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে শোয়ালে তার জন্য সহজ ও আরামদায়ক হয়, সেভাবে শোয়াবে। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬০৫৯, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২, ফাতহুল কাদির : ২/৬৭, শরহুল মুনয়া : ৫৭৬, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৫৯৬, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ৩০৫, রদ্দুল মুহতার : ২/১৮৯, ইমদাদুল আহকাম : ১/৮২০)।

প্রশ্ন : বোখারি শরিফে আছে, সাহাবায়ে কেরাম এক নারীর জানাজার নামাজ পড়ার পর রাসুল (সা.) পুনরায় ওই নারীর কবরের ওপর জানাজার নামাজ পড়েছেন। সুতরাং এ হাদিস অনুযায়ী জানাজা একাধিকবার পড়া যাবে কী?

উত্তর : মাইয়েতের অভিভাবকের মধ্য থেকে কেউ মৃতের একবার জানাজার নামাজ পড়ে ফেললে দ্বিতীয়বার জানাজার নামাজ পড়া যায় না। কেননা, শরিয়তের বিধান জানাজার নামাজ একবারই পড়া। এক বর্ণনায় এসেছে, নাফে (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন কোনো জানাজায় গিয়ে দেখতেন, জানাজার নামাজ শেষ হয়ে গেছে, তখন তিনি শুধু দোয়া করে ফিরে আসতেন; পুনরায় নামাজ পড়তেন না। (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬৫৪৫)। ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘মাইয়েতের দ্বিতীয়বার জানাজার নামাজ পড়া যাবে না।’ (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬৫৪৪)। অবশ্য মাইয়েতের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া জানাজার নামাজ সম্পন্ন করা হলে অভিভাবক ওই নামাজ পুনরায় পড়াতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তার পেছনে শুধু তারাই শরিক হতে পারবেন, যারা আগের জানাজায় শরিক হননি। প্রশ্নোল্লিখিত বোখারি শরিফের ঘটনার বিধানটি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিশেষায়িত ছিল। বিশিষ্ট ফকিহ ও মুহাদ্দিস ফখরুদ্দিন যাইলায়ি (রহ.) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘রাসুল (সা.) মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক হিসেবে দ্বিতীয়বার জানাজার নামাজ পড়েছেন।’ (তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৫৭৪)। ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, ‘যে মাইয়েতের একবার জানাজা পড়া হয়েছে, দ্বিতীয়বার তার জানাজা পড়া ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) অন্যদের মতো নন। কেননা, রাসুল (সা.)-এর নামাজ বরকত ও পরিশুদ্ধির কারণ। সুতরাং তার নামাজ অন্যদের নামাজের মতো নয়। (মুয়াত্তায়ে মুহাম্মদ : ৩১৭)। তা ছাড়া ইমাম মালেক (রহ.)-এর বিশিষ্ট শাগরেদ ইবনুল কাসেম (রহ.) বলেন, আমি মালেক (রহ.)-কে বললাম, ‘যে বর্ণনায় এসেছে যে, রাসুল (সা) এক নারীর কবরের ওপর তার জানাজার নামাজ পড়েছেন, তার ব্যাখ্যা কী?’ মালেক (রহ.) বলেন, ‘উম্মতের আমল এ হাদিস অনুসারে নয়।’ (ইস্তিযকার : ২/৫৫৯)। অর্থাৎ ইমাম মালেক (রহ.)-ও এ কথা বোঝাতে চেয়েছেন, এ বিধানটি ছিল রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিশেষায়িত। আরও বহু ঘটনা এমন হয়েছে, যেখানে রাসুল (সা.) সাহাবিদের জানাজায় অংশ নিতে পারেননি; কিন্তু পুনরায় তার জানাজার নামাজ পড়েননি। সুতরাং এমন একটি বিশেষ ঘটনা দিয়ে ব্যাপকভাবে দ্বিতীয়বার জানাজা পড়ার দলিল পেশ করা উচিত নয়। (আল মাবসুত লিস সারাখসি : ২/১২৬, মুখতাসারুত তহাবি : ৪২, ফাতহুল কাদির : ২/৮৪, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৮১, মিরকাত : ৪/১২৯, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৬৪, আদ্দুররুল মুখতার : ২/২২৩)।

প্রশ্ন : অনেক এলাকায় মাইয়েতকে কবরে রাখার পর শুধু মুখ কেবলার দিকে ঘুরিয়ে রাখা হয়। পুরো শরীর কেবলার দিকে রাখা হয় না। এতে কি সুন্নত আদায় হবে?

উত্তর : মাইয়েতকে কবরে ডান কাত করে শুইয়ে সিনা ও চেহারা কেবলার দিকে করে রাখা সুন্নত। প্রয়োজনে পিঠের দিকে মাটির চাক কিংবা মাইয়েতকে পূর্বের দেয়ালের সঙ্গে টেক লাগিয়ে রাখবে। যেন মাইয়েত উল্টে না যায় এবং সহজে ডান কাত করে রাখা যায়। কিন্তু চিত করে শুইয়ে শুধু চেহারা কেবলার দিকে ঘুরিয়ে রাখলে সুন্নতসম্মত হবে না। প্রসিদ্ধ তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘মাইয়েতকে কেবলামুখী করে রাখ।’ সুফিয়ান (রহ.) বলেন, ‘ডান কাতে রাখ, যেমনিভাবে লাহদ কবরের ক্ষেত্রে রাখা হয়।’ (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬০৬০, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ২/৭৩, আলমুহিতুল বোরহানি : ৩/৯০, ফাতহুল কাদির : ২/৯৯, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৬২৪, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৯৪, রদ্দুল মুহতার : ২/২৩৬)।

প্রশ্ন : জানাজার নামাজে হাত কখন ছাড়বে? কেউ কেউ চতুর্থ তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দেয়, তারপর সালাম ফেরায়; আর কেউ কেউ উভয় দিকে সালামের পর হাত ছাড়ে; আর কেউ কেউ ডানদিকে সালাম ফেরানোর পর ডান হাত এবং বামদিকে সালাম ফেরানোর পর বাম হাত ছাড়ে। সঠিক পদ্ধতি কোনটি?

উত্তর : জানাজার নামাজে কখন হাত ছাড়বে, এ বিষয়ে ফকিহদের থেকে দুটো মত পাওয়া যায়। যথা- ১. চতুর্থ তাকবিরের পর উভয় হাত ছেড়ে দেবে, এরপর সালাম ফেরাবে; ২. উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর হাত ছাড়বে। দুটি মতই শুদ্ধ। যে কোনোটির ওপর আমল করা যেতে পারে। আর প্রশ্নে তৃতীয় যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ ডানদিকে সালাম ফিরিয়ে ডান হাত ছেড়ে দেওয়া এবং বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে বাম হাত ছাড়া, তা দলিলের নিরীখে সহিহ নয়। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২২৫, আস সিআয়াহ : ২/১৫৯, রদ্দুল মুহতার : ১/৪৮৭, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/৫০৩, কেফায়াতুল মুফতি : ৫/৩৫২)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত