মদিনা শরিফের জুমার খুতবা

শেষ দশকে নবীজির আমল

শায়খ ড. হুসাইন ইবনে আবদুল আজিজ আলে শায়খ

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো অত্যন্ত শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জিত হয় এমন বিবিধ ইবাদতের মাধ্যমে এ সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাতগুলোর যথাযথ কদর করতে হবে। রহমত প্রাপ্তির কারণ ও উপলক্ষের প্রতি ধাবিত হতে হবে। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে অন্য সময়ের তুলনায় ইবাদতে খুব বেশি সাধনা করতেন। আয়েশা (রা.) ও তার বাবা আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, এ রাতগুলোতে রাসুল (সা.) প্রচণ্ড রকমের সাধনা করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, যখন রমজান আগমন করত, রাসুল (সা.) কোমরে ইজার বেঁধে নিতেন। অর্থাৎ ইবাদতে অত্যধিক মনোনিবেশ করতেন। ইবাদতের জন্য নিজে রাত জাগতেন এবং পরিবারকে জাগিয়ে দিতেন। (বোখারি : ২০২৪, মুসলিম :১১৭৪)।

শবেকদর পাওয়ার উপায়

সময় নষ্ট করা যাবে না। জিকির-তেলাওয়াত, দান-সদকা, নফল নামাজ ও দোয়া-মোনাজাত ইত্যাদি নানা ধরনের ইবাদতের মাধ্যমে এ মহিমান্বিত সময়কে কাজে লাগাতে হবে। শেষ দশকের একটি রাতও ইবাদত ছাড়া অতিবাহিত করা যাবে না। যাতে আল্লাহর সাহায্য ও তৌফিকে লাইলাতুল কদরের বরকত মেলে, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকে তোমরা লাইলাতুল কদর তালাশ কর।’ (মুসলিম : ১১৬৯)।

ফজিলত ও বঞ্চনা

এ রাতগুলো হেলায় নষ্ট করা যাবে না। এ রাতের রয়েছে বড় প্রতিদান, বিশাল শ্রেষ্ঠত্ব, অনন্য ফজিলত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজানের রাতে (কদরের রাতে) ইবাদত করে (বিশেষত সালাত আদায় করে), আল্লাহতায়ালা তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেন।’ (বোখারি : ১৯০১)। অতএব, এ মহামূল্যবান ইবাদতের মৌসুমে, ফজিলতপূর্ণ সময়ে ইবাদতে রত থাকার চেষ্টা করা চাই। কেননা, যে চেষ্টা করে, আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে, সে সফল ও অগ্রগামী হয়। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, নিশ্চয় তোমাদের আমল আমি তোমাদের জন্যই সংরক্ষিত রাখি। এর পর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময় প্রদান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোনো কল্যাণ অর্জন করে, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ছাড়া অন্য কিছু পায়, সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।’ (মুসলিম : ২৫৭৭)। অতএব, সুস্পষ্ট বঞ্চনা তো তা-ই, আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের যা দ্বারা মর্যাদাবান করেছেন, বান্দা তা থেকে বঞ্চিত হওয়া। যেমন- নানান কল্যাণকর উপকরণ, গোনাহ মাফ ও উচ্চ মর্যাদায় আসীন হওয়ার পথ-পদ্ধতি লাভ হতে বঞ্চিত হওয়া। এটা চরম বঞ্চনা। রাসুল (সা.) রমজান মাস সম্পর্কে বলেন, ‘রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, নিঃসন্দেহে সে বঞ্চিতই হলো।’ (সুনানে নাসায়ি : ২১০৬, মুসনাদে আহমদ : ৭১৪৮)।

ইতেকাফ

শেষ দশকে বান্দা ইতেকাফের সুন্নাহকে জীবিত করার তৌফিক পায়। ফলে নিজ স্রষ্টার সঙ্গে নিভৃতে আলাপন এবং প্রতিপালকের ইবাদতের মাধ্যমে তার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার সুযোগ হয়। এ যে কী এক মধুর মুহূর্ত! কী যে এক উপভোগ্য সময়! হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। (বোখারি : ২০২৬, মুসলিম : ১১৭২)। বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ইমাম যুহরি বলেন, ‘মুসলমানদের জন্য আফসোসের বিষয় হলো, তারা ইতেকাফ ছেড়ে দিয়েছে, অথচ রাসুল (সা.) (হিজরত করে) মদিনায় আগমনের শুরু থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত ইতেকাফ ছেড়ে দেননি।’ অতএব, শেষ দশকের রাতগুলোতে বিভিন্ন নেক আমলের প্রতি ধাবিত হতে হবে। আকাশ ও পৃথিবীর অধিপতির নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা চাই। নেক আমলের উৎসাহ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা কল্যাণকর কাজ কর, যাতে সফলকাম হতে পার।’ (সুরা হজ : ৭৭)।

সদকাতুল ফিতর আদায়

রমজান মাসের শেষে মুসলমানের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। সদকাতুল ফিতর আদায়ের উত্তম সময় হলো ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে। ঈদের দু-একদিন আগেও তা আদায় করা যায়। তবে তা আদায়ে ঈদের নামাজের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা অনুচিত। আর সদকাতুল ফিতর দিতে হবে শুধু ফকির ও মিসকিনকে। জাকাত পাওয়ার উপযোগী অন্য কাউকে নয়। আহলে ইলমের দুটি উক্তির মধ্যে এটিই অগ্রগণ্য মত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন রোজাদারের ত্রুটি ও অশ্লীলতার পবিত্রতাস্বরূপ এবং মিসকিনদের জন্য খাদ্যস্বরূপ। সুতরাং কেউ ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করলে, তা হবে মকবুল সদকা। আর নামাজের পরে আদায় করলে তা হবে একটি সাধারণ সদকা। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৪৯২)।

২৩ রমজান ১৪৪৪ (১৪ এপ্রিল ২০২৩) তারিখে মদিনার মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মুফতি দিদার শফিক