ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তার তুলনা তিনি

হুসাইন বিন আইয়ুব
তার তুলনা তিনি

প্রিয়নবী (সা.)-এর সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহতায়ালা নির্ধারণ করেছেন। তাই ইচ্ছে করে তাঁর মর্যাদা কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। নবীকে নিয়ে অমুসলিমরা যতই কটূক্তি এবং অবমাননা করেছে, আল্লাহ ততই তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।’ (সুরা ইনশিরাহ : ৪)।

মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী

আমাদের প্রিয়নবী (সা.) ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহতায়ালাই তার প্রশংসা করে বলেন, ‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সু কলম : ৪)। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আমি মহৎ চারিত্রিক গুণাবলির পূর্ণতা দানের উদ্দেশে প্রেরিত হয়েছি।’ (সুনানে বাইহাকি : ২০৫৭১)।

বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

আল্লাহতায়ালা প্রিয়নবী (সা.)-কে শুধু মানবমণ্ডলী নয়, সব সৃষ্টির জন্যই রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)। আবু সালেহ বলেন, নবীজি (সা.) ডেকে বলতেন, ‘নিশ্চয় আমি উপহারস্বরূপ প্রদত্ত রহমত বিশেষ।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ১০০)।

সবার শেষ নবী

প্রিয়নবী (সা.)-এর বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক হচ্ছে, তিনি নবী-পরম্পরায় পরিসমাপ্তকারী শেষ নবী। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলের জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)।

সবার শ্রেষ্ঠ নবী

যুগে যুগে যেসব নবী ও রাসুল আগমন করেছেন, তাদের ওপর প্রিয়নবী (সা.)-কে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘ছয়টি দিক থেকে সব নবীর ওপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে জাওয়ামিউল কালিম তথা ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য বলার যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, আমাকে ভীতি (শত্রুর অন্তরে আমার ব্যাপারে ভয়ের সঞ্চার করা) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, গনিমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্য সব ভূমিকে পবিত্র ও সেজদার উপযুক্ত করা হয়েছে, আমি সব মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুয়ত-পরম্পরা শেষ করা হয়েছে।’ (মুসলিম : ১১৯৫)।

তাকে ভালোবাসা ঈমান

যে ব্যক্তির মাঝে রাসুলের ভালোবাসা থাকবে না, সে কোনোদিন মোমিন হতে পারবে না। এমনকি নিজের জীবন থেকেও তার প্রতি বেশি ভালোবাসা থাকতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নবী মোমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর।’ (সুরা আহজাব : ৬)। আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা ও সমগ্র মানুষ থেকে প্রিয়তম হব।’ অর্থাৎ সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালোবাসতে হবে। (বোখারি : ১৪)।

যার সুপারিশ কবুল হবে

কেয়ামতের কঠিন মসিবতের দিনে আল্লাহতায়ালার অনুমতিক্রমে তিনি গোনাহগার উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি হব সব আদম সন্তানের নেতা। এতে কোনো গর্ব-অহংকার নেই। সেদিন আমার হাতে প্রশংসার ঝান্ডা থাকবে। তাতে কোনো গর্ব-অহংকার নেই। আদম থেকে নিয়ে যত নবী-রাসুল আছেন, সবাই আমার ঝান্ডার নিচে থাকবে। আমি হচ্ছি প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। এতে কোনো গর্ব-অহংকার নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪৩০৮)।

সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী

তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হবেন। আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতের দরজায় আমিই সর্বপ্রথম করাঘাত করব। তখন প্রহরী জিজ্ঞেস করবে, ‘কে আপনি?’ আমি বলব, ‘মুহাম্মদ।’ সে বলবে, ‘আপনার জন্যই খোলার ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছি, আপনার আগে কারও জন্য খুলব না।’ (মুসলিম : ৫০৭)।

তার আদর্শই সর্বোত্তম

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাতের আশা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশা করেন, তিনি তাদের সবার জন্য উত্তম আদর্শ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)।

তাঁর অনুসরণ ঈমানদার হওয়ার শর্ত

তিনি যেসব বিষয়ে আদেশ করেছেন, তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, তা ঈমানদার হওয়ার শর্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাসুল তোমাদের জন্য যা দিয়েছেন, তা তোমরা গ্রহণ কর; আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত হও।’ (সুরা হাশর : ৭)। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রবৃত্তি আমার অনুসরণ করে।’ (শরহুস সুন্নাহ : ১০৪)।

নামে যাঁর সালাত ও সালাম

আল্লাহতায়ালা তাঁর মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য সালাত ও সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সুরা আহজাব : ৫৬)। অনুরূপভাবে আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন, দশটি গোনাহ মুছে দেন এবং দশটি মর্যাদায় ভূষিত করেন।’ (সুনানে নাসাঈ : ১২৯৭)।

কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে

আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে মানবতার হেদায়াতের জন্য যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তার মধ্যে আল কোরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব; যা মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে, তাতে ঈমান এনেছে; আর তা তাদের রবের পক্ষ থেকে (প্রেরিত) সত্য,

তিনি তাদের থেকে তাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দেবেন এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেবেন।’ (সুরা মুহাম্মদ : ২)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত