মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা), টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রশ্ন : রোজা কবে থেকে রাখতে হবে?
উত্তর : শাবানের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে পরদিন থেকে রোজা রাখতে হবে; নইলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করার পর রোজা রাখা শুরু করবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘(রমজানের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা রাখা বন্ধ করবে না।’ (মুসলিম : ১/৩৪৭)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘(শাবানের ২৯ দিন পূর্ণ করার পর) তোমরা যদি রমজানের চাঁদ না দেখ, তাহলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করবে।’ (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৭৩০১, আল বাহরুর রায়েক : ২/২৬৩, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৭)।
প্রশ্ন : আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রোজা শুরুর জন্য করণীয় কী?
উত্তর : আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রোজা শুরুর জন্য এমন একজন ব্যক্তির চাঁদ দেখা যথেষ্ট হবে, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত কিংবা অন্তত বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একজন মরুবাসী ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে (রমজানের) চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ’। রাসুল (সা.) তখন সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪২৪, সুনানে আবি দাউদ : ২৩৩৩, সুনানে নাসায়ি : ২৪২২, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৯৫৫৭, আল বাহরুর রায়েক : ২/২৬৩, রদ্দুল মুহতার : ২/৩৮৫)।
প্রশ্ন : আকাশ পরিষ্কার থাকলে রোজা রাখার জন্য শর্ত কী?
উত্তর : আকাশ পরিষ্কার থাকলে একজনের খবর যথেষ্ট নয়; বরং এত লোকের খবর প্রয়োজন, যার দ্বারা প্রবল বিশ্বাস জন্মে যে, চাঁদ দেখা গেছে। কেননা, যে বিষয়ে অনেকের আগ্রহ ও সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাতে দু-একজনের খবরের ওপর নির্ভর করা যায় না। (আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/৩৩৮, রদ্দুল মুহতার : ৩/৩৮৮)।
প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি একাকী চাঁদ দেখেছে; কিন্তু তার সাক্ষ্য গৃহীত হয়নি; এ ক্ষেত্রে তার জন্য করণীয় কী?
উত্তর : তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে রোজা রাখা উত্তম, তবে জরুরি নয়। এক ব্যক্তি ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আমি রমজানের চাঁদ দেখেছি।’ ওমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার সঙ্গে অন্য কেউ কি দেখেছে?’ লোকটি বলল, ‘না, আমি একাই দেখেছি।’ ওমর (রা.) বললেন, ‘তুমি এখন কী করবে?’ লোকটি বলল, ‘(আমি একা রোজা রাখব না), সবাই যখন রোজা রাখবে, আমিও তখন রোজা রাখব।’ ওমর (রা.) তাকে বাহবা দিয়ে বললেন, ‘তুমি তো বড় ফিকহ ও প্রজ্ঞার অধিকারী।’ (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৪/১৬৮, আল মুহাল্লা : ৪/৩৭৮)। ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, এমন ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা জরুরি না হলেও উত্তম হলো রোজা রাখা। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২১)।
প্রশ্ন : রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা লাগবে?
উত্তর : রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন- মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি : ১/২, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৬)।
প্রশ্ন : রোজার নিয়ত কখন করতে হবে?
উত্তর : ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। হাফসা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (সুনানে আবি দাউদ : ১/৩৩৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২৫৯-২৬০, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।
প্রশ্ন : রাতে ফরজ রোজার নিয়ত করতে না পারলে কী করতে হবে?
উত্তর : রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন, (আশুরার রোজা যখন ফরজ ছিল, তখন) রাসুল (সা.) আসলাম গোত্রের একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করতে বললেন, ‘যে সকাল থেকে কিছু খায়নি, সে বাকি দিন রোজা রাখবে। আর যে খেয়েছে, সেও বাকি দিন রোজা রাখবে। কারণ, আজ আশুরা দিবস।’ (বোখারি : ২০০৭)। আবদুল করিম জাযারি (রহ.) বলেন, কিছু লোক সকালে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। তখন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি (এরই মধ্যে কিছু) খেয়েছে, সে বাকি দিন খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে খায়নি, সে বাকি দিন রোজা রাখবে।’ (মুহাল্লা : ৪/২৯৩, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৬)।
প্রশ্ন : পুরো রমজানের জন্য একবারে নিয়ত করলে হবে?
উত্তর : পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ, প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি : ১/২, আল মুহাল্লা : ৪/২৮৫, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ৩/৬০, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৫)।
প্রশ্ন : রাতে রোজার নিয়ত করলে সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মিলনের অবকাশ থাকবে?
উত্তর : রাতে রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজানের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৭)।
প্রশ্ন : নিয়তের সময় শুরু হয় কখন?
উত্তর : নিয়তের সময় শুরু হয় আগের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন- মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। সোমবার সূর্যাস্তের আগে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিসে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। (আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/৩৪৩, রদ্দুল মুহতার : ২/৩৭৭)।