ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তওবার গল্প

মাওলানা আবু দারদা
তওবার গল্প

ইউনুস (আ.) একজন নবী ছিলেন। বর্তমান ইরাকের মাসুল নগরীর নিকটবর্তী ‘নিনেভা’ জনপদের অধিবাসীদের প্রতি তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন। তার মায়ের নাম মাত্তা। এ জন্য তাকে ইউনুস ইবনে মাত্তাও বলা হয়। কোরআন মাজিদে তাকে তিনটি নামে সম্বোধন করা হয়েছে- ইউনুস, জুননুন ও সাহিবুল হুত। জুননুন ও সাহিবুল হুত অর্থ মাছওয়ালা। কোরআনে বর্ণিত মাছ-সংশ্লিষ্ট ঘটনার দিকে ইশারা করে তার এ নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনুস (আ.)-এর উম্মতরা ছিল পৌত্তলিক, মূর্তিপূজারি। তিনি তার উম্মতকে মূর্তিপূজা ছেড়ে এক আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতি আসার আহ্বান জানান। দীর্ঘদিন তাদের তৌহিদের প্রতি ডাকেন। অবশেষে তিনি হতাশ হয়ে যান। ঈমান ও নেক আমলের ডাকে তারা সাড়া না দিলে তিন দিনের মধ্যে অবশ্যই তাদের ওপর আল্লাহর আজাব নাজিল হবে, আসমানি এ ভয় দেখান তাদের। কিন্তু তারা তার কোনো কথাই শুনল না; বরং ক্রমান্বয়ে তার প্রতি শত্রুতা, বিদ্বেষ, অবিশ্বাস ও অস্বীকৃতির মাত্রা বাড়িয়ে দিল। তিনি তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের জন্য বদদোয়া করলেন। তাদের জনপদ ছেড়ে চলে যান।

তিনি চলে যাওয়ার পর লোকদের বিশ্বাস জন্মাল, নবীরা মিথ্যা বলে না। নবীদের দোয়া ব্যর্থ হয় না। আজাবের কিছু আলামতও তারা দেখতে পেল। ফলে তার গোত্রের লোকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে শিশুদের ও পশুদের পাল নিয়ে ময়দানে বের হলো। শিশুদের থেকে মায়েদের বিচ্ছিন্ন করে দিল। একদিকে বাচ্চারা মায়ের জন্য কাঁদল, অন্যদিকে লোকেরা আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে কান্নাকাটি করে আজাব থেকে মুক্তির প্রার্থনা করল। সবাই খাঁটি মনে তওবা করল। নিজেদের হাতে বানানো উপাস্য মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলল। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ইউনুস (আ.)-কে খুঁজতে লাগল। যেন তার অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু না, তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। এদিকে তার উম্মত খাঁটি মনেই তওবা করল। ফলে আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করলেন। তাদের ওপর থেকে আসন্ন আজাব তুলে নিলেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কোনো জনপদ কেন এমন হলো না, তারা এমন সময় ঈমান নিয়ে আসত, যখন ঈমান আনলে তাদের উপকারে আসত? শুধু ইউনুসের কওম ছাড়া। যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমি তাদের ওপর থেকে পার্থিব জীবনের অপমানজনক আজাব তুলে নিলাম। তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবনোপকরণ ভোগের অবকাশ দিলাম।’ (সুরা ইউনুস : ৯৮)। এ আয়াতে ইউনুস (আ.)-এর কওমের প্রশংসা করা হয়েছে কাতররত অবস্থায় তাদের তওবার কারণে। এ ঘটনা থেকে জানা গেল, নবীদের বিরোধিতা ও অবাধ্যতার কারণে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কঠিন আজাব আসে। আর গোনাহ ছেড়ে তওবা করা হলে আল্লাহতায়ালা অনেক বড় বিপদ ও আজাব থেকেও মুক্তি দেন।

লেখক : শিক্ষক, মাশিকাড়া মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা, দেবিদ্বার, কুমিল্লা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত