জিলকদ মাস কোরআনে বর্ণিত একটি সম্মানিত মাস। এ মাসে অন্য মাসের মতোই আমল করা যেতে পারে। কিন্তু মাসের ফজিলত বোঝাতে আমলের নামে জাল হাদিস ও বানোয়াট কথা গ্রহণযোগ্য নয়। জিলকদ মাসে সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল আমল ও বানোয়াট কথা আছে, যা বর্জনীয়। যেমন-
১. যে ব্যক্তি জিলকদ মাসে এক দিন রোজা রাখবে, এর প্রতিটি মুহূর্তের বিনিময়ে আল্লাহ তার আমলনামায় মকবুল হজের সওয়াব লিখবেন।
২. যে ব্যক্তি জিলকদ মাসের সোমবার দিন রোজা রাখে, তার আমলনামায় এক হাজার বছর নফল ইবাদতের নেকি লেখা হয়।
৩. যে ব্যক্তি এ মাসের প্রথম রাতে দুই দুই রাকাতের নিয়ত করে চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করে, তার প্রতিটি রাকাতে সুরা ফাতেহা পাঠ করার পর ২৩ বার সুরা ইখলাস পাঠ করে, সে ব্যক্তির জন্য বেহেশতে চার হাজার মনোমুগ্ধকর ভবন নির্মাণ করে রাখা হয়। প্রতিটি ভবনে লোহিত বর্ণের ইয়াকুত পাথর দ্বারা নির্মিত বহু মূল্যবান মণি-মুক্তা খচিত সিংহাসন পাতা থাকবে। প্রত্যেক সিংহাসনে একজন করে হুর উপবিষ্ট থাকবে। এই হুরদের কপাল সূর্যের আলোর চেয়েও বেশি দীপ্তিমান হবে।
৪. যে ব্যক্তি জিলকদ মাসের প্রত্যেক রাত্রে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে, প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে একজন হাজীর নেকি ও একজন শহীদের নেকি দান করবেন এবং সে হাশরের দিন আল্লাহ পাকের আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।
এ সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বর্ণনা। এসব বর্ণনা সহি হওয়া তো দূরের কথা, জাল হাদিসবিষয়ক কিতাবাদিতেও তা পাওয়া যায় না। এ জাতীয় বর্ণনার ব্যাপারে মৌলিক কথা সেটিই, যা লখনবি (রহ.) বলেছেন। তাকে আশুরার বিশেষ নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আশুরা এবং বছরের অন্যান্য বরকতপূর্ণ দিনে নির্দিষ্ট রাকাতে বিশেষ নিয়মের কোনো নামাজ নির্ভরযোগ্য কোনো রেওয়ায়েতে আসেনি। এ সম্পর্কে যা কিছু উল্লেখ করা হয়, সবই বানোয়াট ও জাল। (আলআসারুল মারফুআ : ৮)।
জিলকদ মাসের ফজিলত হলো, এটি সম্মানিত চার মাসের একটি এবং হজের মাসগুলোর একটি। এটি যেহেতু সম্মানিত মাস, তাই এর সম্মান রক্ষা করা উচিত; গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং নেক আমলে যত্নবান হওয়া উচিত। যেমনটি আল্লাহ কোরআনে নির্দেশ করেছেন, (...তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত) ...সুতরাং এ মাসগুলোতে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। (সুরা তাওবা : ৩৬)। গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ মাসের প্রথম কাজ, সঙ্গে সঙ্গে নেক আমলেও যত্নবান হওয়া দরকার। সে হিসেবে নফল নামাজ, নফল রোজা করা যেতে পারে। কিন্তু জানা থাকা দরকার, এর জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি, বিশেষ কোনো দিন বা ফজিলত বর্ণিত হয়নি।