ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দরুদ পাঠের বিশেষ মুহূর্ত

উবাইদুল্লাহ তারানগরী
দরুদ পাঠের বিশেষ মুহূর্ত

ফজিলতপূর্ণ শাবান মাস শেষের দিকে। মহিমান্বিত রমজান সমাগত। প্রকৃত মোমিনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ প্রান্তেই। রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস। সিয়াম সাধনার মাস। স্বতঃস্ফূর্ত ইবাদত-বন্দেগির মৌসুম। নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সুবর্ণ সুযোগ থাকে এ মাসে। তেলাওয়াত, তারাবি, তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, চাশত, ইশরাকসহ চলে নানা নাওয়াফেল। নীরবে নিভৃতে চলে তওবা- ইস্তিগফার, রোনাজারি, তাসবিহ-তাহলিল। পাশাপাশি জবানে সর্বদা চালু রাখা চাই প্রিয় নবীজি (সা.)-এর ওপর সালাত-সালাম। সংক্ষিপ্ত করে হলেও ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’।

জান্নাতে চাই নবীজির সান্নিধ্য

কে না চায় জান্নাতে প্রিয় নবী (সা.)-এর সঙ্গ, একটু সান্নিধ্য, কাছাকাছি একটু অবস্থান, সোহবতের স্নিগ্ধ পরশ। কেয়ামতের মতো ভয়াবহ ও কঠিনতম দিনে প্রিয় নবী (সা.)-এর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ও নৈকট্য লাভ বড় নেয়ামত। নিঃসন্দেহে এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কিছুই হতে পারে না। মানবতার নবী, আখেরি নবী উম্মতের জন্য সেই ব্যবস্থাও করে গেছেন। প্রয়োজন শুধু আমাদের একটু প্রতিযোগিতা। গাফলতের চাদর সরিয়ে একটু আড়মোরা ভাঙা চাই। একনিষ্ঠভাবে অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা চাই। দরুদে দরুদে জবানকে সিক্ত রাখা দরকার। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন (মানুষের মধ্যে) আমার অধিক নৈকট্য লাভ করবে ওই ব্যক্তি, যে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়বে।’ (তিরমিজি : ৪৮৪, সুনানে বাইহাকি : ১৫৬৩)।

নবীজির সুপারিশ লাভ

যে ব্যক্তি অধিক নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে, সে কি তার সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবে? না, কখনোই নয়। রুওয়াইফ বিন সাবেত আনসারি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (ইখলাসের সঙ্গে অধিক পরিমাণে) আমার ওপর দরুদ পড়বে এবং সেই সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়বে- আল্লাহুম্মা আনযিলহুল মাকআদাল মুকাররাবা ইনদাকা ইয়াওমাল কিয়ামাহ (অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সা.-কে আপনার নিকটবর্তী মাকামে অধিষ্ঠিত করুন কেয়ামতের দিন), তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৬৯৯১)।

দরুদ পাঠের বিশেষ মুহূর্ত

দরুদ পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এমন একটি আমল ও কর্ম, যা স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারাও সম্পাদন করে থাকেন। আর কোনো আমলের ক্ষেত্রে এমনটি বলা হয়নি। অবশ্য প্রত্যেকের স্বরূপ ভিন্ন ভিন্ন। বরকতময় সহজ এ আমলটির জন্য কোনো শর্ত নেই। স্থান, কাল, পাত্র, নির্দিষ্ট সময় ও জায়গা, পবিত্রতা কিছুই শর্ত নয়। ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে, চলাফেরায়, দিনরাত, সকাল-বিকেল, প্রভাত-সন্ধ্যা, সবসময়, সবখানে আমলটি করা যায়। প্রভূত কল্যাণের অধিকারী হওয়া যায়। তবু বিভিন্ন হাদিসে বিশেষ কিছু মুহূর্তের কথা এসেছে। ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

১. অজুর পর দরুদ পাঠ : অজু মোমিনের অস্ত্র। সর্বদা অজু অবস্থায় থাকলে শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। অজুর অঙ্গগুলো কেয়ামতের দিন চমকাবে। আর নবীজি (সা.) তা দেখেই চিনতে পারবেন তার উম্মতকে। সেই আলোকিত, শুভ্রতা ধারণকারী অজুর পর দরুদ পাঠের কথাও কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে। অর্থাৎ প্রথমে প্রসিদ্ধ দোয়াটি পড়বে, তারপর দরুদ পড়বে। (আল কাউলুল বাদি : ৩৪২)।

২. পেরেশানির সময় দরুদ পাঠ : দুনিয়ায় একেবারে টেনশনমুক্ত কোনো মানুষ নেই। চিন্তা-পেরেশানি কমবেশি সবারই আছে। সেই চিন্তা-পেরেশানির সময় কেউ মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করলে আশা করা যায়, এর বরকতে আল্লাহতায়ালা তার সব পেরেশানি দূর করে দেবেন। (তিরমিজি : ২৪৫৭)।

৩. ভুলে গেলে দরুদ পাঠ : কোনো কিছু ভুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে দরুদ পড়তে থাকবে। এর বরকতে (ভুলে যাওয়া বস্তু) স্মরণ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। (জিলাউল আফহাম : ৫০৬)।

৪. গোনাহ হয়ে গেলে দরুদ পাঠ : কোনো সময় গোনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা-ইস্তিগফার করবে। সঙ্গে দরুদও পড়বে। কারণ, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, দরুদের ওসিলায় গোনাহ ক্ষমা করা হয়। (সুনানে নাসায়ি : ১২৯৭)।

৫. জুমার দিন দরুদ পাঠ : একাধিক হাদিসে জুমার দিনে দরুদ পাঠের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, জুমার দিন বাদ আসর মুসল্লি নিজ স্থান ত্যাগ করার আগে ৮০ বার আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা পড়লে ৮০ বছরের সগিরা গোনাহ মাফ হয়, ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব আমলনামায় লেখা হয়। আরেক হাদিসে এসেছে, জুমাবার হচ্ছে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন; সুতরাং এ দিনে অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ কর। (মুসনাদে আহমদ : ১৬১৬২)।

৬. দোয়ার শুরুতে দরুদ পাঠ : দোয়াই ইবাদত। ইবাদতের সারাংশ, মূল। সবাই দোয়ার মুখাপেক্ষী। বান্দার কাছে চাইলে অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহর কাছে না চাইলে রাগান্বিত হন, অসন্তুষ্ট হন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পর দরুদ পড়ে দোয়া করলে কবুলের অধিক আশা করা যায়। এমনটিই বলেছেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। (মুসান্নাফে ইবনে আবদির রাজ্জাক : ১৯৬৪২)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন দোয়া করবে, হামদ-সানা (আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন)-এর পর আমার ওপর দরুদ পড়বে; এর পর ইচ্ছা অনুযায়ী দোয়া করবে।’ (তিরমিজি : ৩৪৭৮)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত