মহানবীর মুচকি হাসি

আবদুল্লাহ নোমান

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সৃষ্টির সেরা মানব, দয়া ও করুণার মূর্ত প্রতীক মহানবী (সা.)। তার মধুমাখা আচরণ, হাসিমাখা উচ্চারণে শুকনো হৃদয়ের পুষ্প-কাননেও পাপড়ি মেলে তাকাত আনন্দ-খুশির ঘুমন্ত কুসুম-কলিরা। নবীজি (সা.)-এর অনুপম হাসির ছত্রে-ছত্রে যেন ছলছল প্রবাহে বয়ে যেত মানবতার দরদ ও কল্যাণকামিতার স্বচ্ছ ঝরনাধারা। সেখানে চিত্ততৃপ্তির অমৃত স্বাদ নিয়ে সাঁতার কাটত নবীপ্রেমে উদ্দীপ্ত আলোকিত সাহাবিদের কাফেলা। তারা রাসুলপ্রেমের স্রোতস্বিনীতে ভাসতে থাকত আর্থিক প্রশান্তির ভেলায় চড়ে। প্রিয়তম রাসুল (সা.)-এর একচিলতে হাসিতে দূর হতো তাদের যন্ত্রণা। মুছে যেত গ্লানি ও বঞ্চনা। কাঁটা হয়ে যেত ফুল। জীবন হেসে উঠত উচ্ছলতায়। নবীজি (সা.) হাসিকে তার বর্ণাঢ্য জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়েছিলেন। পরিণত করেছিলেন জীবন সাফল্যের এক অনন্য সোপানরূপে। মিষ্টি হাসির জ্যোতির্ময় উদ্ভাসে তিনি পরাজিত করেছিলেন মরুভূমির রুক্ষ ভাষাকে। আলংকারিক শিল্প-সুষমায় ঢেকে ফেলেছিলেন মেঘাচ্ছন্ন গোমরা মুখগুলোকেও। ঝাড়েবংশে নিশ্চিহ্ন করেছিলেন জাহেলিয়াতের মিথ্যা অহমিকা ও ঘৃণ্য দাম্ভিকতা। নতুন করে লিখতে শুরু করলেন মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা ও মানবিকতার বার্তা।

মুচকি হাসির নেপথ্যে

যুগে যুগে কালে কালে পৃথিবীতে এমনও অনেক মানুষের আবির্ভাব হয়, যারা স্বচ্ছন্দ্য ও দীপ্তিময় নয়; নয় হাসিখুশি ও প্রফুল্ল প্রকৃতির। সপ্রতিভ আচরণ ও মধুঝরা উচ্চারণেও যারা অভ্যস্ত নয়। ফলে জীবনের বাঁকে বাঁকে তারা যেমন বঞ্চিত হয় জাদুময়ী হাসির স্বাভাবিক সৌন্দর্য থেকে, তেমনি মাহরুম হয় মুচকি হাসির অবারিত কল্যাণ থেকে। তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না যে, মানুষের মন জয় করার জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই মুখরোচক বাহারি খাবারের আয়োজনের ও কৃত্রিম তোষামোদের। বরং মৃদু হাসির জাদুতে মানুষের মন জয় করা যায় খুব সহজেই। কেননা, অন্যের কল্যাণকামিতা ও শুভকামনার আক্ষরিক ব্যাখ্যাই হচ্ছে মুচকি হাসি। হৃদয়ের জমিন যদি কোমল ও পেলব হয়, তবে মুখাবয়বেও প্রস্ফুটিত হয় মুচকি হাসির পুষ্প। তাই নবীজি (সা.) সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মৃদু হাসির অন্তর্নিহিত ফলাফল চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নববি ভাষ্য ব্যঞ্জনায়। বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ধনসম্পদ দিয়ে মানুষকে বেষ্টন করতে পারবে না; কিন্তু তোমাদের চেহারার প্রশস্ততা আর সুন্দর চরিত্র তাদের বেষ্টন করতে পারে।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ২৬১৬)।

নবীজি (সা.) সবার সঙ্গে হাসিমুখে থাকতেন

আমরা জীবন চলার পথে অনেক মানুষকে দেখতে পাই, যারা উচ্চ কোনো পদ পেলে, ক্ষমতার চেয়ার লাভ করলে ধরাকে সরাজ্ঞান করে। পা যেন মাটিতেই পড়তে চায় না তাদের। প্রয়োজনে মানুষ তাদের কাছে এলে প্রাইম মিনিস্টারের ভাব ধরে থাকে। নিজেকে কল্পনা করে সুপারস্টারের আসনে। ক্ষমতাণ্ডবলয়ের বাইরের মানুষদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। বিপদগ্রস্ত মানুষকে অবজ্ঞা-অবহেলা করতে তারা মোটেও ভুল করে না। তারা কেন যেন নিম্নশ্রেণির মানুষদের পাত্তা দিতে চায় না। পারলে ক্ষেপে গিয়ে বিরক্তিমাখা গলায় দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। এ টেবিল ও টেবিল দৌড়াতে দৌড়াতে যার পর না-ই হয়রানি করে। চেহারায় ফুটে ওঠে তাদের দাম্ভিকতার ছাপ। মুখ থাকে অশালীন ভাষায় টইটম্বুর। কিন্তু মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী (সা.) ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তিনি সবার সঙ্গে কথা বলতেন হাসিমুখে। আলাপচারিতা করতেন হাস্যোজ্জল চেহারায়। এগিয়ে আসতেন বিপদগ্রস্তদের সহযোগিতায়। আবদুল্লাহ ইবনে কাব (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতা কাব ইবনে মালেক (রা.)-কে তার তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে সালাম করলাম, খুশি ও আনন্দে তার চেহারা ঝলমল করে উঠল। তার চেহারা এমনিই আনন্দে টগবগ করত। মনে হতো যেন চাঁদের একটি টুকরো। তার মুখমণ্ডলের এ অবস্থা হতে আমরা তা বুঝতে পারতাম। (বোখারি : ৩৫৫৬)।

জান্নাতি ব্যক্তির আলোচনায় নবীজির হাসি

মহানবী (সা.) বলেন, আমি ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত আছি, যে সবশেষে জাহান্নাম থেকে বের হবে। এ ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে। কেননা, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করার দরুন সোজা হয়ে চলতে পারবে না। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার আদেশ দেওয়া হবে। জান্নাতে গিয়ে সে দেখবে, সবাই স্ব-স্ব স্থান দখল করে বসে আছে। সেখান থেকে ফিরে এসে জায়গা না থাকার কথা আল্লাহকে জানাবে। আল্লাহ বলবেন, ‘দুনিয়ার ঘরবাড়ির কথা স্মরণ আছে কি?’ সে বলবে, ‘জি’। বলা হবে, ‘তোমার মনে যা চায়, তুমি তার আকাঙ্ক্ষা কর।’ সে যা ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষা করবে। অতঃপর ঘোষণা করা হবে, ‘তুমি যা কিছুর আকাঙ্ক্ষা করেছ, সেগুলো এবং তার সঙ্গে দুনিয়ার দশ গুণ বড় জান্নাত তোমাকে দেওয়া হলো।’ সে বলবে, ‘হে আল্লাহ! আপনি রাজাধিরাজ হয়ে আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন? সেখানে তো বিন্দুমাত্র জায়গাও নেই; অথচ আপনি দুনিয়ার দশ গুণ বড় জান্নাত আমাকে দান করছেন?’ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন ওই ব্যক্তির উক্তি উচ্চারণ করছিলেন, তখন দেখতে পেলাম, তিনি হাসছেন এবং তার দাঁত মোবারক প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। (মুসনাদে আহমদ : ২১৪৩০)।

সুরা কাউসার অবতীর্ণ হওয়ার পর মুচকি হাসি

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তার ওপর অচৈতন্য ভাব চেপে বসল। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে মাথা তুললেন। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘এইমাত্র আমার ওপর একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে।’ তিনি পাঠ করলেন, বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি। অতএব, আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কোরবানি করুন। আপনার কুৎসা রটনাকারীরাই মূলত শিকড়কাটা, নির্মূল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমরা কি জানো- কাউসার কী?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই অধিক ভালো জানেন।’ তিনি বললেন, ‘এটা একটা ঝরনা। আমার প্রতিপালক আমাকে তা দেওয়ার জন্য ওয়াদা করেছেন। এর মধ্যে অশেষ কল্যাণ রয়েছে। আমার উম্মতের লোকেরা কেয়ামতের দিন এ হাউসের পানি পান করতে আসবে। এ হাউসে রয়েছে তারকার মতো অসংখ্য পানপাত্র। এক ব্যক্তিকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি তখন বলব, রব! সে আমার উম্মতেরই লোক। তখন আমাকে বলা হবে- আপনি জানেন না, আপনার মৃত্যুর পর এরা কী অভিনব বেদাত কাজ করেছে।’ (মুসলিম : ৭৮০)।

বিজয়ের সুসংবাদ পেয়ে মৃদু হাসি

আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত; নবীজি (সা.) কোবার দিকে যখন যেতেন, তখন প্রায়ই উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং তিনি তাকে খানা খাওয়াতেন। তিনি উবাদা ইবনে সামেত (রা.)-এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন তার ঘরে গেলে তাকে খাবার খাওয়ালেন। এরপর রাসুল (সা.) সেখানেই ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সজাগ হয়ে হাসতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে কীসে হাসাচ্ছে?’ তিনি বললেন, ‘স্বপ্নে আমাকে আমার উম্মতের আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছুসংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এ বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মধ্যে বাদশাহদের মতো সিংহাসনে আসীন।’ তখন তিনি বললেন, ‘আপনি দোয়া করুন, আল্লাহতায়ালা যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।’ তিনি সে দোয়া করলেন এবং বিছানায় মাথা রেখে আবার শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে কীসে হাসাচ্ছে?’ তিনি বললেন, ‘(স্বপ্নে) আমাকে আমার উম্মতের আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছুসংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এ বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মধ্যে বাদশাহদের মতো সিংহাসনে আসীন।’ তখন আবার আমি বললাম, ‘আপনি দোয়া করুন, আল্লাহতায়ালা যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।’ তিনি বললেন, ‘তুমি প্রথম বাহিনীর মধ্যেই শামিল থাকবে।’ সুতরাং তিনি মুআবিয়া (রা.)-এর আমলের সামুদ্রিক অভিযানে যান এবং অভিযান থেকে ফিরে এসে নিজের সওয়ারি (বাহন) থেকে পড়ে গিয়ে শাহাদত বরণ করেন।’ (বোখারি : ৬২৮২)।

এক ইহুদির কথায় নবীজির হাসি

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; নবীজি (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সারাজগৎ একটি রুটি হয়ে যাবে। আর আল্লাহ জান্নাতিদের মেহমানদারির জন্য তাকে (বিশ্বজগতকে) হাতের মধ্যে নিয়ে এমনভাবে উল্টোপাল্টা করবেন, যেমন তোমাদের কেউ সফরের সময় তাড়াহুড়ো করে এ হাতে সে হাতে নিয়ে রুটি প্রস্তুত করে। এমন সময় এক ইহুদি এসে বলল, ‘হে আবুল কাসেম! দয়াময় আপনার ওপর বরকত দান করুন। কেয়ামতের দিন জান্নাতবাসীদের মেহমানদারি সম্পর্কে আপনাকে কি জানাব না?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। লোকটি বলল, ‘(সেদিন) দুনিয়াটা একটি রুটি হয়ে যাবে।’ যেমন নবীজি (সা.) বলেছিলেন (লোকটিও তেমনি বলল)। তখন নবীজি (সা.) আমাদের দিকে তাকালেন এবং হাসলেন। এমনকি তার চোয়ালের দাঁতগুলো প্রকাশিত হলো। এর পর তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে (তাদের) তরকারি সম্পর্কে বলব না?’ তিনি বললেন, ‘বালাম এবং নুন।’ সাহাবিরা বললেন, ‘সেটা কী জিনিস?’ তিনি বললেন, ‘ষাঁড় এবং মাছ। যাদের কলিজার গুরদা হতে ৭০ হাজার লোক খেতে পারবে।’ (বোখারি : ৬৫২০)।

সাহাবির সরলতা দেখে মুচকি হাসি

আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) বলেন, আমি খায়বার যুদ্ধের সময় চর্বিভর্তি একটি চামড়ার থলে পেলাম। তা তুলে নিলাম এবং বললাম, ‘এর থেকে আমি কাউকে কিছু দেব না।’ তিনি বললেন, ‘আমি হঠাৎ পেছন ফিরে রাসুল (সা.)-কে দেখতে পেলাম, (আমার কথা শুনে) তিনি মৃদু হাসছেন।’ (মুসলিম : ৪৪৯৬)।

খাদেমের সঙ্গে মৃদু হাসি

নবীজি (সা.) শিশু-কিশোর ও খাদেমের সঙ্গেও হাসিমুখে কথা বলতেন। তাদের ভুল আচরণেও রাগ করতেন না; বরং মিষ্টি হাসির ঝলক শোভা পেত তার চেহারায়। আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন অতি উত্তম আখলাকের অধিকারী। একদিন তিনি আমাকে কোনো প্রয়োজনে এক জায়গায় পাঠাতে চাইলেন। বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি যাব না; কিন্তু মনে মনে যাওয়ার নিয়ত ছিল। সেখানে যাওয়ার জন্য আমি রওনা হলাম। বাজারে শিশুরা খেলাধুলা করছিল। (আমি খেলা দেখতে লেগে গেলাম)। হঠাৎ রাসুল (সা.) পেছন থেকে আমার ঘাড় ধরলেন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। দেখি, তিনি হাসছেন।’ বললেন, ‘প্রিয় আনাস! তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে?’ বললাম, ‘জি ইয়া রাসুলাল্লাহ! এক্ষুণি যাচ্ছি।’ (মুসলিম : ২৩১০)।

স্ত্রীর সঙ্গে হাসিখুশি

আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তাবুক অথবা খায়বারের যুদ্ধ থেকে ফিরলেন। ঘরের তাকের ওপর পর্দা ঝুলানো ছিল। বাতাসের কারণে তার একপাশ সরে যায়। এতে আমার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি পুতুলগুলো দেখে বললেন, ‘হে আয়েশা! এগুলো কী?’ জবাবে বললাম, ‘এগুলো আমার মেয়ে।’ তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরি দুই ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন। এরপর প্রশ্ন করলেন, ‘এগুলোর মধ্যে ওটা কী দেখতে পাচ্ছি?’ বললাম, ‘ঘোড়া’। রাসুল (সা.) বললেন, ‘তার ওপর আবার ওটা কী?’ বললাম, ‘দুটি পাখা’। তিনি বললেন, ‘এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে!’ আমি বললাম, ‘আপনি কি শোনেননি যে, সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিল।’ এ কথা শুনে রাসুল (সা.) হেসে দিলেন, যাতে আমি তার সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম। (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৩২)।

ইন্তেকালের দিন নবীজির হাসি

নবীজি (সা.) সারাটা জীবন ক্ষমা ও সহনশীলতায়, কোমলতা ও উদারতায় মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করত তাঁর ভুবনজয়ী হাসি। এমনকি মৃত্যুর আগেও সে হাসি ছিল অমলিন। তার দীপ্তিময় চেহারার প্রসন্নতা ও উজ্জ্বলতাই ছিল সেই প্রভাত সমীরণ; যার শীতল পরশ তিনি সযত্নে বুলিয়ে দিতেন সাহাবিদের অনুভবের কুঠিরে। যেদিন তিনি পৃথিবীর বুক থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন, সেদিনও তার সঙ্গী ছিল মৃদু হাসি। অথচ ব্যথা ও কষ্টে তার বরকতময় দেহ ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে পড়েছিল, জ্বরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল শরীর। আর চিরন্তন মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছিল তাকে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত; মুসলমানরা সোমবার (রাসুল সা.-এর ওফাতের দিন) ফজরের নামাজে ছিলেন, আবু বকর (রা.) তাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। নবীজি (সা.) আয়েশা (রা.)-এর হুজরার পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে তাকালেন। তখন তারা সারিবদ্ধ ছিলেন। তা দেখে তিনি মৃদু হাসলেন। (বোখারি : ১২০৫)। হাদিসের শেষাংশে আছে, ওই দিনই নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়।

লেখক : সিনিয়র মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম