ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পিতামাতার অধিকার

মুফতি শাহাদাত হোসাইন
পিতামাতার অধিকার

পিতামাতার সেবা ও আনুগত্য একটি বড় নেয়ামত। এ নেয়ামতের মাধ্যমে বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভ করে। পিতামাতার গুরুত্ব বোঝাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর ইবাদতের প্রতি বান্দাকে আহ্বান করার সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতার আনুগত্যের আদেশ জুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং পিতামাতার প্রতি অনুগ্রহ কর (সুরা নিসা : ১৩৫)।

কোমল আচরণ

আল্লাহতায়ালা পিতামাতার সঙ্গে ধমকের স্বরে কথা বলতে নিষেধ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কোমল আচরণের হুকুম দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তাদের দুইজনে অথবা একজন বার্ধ্যকে পৌঁছে তাহলে তাদের সঙ্গে চিৎকার করে ধমকের স্বরে কথা বলো না এবং তাদের সঙ্গে নরম স্বরে কথা বলো। (সুরা ইসরা : ২৩)।

নবীজি তাঁর উম্মতের সন্তানদের পিতামাতার প্রতি যত্নশীল হতে আদেশ দিয়েছেন এবং তাদের অধিকারের প্রতি কঠোরভাবে খেয়াল রাখতে বলেছেন। পিতামাতার অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে সদাসর্বদা। পিতামাতা কষ্ট পাবেন এমন আচরণ করা যাবে না। তাদেরকে ধমক দিয়ে কথা বলা কবিরা গোনাহ। একজন আদর্শ সন্তান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা মোমিন বান্দার বৈশিষ্ট্য। পিতামাতা আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় ব্যক্তিত্ব। তাদের কষ্ট ও খুশির বিবেচনায় আল্লাহতায়ালা বান্দার জীবনের অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বান্দার সুভাগ্য বা দুর্ভাগ্য নির্ভর করে পিতামাতার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির ওপর। এ প্রসঙ্গে নবীজি বলেছেন, পিতামাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি। পিতামাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি : ১৮৯৯)।

অবাধ্য হওয়া যাবে না

কোনো অবস্থাতেই পিতামাতার অবাধ্য হওয়া যাবে না। যদি আল্লাহর অবাধ্যতা হয়- এমন আদেশ না করে থাকেন পিতামাতা। ব্যক্তিজীবনে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও পিতামাতাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা যাবে না। এমনকি পিতামাতা কোনো সন্তানকে যদি তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিতও করেন, তার পরও সন্তানের উচিত নয় তাদের অবাধ্য হওয়া। সাহাবি মোয়াজ ইবনে জাবাল বলেন, রাসুলুল্লাহ আমাকে অসিয়ত করেছেন পিতামাতার অবাধ্য হয়ো না যদিও তারা তোমাকে পরিবার ও সম্পদ থেকে বের হয়ে যেতে বলে। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৮/১৪১)।

পিতামাতা যদি ন্যায়সঙ্গত কারণে এবং দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিয়ে সার্বিক কল্যাণ বিবেচনায় ছেলেকে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন, তাহলে সেক্ষেত্রেও তাদের আদেশ মানা আদব ও জরুরি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন, আমার বিবাহে একজন নারী ছিল যাকে আমি পছন্দ করতাম কিন্তু ওমর (রা.) (তার পিতা) তাকে অপছন্দ করতেন। তিনি বললেন, তাকে তালাক দাও। আমি তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন তিনি নবীজির কাছে এলেন এবং ঘটনা বললেন। নবীজি আমাকে বললেন, পিতার অনুসরণ কর। অর্থাৎ তাকে তালাক দাও। (সহি ইবনে হিব্বান : ৪২৬, ৩৫৪)।

পিতামাতার গুরুত্ব

নবীজি (সা.) ক্ষেত্রবিশেষে পিতামাতার অধিকার ও সন্তুষ্টিকে আল্লাহতায়ালার রাস্তায় জিহাদ করার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর বলেন, একজন ব্যক্তি এসে নবীজির কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। নবীজি বললেন, তোমার পিতামাতা কি বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এবার নবীজি বললেন, তুমি তাদের মধ্যেই জিহাদ কর (অর্থাৎ তাদের সেবা করার মাধ্যমে নিজেকে নিয়োজিত রেখে তাদের সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করো)। (বোখারি : ৫৯৭২)।

পিতামাতার খেদমত ও অধিকারকে নবীজি হিজরতের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলের ওপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবি ইবনে ওমর বলেন, একজন ব্যক্তি নবীজির কাছে এসে বাইয়াত হলেন এবং বললেন, আমি আমার পিতামাতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে আপনার কাছে হিজরতের জন্য বাইয়াত হতে এসেছি। তার এই কথা শুনে নবীজি বললেন, তাদের কাছে ফিরে যাও এবং তাদেরকে হাসাও যেভাবে তাদেরকে কাঁদিয়েছ। (আবু দাউদ : ২৫২৮)।

আবু দাউদ শরিফে এসেছে, একজন ব্যক্তি সুদূর ইয়ামেন থেকে হিজরত করে নবীজির কাছে এলে, নবীজি তাকে প্রশ্ন করলেন, ইয়ামেনে কি তোমার পিতামাত আছে? তিনি বললেন, আছে। এবার নবীজি বললেন, তুমি কি তাদের অনুমতি নিয়ে এসেছ? তিনি বললেন, না। নবীজি তাকে আদেশ করলেন, পিতামাতার কাছে ফিরে গিয়ে অনুমতি চাও। তারা আসতে দিলে এসো নচেৎ তাদের সঙ্গে সদাচারণ কর। (আবু দাউদ : ২৫৩০)।

পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে নয়, নিজের ঘরে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে রাখা সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। ইসলাম বলে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। পিতার সন্তুষ্টিতে রবের সন্তুষ্টি। হাদিসের এ দুটি কথা মনে রাখলে কোনো সন্তান তার পিতামাতাকে অবহেলার পাত্র বানিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে নিজে আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ হতে বঞ্চিত হতে পারে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত