সব নবী নিষ্পাপ ছিলেন। তারা যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত। ছোট-বড় কোনো পাপই তাদের দ্বারা হয়নি। এ ব্যাপারে উম্মতের আলেমরা একমত। প্রথম নবী আদম (আ.)-কে বিশেষ গাছ বা তার ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং এ ব্যাপারেও সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল যে, শয়তান তোমাদের শত্রু। কাজেই সে যেন তোমাদের পাপে লিপ্ত করে না দেয়।
হজরত আদম (আ.)-এর তা খাওয়া বাহ্যিকভাবে পাপ বলে গণ্য। অথচ নবীরা পাপ থেকে মুক্ত ও পবিত্র। সঠিক তথ্য এই যে, নবীদের যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত ও পরিশুদ্ধ থাকার কথা যুক্তি-বুদ্ধির দ্বারা এবং লিখিত ও বর্ণনাগতভাবে প্রমাণিত। চার ইমাম ও উম্মতের সম্মিলিত অভিমতেও নবীরা ছোট-বড় যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত ও পবিত্র। কারণ নবীদের (আ.) গোটা মানব জাতির অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল। যদি তাদের দ্বারা আল্লাহপাকের ইচ্ছার পরিপন্থি ছোট-বড় কোনো পাপ কাজ সম্পন্ন হতো, তবে নবীদের বাণী ও কার্যাবলির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠে যেত। যদি নবীদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস না থাকে তবে দ্বীন ও শরিয়তের স্থান কোথায়? অবশ্য কোরআন পাকের বহু আয়াতে অনেক নবী (আ.) সম্পর্কে এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। যাতে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের দ্বারাও পাপ সংঘটিত হয়েছে এবং আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে এ জন্য তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। হজরত আদম (আ.) এর ঘটনাও এ শ্রেণিভুক্ত।
এ ধরনের ঘটনাবলি সম্পর্কে উম্মতের সর্বসম্মত অভিমত এই যে, কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা অনিচ্ছাকৃত কারণে নবীদের দ্বারা এ ধরনের কাজ সংঘটিত হয়ে থাকবে। কোনো নবী (আ.) জেনেশুনে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহপাকের হুকুমের পরিপন্থি কোনো কাজ করেননি। এ ত্রুটি ইজতেহাদগত ও অনিচ্ছাকৃত এবং তা ক্ষমার যোগ্য। শরিয়তের পরিভাষায় একে পাপ বলা চলে না এবং এ ধরনের ভ্রান্তিমূলক ও অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি সেসব বিষয়ে হতেই পারে না, যার সম্পর্ক শিক্ষা-দীক্ষা এবং শরিয়তের প্রচারের সঙ্গে রয়েছে। বরং ইজতিহাদি কাজকর্মে এ ধরনের ভুলত্রুটি হতে পারে, যাতে কোনো পাপ নেই। বরং তাতে উম্মতের জন্য নবীদের অনুসরণে ভুল শোধরানোর শিক্ষা থাকে।
কিন্তু যেহেতু আল্লাহপাকের দরবারে নবীদের স্থান ও মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চে এবং যেহেতু মহান ব্যক্তিদের দ্বারা ক্ষুদ্র ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হলেও তাকে অনেক বড় মনে করা হয়, সেহেতু কোরআন হাকিমে এ ধরনের ঘটনাবলিকে অপরাধ ও পাপ বলে অভিহিত করা হয়েছে। যদিও সেগুলো প্রকৃতপক্ষে আদৌ পাপ নয়।
‘তোমরা জান্নাত থেকে নেমে যাও’-এর পূর্ববর্তী আয়াতেও জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণের নির্দেশ ছিল। এখানে পুনরায় এর উল্লেখ করার মাঝে সম্ভবত এ উদ্দেশ্যই নিহিত রয়েছে যে, প্রথম আয়াতে পৃথিবীতে অবতরণের হুকুম ছিল শাস্তিমূলক।
সে জন্যই তার সঙ্গে সঙ্গে মানবের পারস্পরিক শত্রুতার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এখানে পৃথিবীতে অবতরণের নির্দেশে বিশেষ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। আর তা হলো বিশ্বে খোদায়ি খেলাফতের পূর্ণতা সাধন। এজন্য এর সঙ্গে হেদায়েত প্রেরণের উল্লেখও রয়েছে, যা খোদায়ি খেলাফতের সম্বন্ধীয় কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। এতে বোঝা গেল, পৃথিবীতে অবতরণের প্রথম নির্দেশটি যদিও শাস্তিমূলক ছিল; কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হলো, তখন অন্যান্য মঙ্গল ও হেকমতগুলোর বিবেচনায় পৃথিবীতে প্রেরণের হুকুমের রূপ পরিবর্তন করে মূল হুকুম বহাল রাখা হলো এবং তাদের অবতরণ হলো বিশ্বের শাসক খলিফা হিসেবে।