ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজানে নবীজির আমল

মুহাম্মাদ মিযানুর রহমান
রমজানে নবীজির আমল

শাবানে প্রস্তুতি

মাহে রমজান মোমিনজীবনের বসন্ত। ইবাদাতের মৌসুম। পুণ্যময় আবহ জেগে ওঠার শ্রেষ্ঠ সময়। পরকালীন পাথেয় অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। পাপী-তাপীর পাপমুক্তির বিশেষ মুহূর্ত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহে রমজান কামনা করতেন। রজব এলে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ্! আমাদেরকে বরকত দিন রজবে ও শাবানে আর আমাদের (হায়াত দীর্ঘ করে) পৌঁছে দিন রমজানে।’

সাহরি খাওয়া

রাসুল (সা.) সাহরি খেয়ে রোজা রাখতেন। সাহরি খাওয়া একটি সুন্নত আমল। হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেন- ‘তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বোখারি : ১৯২৩)।

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম কখনো স্ত্রীদের সঙ্গে, কখনো সাহাবিদের সঙ্গে সাহরি খেতেন। (বোখারি : ৫৬৭)।

সাদামাটা সাহরি গ্রহণ

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের সাহরিতে বাহারি খাবার ছিল না। ছিল সাদামাটা খাবার। ঘরে যা থাকত তা দিয়েই তিনি সাহরি খেয়ে নিতেন। হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন- ‘সাহরি খাওয়া নির্দিষ্ট একটি বরকতের বিষয়। তোমরা সাহরি খাওয়া ছেড়ে দেবে না। তোমাদের কেউ যদি এক ঢোক পানিও পাও, তা দিয়ে হলেও সাহরি করে নেবে। কারণ, আল্লাহতায়ালা ও তাঁর ফেরেশতারা সাহরি খাওয়া ব্যক্তির জন্য রহমত প্রার্থনা করেন।’ (আলবানি : ৩৬৮৩)।

মাসআলার সমাধান

সাহরির পর যখন ফজরের আজান হতো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন। দিনের আলো ভালোভাবে ফুটে উঠলে তিনি রমজান ও রোজাসংক্রান্ত নানান মাসআলার সমাধান দিতেন। ভালো কাজে উৎসাহ দিতেন এবং মন্দ কাজে নিষেধ করতেন। রোজা অবস্থায় তিনি সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে থাকার উপদেশ দিতেন।

হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাকিত বিন সাবিরা (রা.)-কে বলেছেন, ‘তোমরা ভালোভাবে নাকে পানি পৌঁছাও, তবে রোজা অবস্থায় নয় তথা : রোজা অবস্থায় হালকাভাবে পানি পৌঁছাও, অতিরঞ্জন কর না।’ (সুনানে আবু দাউদ : ২৩৬৩)।

মেসওয়াকের আমল

রাসুল (সা.) অধিক পরিমাণে মেসওয়াক করতেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন যথেষ্ট সতর্ক। রমজানে ও রমজানের বাইরে সবসময়ই তিনি মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। তবে রমজানে যেন তা আরো বেড়ে যেত।

আমের বিন রাবিয়া (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা অবস্থায় এত বেশি মেসওয়াক করতে দেখেছি, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না।’ (সুনানে তিরমিজি : ৭২৫)।

গরমে পানির ঝাপটা

প্রচণ্ড গরমে রোজা অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো মাথায় পানি দিতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, এক সাহাবি বলেন, ‘আমি দেখেছি, মরুভূমির প্রচণ্ড গরম অথবা তীব্র পিপাসার কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহী অবস্থায় মাথায় পানি দিচ্ছেন। অথচ তখন তিনি রোজা ছিলেন।’ (আবু দাউদ : ২৩৬৫)। তবে ওলামায়ে কেরাম বলেন, রোজা রেখে আচরণে কষ্ট প্রকাশ করে গায়ে ভেজা কাপড় জড়িয়ে রাখা বা বারবার গোসল করা রোজার মর্যাদা পরপিন্থি ও অনুচিত কাজ।

দান করা

রমজানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মাসের তুলনায় আরো অধিক দানশীল হয়ে উঠতেন। হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাসে যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দানশীল হয়ে যেতেন। দানের মাধ্যমে কল্যাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও অগ্রগামী।’ (বোখারি : ৩২২০)।

অবিলম্বে ইফতার

ইফতারের সময় হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাৎক্ষণিক ইফতার করে নিতেন। সামান্য বিলম্বও করতেন না। হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ ততদিন কল্যাণে থাকবে যতদিন তারা অবিলম্বে (সময় হলে তাৎক্ষণিক) ইফতার করবে।’ (বোখারি : ১৯৫৭)।

সাধারণ ইফতার

ইফতারে বাহারি খাবারের আয়োজন করতে গিয়ে রমজানের বরকতময় সময় নষ্ট করা অনুচিত। বিশেষভাবে ঘরের নারীদের ওপর অতিরিক্ত এ কাজ চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে আমলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এটা একে বারেই অনুচিত কাজ। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইফতার ছিল খুবই সাধারণ। তাতে পাঁচণ্ডসাত পদের খাবারের বাহার থাকত না। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ আদায়ের আগে কয়েকটি মাত্র পাকা আর্দ্র খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। পাকা আর্দ্র খেজুর না পেলে কয়েকটি শুকনো খেজুর দিয়ে, যদি তাও না পাওয়া যেত তবে কয়েক ঢোক পানি পান করেই ইফতার সেরে নিতেন।’ (আবু দাউদ : ২৩৫৬)।

রমজানে রাতের আমল

কোরআন পাঠ : রমজানের রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা উভয়ে একে অন্যকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। (বোখারি : ৬)।

তারাবির নামাজ : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পর তারাবির নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবিদেরকে পড়ার নির্দেশ দিতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছি। অতএব, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে, সওয়াবের আশায় রমজানের দিনে রোজা রাখবে ও রাত্রে তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে গোনাহ থেকে এ রকম পবিত্র হবে, যেমন নবজাতক মাতৃগর্ভ থেকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত