ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রিয় নবীর প্রিয় হাসি

আবদুল্লাহ নোমান
প্রিয় নবীর প্রিয় হাসি

সর্বোত্তম আদর্শের মূর্ত প্রতীক মহানবী (সা.)। যার ছোঁয়া পেয়ে বিমোহিত হয়েছিল পৃথিবী। দিকভ্রান্ত পথিকরা খুঁজে পেয়েছিল শান্তি ও স্বস্তি। তিনি ছিলেন অসহায় মানবতার সুখকর ছায়া, আকাশ থেকে নেমে আসা রহমতের বারিধারা। তার আগমনে ভেঙেছে বর্বরতা ও পাশবিকতার ঘোর, রেঙেছে সভ্যতা ও শান্তির ভোর। প্রিয় নবীজি (সা.) তার ভুবনজয়ী হাসির মাধ্যমে সেসব লাত-উজ্জার পূজারিদের ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যাদের মন মরু দেশের রুক্ষতায় ছিল ভরপুর। অন্তরে ছিল শুধু নানা ছলচাতুরী আর মিথ্যার বেসাতি। যাদের হৃদয়জগত ছিল সূর্যের প্রখর তাপের মতো তেজস্বী, নির্দয়, নিষ্ঠুর। অনাচার আর পাপাচারের অতল সাগরে হাবুডুবু খাওয়াই ছিল যাদের নিত্যদিনের স্বভাব। নিষ্পাপ মহামানবের হাসিমাখা চরিত্র-মাধুর্য এবং নান্দনিক কোমল পেলব আচরণে জাহেলিয়াতের চরম অমানিশায় বুঁদ হয়ে থাকা মানুষগুলো পরিণত হয়েছে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ জাতিরূপে। তার মহানুভবতা ও হৃদ্যতায়, ভালোবাসা ও প্রণোদনায় তারা লাভ করল নতুন জীবন। মিথ্যা অহমিকার চাদরে আবৃত জাতি-গোষ্ঠীর হৃদয়কাননে নবীজি (সা.) বুনেছিলেন রাশি রাশি ভালোবাসার হাসিমাখা বীজ; যা অঙ্কুরোদ্গম হয়ে ঈমানি ফুলে সুশোভিত করেছিল তাদের মন-মনন। দ্বীনের পুষ্পমাল্য গলায় পরে চিরধন্য হলো তাদের জীবন। ইসলামের আলো ঝলমলে বার্তায় অন্ধকার হৃদয় হলো প্রাণোচ্ছল, সবুজ-সজীব, প্রীতিময় ও সুখময়।

হাসির প্রকারভেদ

ইসলামের দৃষ্টিতে হাসি সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে- এক. মুচকি হাসি; যে হাসিতে শুধু ঠোঁট নড়ে; কিন্তু দাঁত দেখা যায় না এবং শব্দও হয় না। দুই. সাধারণ হাসি; যাতে দাঁত দেখা যায় এবং এক পর্যায়ে মৃদু শব্দও হয়। তিন. অট্টহাসি; তথা মুখ খুলে উচ্চ আওয়াজে হাসা। এভাবে হাসা মাকরুহ, নিন্দনীয়। নবীজি (সা.) এভাবে হাসতেন না। এটি অভদ্রতা ও অশালীনতার পরিচায়ক। মুচকি হাসিই ছিল তার চিরাচরিত অভ্যাস। অবশ্য কালেভদ্রে কখনও সাধারণ হাসিও দিতেন। এতে তার দন্তরাজিও প্রকাশ পেত। তার মুচকি হাসি সাধারণ হাসির চেয়ে অধিক ছিল। অন্যদের সাধারণ হাসির পরিমাণ বেশি হয়। জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) অধিকাংশ সময় মৃদু হাসতেন। আমি তার দিকে তাকালে মনে হতো, তিনি উভয় চোখে সুরমা লাগিয়েছেন। অথচ নবীজি (সা.)-এর চোখে সুরমা লাগানো থাকত না। (শামায়েলে তিরমিজি : ২১৭/১)। এ ছাড়া হাসির উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে হাসিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- কষ্টের হাসি, বিদ্রƒপের হাসি, তাচ্ছিল্যের হাসি, ভীতির হাসি, গর্বের হাসি ইত্যাদি। দাম্ভিকতা প্রদর্শন ও অন্যকে তাচ্ছিল্যকরণের জন্য হাসি নাজায়েজ।

হাসির উপকারিতা

হাসি মানব চরিত্রের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য; মানুষের অন্তরের অভ্যন্তরীণ প্রফুল্লতা এবং বাহ্যিক উচ্ছ্বাস প্রকাশের একটি চমৎকার মাধ্যম। হাসি সৌন্দর্যের প্রতীকও বটে। মুচকি হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক ভাষা, সৌজন্যবোধের বহিঃপ্রকাশ; মানুষকে আকৃষ্ট করার সহজ, সুন্দর ও পারিশ্রমিকহীন কাজ। এক চিলতে হাসি কখনও ভুলিয়ে দেয় আমাদের মনের গভীরে পুঞ্জীভূত সব বেদনার জঞ্জাল। যারা হাসতে জানে, তাদের সবাই ভালোবাসে। তারা জনপ্রিয় হয় খুব সহজেই। প্রথম সাক্ষাতেই একটুখানি মৃদু হাসির আবেশ মনের উঠোনে বপন করে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের বীজ। প্রণয়মাখা হাসির ছোঁয়ায় চরম শত্রুও বন্ধুত্বে রূপ নেয়। মজার ব্যাপার হলো, মুচকি হাসি ইতিবাচক সংক্রামক। অন্যের মাঝেও এটি দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সুখানুভূতি ও প্রণোদনা জাগায়। হাসিতে থাকে প্রণয়ের বার্তা। নিজের মুখের হাসি অপরের জন্যও বয়ে আনে আনন্দ। হাসি ভুলিয়ে দিতে পারে হৃদয়ে পুঞ্জীভূত রাশি রাশি ব্যথা এবং দুঃখণ্ডবিষাদের কথা। হাস্যোজ্জ্বল মানুষকে সবাই ভালো জানে, সমীহ করে, আপন ও কাছের মনে করে। একটুখানি মুচকি হাসি দু’জনের সম্পর্কে যোগ করে নতুন মাত্রা। মুচকি হাসির মাধ্যমে অন্যের হৃদয়ে যেমন সহজে জায়গা করে নেওয়া যায়, তেমনি এতে পরিচ্ছন্ন হৃদয়ের স্বচ্ছতাও প্রকাশ প্রায়।

চিকিৎসাবিজ্ঞান ও হাসি

চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে হাসি মানসিক চাপ দূর করে, ব্যথা-জ্বালা কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফুসফুসকে সুস্থ রাখে, রক্ত চলাচল ভালো থাকে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, হতাশা দূর করে। চিন্তা-ভাবনা সতেজ ও শানিত করে, সম্পর্কের বিকাশ ও উন্নতি করে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ইতিবাচক ভাবতে শেখায়। তাই হাজারো দুঃখের মাঝেও মুচকি হাসির পাথেয় সঙ্গে রাখা চাই। সুখে-দুঃখে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলতে পারা মহান ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। বলার অপেক্ষা রাখে না, সবকিছুতে ভারসাম্যতা রক্ষা করা চাই। তাই হাসির ক্ষেত্রেও একদম গোমড়া মুখ যেমন কাম্য নয়, তেমনি অতিরিক্ত হাসিও সমীচীন নয়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত হেসো না। কেননা, অতিরিক্ত হাসি আত্মাকে মৃত বানিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি : ২৩০৫)।

মুচকি হাসিতে সদকার সওয়াব

পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গে সদা হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা ইসলামের নির্দেশনা। এতে ফুটে ওঠে ঈমানি ভ্রাতৃত্বের নান্দনিক সৌন্দর্য। এ ছাড়া এটি প্রিয় নবীজি (সা.)-এর বিমল আদর্শ। অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, এটিকে তিনি সদকা হিসেবেও ঘোষণা করেছেন। যার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন। আবু যর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।

পথ হতে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি : ১৯৫৬)।

মুচকি হাসিতে মেলে রবের সন্তুষ্টি

অনেকে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলাকে সাধারণ বিষয় মনে করে। অথচ নবীজি (সা.) এটার প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করেছেন। উম্মতকে এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবু যর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবীজি (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি কোনো ভালো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না; এমনকি হোক সেটা অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ (অর্থাৎ মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও একটি ভালো কাজ)। (মুসলিম : ৬৫৮৪)। কারও সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলে সে খুশি হয়। তার প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহও বিষয়টি বেশ পছন্দ করেন। ফলে বিনিময়ে তিনি বান্দাকে কেয়ামতের দিন আনন্দিত ও খুশি করবেন। চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিকারী বানাবেন। বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের কোনো মুসলমান ভাইকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে, যেমনটি সে নিজের জন্য পছন্দ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তাকে খুশি করবেন।’ (তাবারানি : ১১৭৮, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১৩৭২১)।

নবীজি (সা.)-এর মুক্তোঝরা হাসি

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর মুক্তোঝরা ভুবন ভুলানো হাসি সবাইকে যারপর নাই উদ্বেলিত করত। আপন-পর, বন্ধু-শত্রু সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন তিনি। মুচকি হাসির সুবাসে তিনি ছোট-বড় সবাইকে আকৃষ্ট করতেন। এর মোহনীয় সৌরভে মানুষের হৃদয় কেড়ে নিতেন। ফলে তার কাছে যে-ই আসত, সে-ই তার ভক্ত-অনুরাগী হয়ে যেত। আর ফিরে যেত ঈমান-আমল, জ্ঞান-গরিমা এবং সুকুমার বৃত্তির অমূল্য সম্পদ নিয়ে। আবদুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে জাযয়ি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর থেকে অধিক মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি : ৩৬৪১)। মিষ্টি হাসির আভায় তিনি জয় করতেন মানুষের মন। পাথুরে হৃদয়ে ফোটাতেন কোমলতার ফুল। ভাঙতেন যুগ যুগ ধরে চলে আসা রকমারি ভুল। বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত, হাসিমাখা আচরণ ও বক্তব্য মানুষের হৃদয়ে দারুণ রেখাপাত করে, যা গোমরা মুখের অনর্গল বক্তব্যে কল্পনাও করা যায় না। তাই দাওয়াতি মিশনেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এতে সহজেই শ্রোতার হৃদয় বিগলিত হয়। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে সে বক্তার অমূল্য কথামালা। জারির ইবনে আবদিল্লাহ (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনও আমাকে তার মজলিসে প্রবেশ করতে বাধা দেননি। আর যখনই আমাকে দেখতেন, তখনই হাসতেন।’ (শামায়েলে তিরমিজি : ২৩১)।

নবীজি (সা.) ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল

জীবন চলার পথে এমন অনেক মানুষ পরিলক্ষিত হয়, সারাক্ষণ গোমরা মুখে থাকাই যেন তাদের স্বভাব। ভ্রƒ কুঁচকে চলাফেরা করাই যেন তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। মেকি বেশভূষার খোলসে জনমনে শুধু ভীতি ছড়ানোকেই তারা দ্বীন মনে করে। তাদের ভাবা উচিত, যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাবগম্ভীর ও সমীহপূর্ণ মানুষটির জ্যোতির্ময় চেহারাজুড়ে মৃদু হাসি লেগেই থাকত, সে নবীর অনুসারী দাবি করে কৃত্রিম ভাবগাম্ভীর্যের চেষ্টায় কপাল কুঞ্চিত করে চলাফেরা করার কী এমন মূল্য আছে? নবীজি (সা.) সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকতেই স্বচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। গোলাপময় হাসির সৌরভে চারপাশ আমোদিত রাখতেই ভালোবাসতেন। হুসাইন ইবনে আলী (রা.) বলেন, আমি আমার পিতা আলী (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর সহচরদের সঙ্গে তার আচরণ কীরূপ ছিল, তা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল ও নম্র স্বভাবের, স্নেহপরায়ণ, সহানুভূতিশীল ও দয়ালু।’ (শামায়েলে তিরমিজি : ৩৫২)।

সাহাবিদের সঙ্গে মিষ্টি হাসি

বিশ্বনবী (সা.) এতটাই সহজ স্বাভাবিক, নরম প্রকৃতির এবং মিশুক ছিলেন যে, সাহাবিরা যখন তাদের জাহেলি যুগের গল্পস্বল্প করতেন, রসিকতা করে হাসতেন, নবীজি (সা.) এতে অসন্তুষ্ট হতেন না; বরং মিষ্টিমধুর হাসিতে নিজেই অংশ নিতেন তাদের সঙ্গে। অথচ তিনি চাইলে নিজের স্বতন্ত্র মর্যাদা বহিঃপ্রকাশার্থে এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি তার স্বভাবজাত মহানুভবতা ও সহমর্মিতায় অনাড়াম্বরপূর্ণ সাদামাটা জীবনযাপনের বার্তা দিয়েছেন। ক্ষণে ক্ষণে অকৃত্রিম আচরণের সৌরভে মেকিত্বের আবরণমুক্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন। জাবের ইবনে সামুরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে শতাধিক বৈঠকে ছিলাম। সেসব বৈঠকে তার সাহাবিরা কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং জাহেলি যুগের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন। তিনি সেগুলো চুপ করে শুনতেন এবং কখনও কখনও মুচকি হাসতেন।’ (তিরমিজি : ২৮৫০)।

পরিস্থিতির জটিলতায় মৃদু হাসি

জীবনের বাঁকে বাঁকে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত দুঃখণ্ডবেদনা ও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। তখন অনেকে গোমরা মুখের কালো ছায়ায় পরিস্থিতিকে আরও জটিল, থমথমে ও অসহনীয় করে তোলে। অথচ একটুখানি মৃদু হাসি সেই কঠিন পরিস্থিতিকে করে তুলতে পারে অনেকটা সহজ স্বাভাবিক। ক্লান্ত ও মনঃকষ্টে ভারাক্রান্ত দিনগুলোকে করে তুলতে পারে প্রাণবন্ত ও উপজীব্য। মহানবী (সা.) জটিল কঠিন পরিস্থিতি ও চরম উৎকণ্ঠার সময়ও স্বাভাবিক থাকতে পারতেন। অবস্থার ভয়াবহতাকে দাফন করতে জানতেন হাসি-ঝলমলে চেহারার মধুময় চাহনিতে। বৃষ্টির সুবাস আর মেঘের সৌন্দর্যে মাখামাখি এক চমৎকার ঘটনা বর্ণনা করেছেন আনাস (রা.)। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর যুগে একবার মদিনাবাসী অনাবৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষে নিপতিত হলো। নবীজি (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছেন। এমন সময় এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! পানির অভাবে আমাদের ছাগল-ভেড়া, গাধা-ঘোড়া সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টির পানিতে সিঞ্চিত করেন।’ তখন নবীজি (সা.) হাত প্রসারিত করে দোয়া করেন। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, তখন আকাশ ছিল কাঁচের মতো স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। হঠাৎ বাতাস দ্রুত বইতে থাকে, মেঘমালা ভেসে এসে জমা হয়। এরপর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। আমরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি এলাম। এ বৃষ্টি পরবর্তী জুমা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তখন ওই ব্যক্তি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.)-কে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! বৃষ্টিতে বাড়িঘর সবকিছু ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন তিনি বৃষ্টি থামিয়ে দেন।’ তখন নবীজি (সা.) মুচকি হাসলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! বৃষ্টিকে আমাদের কল্যাণের পক্ষে করে দিন, বিপক্ষে নয়।’ আনাস (রা.) বলেন, আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মদিনার আশপাশে মেঘমালা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে, যেন তা একটি বেষ্টনী। (বোখারি : ৩৫৮২)।

লেখক : সিনিয়র মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত