ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চেতনায় প্রিয়তম রাসুল

রুবাইদা গুলশান
চেতনায় প্রিয়তম রাসুল

দুনিয়ার বুকে একদিন তিনি হেঁটে চলেছেন। তিনি যেখানে হেঁটেছেন, সেই পথকে বলেছি- ধন্য তুমি! তোমার বুকে হেঁটেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। মাটির দিকে তাকিয়ে বলেছি- সেই মাটি, সেই বালু! পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বলেছি- তুমি আজও তেমন আছ, যেমন ছিলে তার সময়। যখন সেইসব পথে হেঁটেছি, অনুভব করেছি তার সময়ে কেমন ছিল এসব পথ। যখন এসি বাসে করে অত্যন্ত আরামের সঙ্গে দীর্ঘপথ মাড়িয়েছি, ভেবেছি আপনিও এ পথ ধরে গেছেন উটের পিঠে চড়ে। আমি সেই তীব্র তাপদাহে তার কষ্টটা অনুভব করার চেষ্টা করেছি। যদিও আমার কল্পনার কাছে আপনার কষ্টের মাত্রা ছিল প্রখর। আমার হৃদয় কেঁদেছে এতটা পথ আপনি এসেছেন। জীবনে আপনার কষ্টের কাছে আমাদের জীবনের কষ্ট তুচ্ছ। আমি যখন মদিনা শহর প্রথম দেখেছি, অঝোরে চোখ থেকে পানি ঝরেছে। আমি যখন প্রথম স্পর্শ করেছি মাটি, মনে হয়েছে শান্তির শহরে এসেছি। আপনার শহর এটি। আমার ভালোবাসার মানুষের শহর এটি। এ শহরের প্রতিটি কোণায় আপনার স্পর্শ। তাই আমি স্পর্শ করেছি এখানে গাছ, ছুঁয়েছি মাটি। আমি যখন দূর থেকে সবুজ গম্বুজ দেখেছি, কেঁপে উঠেছি। পড়েছি দরুদ। আমার প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক এখানে। সুগন্ধির এ শহরে মোহনীয় আবেশে কেটেছে বেলা। কখনও কেঁদেছি। কখনও ফুঁপিয়ে, কখনও নীরবে চোখের জল ফেলেছি। চলে আসব যখন, মনে হয়েছে জীবনে যা যা অর্জন ছিল, সব দিয়েও যদি থেকে যেতে পারতাম!

নবীজির প্রতি ভালোবাসা

ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনাকে আমি ভালোবাসি আমার সন্তান-সন্তুতি, পিতামাতা কিংবা ভাইবোনের চেয়ে বেশি। আপনাকে যে ভালোবাসে, আমি তাকেও ভালোবাসি। আপনি আমার মালিকের রাসুল। আমার হৃদয়ে এ ভালোবাসা তখনই জাগ্রত হয়েছে, যখন জেনেছি আপনাকে ভালোবাসার কথা। আপনি বলেছেন, ‘সেই পবিত্র সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ প্রকৃত মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় না হই।’ (বোখারি : ১৪)।

দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.)

হে আমার প্রিয়নবী! আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে। আপনি এসেছেন জিন ও মানবজাতির হেদায়াতের জন্য। আপনি এমন একজন মহান ব্যক্তি, যিনি তার উম্মতের গোনাহ মাফের জন্য প্রতি নামাজে দোয়া করেছেন। হাশরের মাঠেও গোনাহগার উম্মতের জন্য আপনি ব্যাকুল থাকবেন। সেজদায় পড়ে কাঁদবেন। সুপারিশ করে করে জাহান্নাম থেকে তুলে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। হে আল্লাহ! আপনি দয়ার নবীর পূর্ণ আনুগত্যের তৌফিক দিন সবাইকে। আপনার ভালোবাসায় সিক্ত করুন আমাদের। হে নবী! আপনি বিশ্বমানবপ্রসূন, মানবতার কাণ্ডারি, শান্তি ও প্রকৃত মানবতার আলোকবর্তিকা। আপনি উম্মতের কল্যাণের চিন্তায় পেরেশান থাকতেন। আল্লাহ আপনাকে বুঝ দিলেন এভাবে- ‘ওইসব লোক ঈমান আনছে না, এ কারণে কি তাদের চিন্তায় ও পেরেশানিতে আপনি নিজেকে শেষ করে দেবেন।’ এটা কোরআনে বিবৃত হয়েছে এভাবে- ‘(হে নবী!) এমন যেন না হয় যে, কাফেরদের জন্য আফসোস করতে করতে আপনার প্রাণটাই চলে যায়। নিশ্চয় তারা যা করছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ জ্ঞাত।’ (সুরা ফাতির : ৮)। উম্মতের কল্যাণে ব্যথিত হৃদয়ের আকুতি কি আমার ও আমাদের হৃদয়ে আছে? যদি থাকে, তবেই তো আমি ও আমরা নবীজির প্রকৃত প্রেমিক-প্রেমিকা। এ ছাড়া সবই তো মেকি, লোক দেখানো।

উম্মত হিসেবে আমাদের কর্তব্য

নবীজির সুন্নতগুলো জাগ্রত করা, অর্থাৎ আমলগুলো খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী চলা। নবীজি (সা.)-এর আনুগত্যকে জীবনের সফলতার মাপকাঠি মনে করা। অধিকহারে তার প্রতি দরুদ পাঠ করা। এটাই হবে রাসুলের প্রতি আমাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাজিল করেন।’ (মুসলিম : ৪০৮)। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়ে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতটুকু সময় আপনার দরুদে ব্যয় করব?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘যতটুকু ইচ্ছা।’ আমি বললাম, ‘এক-চতুর্থাংশ?’ বললেন, ‘তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর চেয়ে বেশি কর, তাহলে তোমার জন্য তা কল্যাণকর হবে।’ আমি বললাম, ‘অর্ধেক?’ বললেন, ‘তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর বেশি কর, তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।’ বললাম, ‘তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ?’ বললেন, ‘তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর বেশি কর, তাহলে তা তোমার জন্যই ভালো হবে।’ বললাম, ‘আমি আমার দোয়ার পূর্ণ সময় আপনার দরুদে অতিবাহিত করব।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তাহলে তোমার (দুনিয়া-আখেরাতের) প্রয়োজন পূরণ হবে, পেরেশানি দূর হবে এবং তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি : ২৪৫৭, মুসনাদে আহমদ : ২১২৪২)।

লেখক : ডেপুটি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ

ব্যাংক, মতিঝিল, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত