মহান রবের কুদরত ও তৌফিকে আমাদের সামনে উপস্থিত জিলহজের প্রথম দশক। প্রথম দশকের দিনগুলোকে আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য বরকতময় করুন। ইবাদতের মাধ্যমে সমৃদ্ধি দান করুন। নিশ্চয় জিলহজের প্রথম দশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাৎপর্যপূর্ণ ঋতু। আসমান ও জমিনের প্রতিপালক আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ, নেক আমলের মাধ্যমে পাথেয় গ্রহণ এবং সমুদয় কল্যাণ লাভের জন্য প্রতিযোগিতা করার সময়। সুরা ফজরের শুরুতে আল্লাহতায়ালা ফজর ও দশকের কসম করে বলেন, ‘কসম ফজরের এবং দশ রাতের’ (সুরা ফাজর : ১-২)। এ আয়াত দুটোর বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা হলো, দশ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশক উদ্দেশ্য। সুতরাং আল্লাহর বান্দারা, এ দিনগুলোতে বিভিন্ন নেক আমলের জন্য সচেষ্ট ও তৎপর হোন। প্রথম দশকের মুহূর্তগুলো এমন কিছু আমলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করুন, যা নিজের কৃত পাপগুলো মুছে দেবে। নেক আমলকে বহুগুণে বর্ধিত করবে। আর এটাই তো লাভজনক ব্যবসা।
প্রথম দশকের ফজিলত
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের নেক আমল আল্লাহতায়ালার কাছে অত প্রিয় নয়।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? রাসুল (সা.) বললেন, ‘না, আল্লাহর পথে জিহাদ করাও নয়। তবে যে ব্যক্তি নিজ জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর পথে (জিহাদে) বের হয়ে যায় অতঃপর এর কোনো একটি নিয়ে আর ফেরত না আসে।’ (অর্থাৎ শহীদ হয়ে যায়, তাই শুধু এমন ব্যক্তির আমলই এ আমলের চেয়ে উত্তম ও প্রিয় হতে পারে)। (বোখারি : ৯৬৯, তিরমিজি : ৭৫৭)। ইমাম বায়হাকি ও দারেমি (রহ.) ফজিলত বর্ণনায় বলেন, ‘কোরবানির দশকের (জিলহজের প্রথম দশকের) আমলের চেয়ে পবিত্র ও প্রতিদানে বড়ো অন্য কোনো আমল নেই। ইমাম বাযযার তার মুসনাদে রাসুল (সা.)-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন, ‘নবী (সা.) বলেছেন, দুনিয়ার উৎকৃষ্ট দিন হলো, দশক অর্থাৎ জিলহজের প্রথম দশ দিন।’
প্রথম দশকের আমল
বিভিন্ন দলিল দ্বারা প্রমাণিত, এ দিনগুলোতে রোজা রাখা মুস্তাহাব। সালাফ থেকে এর প্রচুর আমল রয়েছে। জিলহজের প্রথম দশকে হাজী ও হাজী নয়, সবার জন্য বিশেষ আমল হলো, অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করা। ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ বেশি বেশি পড়া। (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। এগুলোও বেশি বেশি পাঠ করে জিকির করা যাবে)। হাদিসে এসেছে, এই দশ দিনের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ও অধিক বড়ো নয়। সুতরাং এই দিনগুলোতে তোমরা অধিক পরিমাণে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার) পড়। (ইমাম তাবারানি তাকবির অনুচ্ছেদে উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন)। ইমাম বোখারি (রহ.) তার কিতাব বোখারিতে বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) বাজারে বের হতেন অর্থাৎ তারা জিলহজের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন। আর তাকবির পাঠ করতেন। তাদের তাকবির শুনে লোকেরাও তাকবির পাঠ করত।
কখন তাকবির পড়বে
জিলহজের প্রথম দশকে জিকির হিসেবে সবসময়ই তাকবির পড়বে। ফরজ ও নফল নামাজের পর নির্ধারিত যে তাকবির রয়েছে, তা ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর নামাজের পর পর্যন্ত পড়বে। যারা হাজী নয় তাদের জন্য এ নিয়ম। আর যারা হাজী তথা হজ করছে, এ সময়গুলোতে তারা মূলত তাকবির শুরু করবে কোরবানির দিন জোহরের নামাজের পর থেকে। এ দিনগুলো বিভিন্ন আমলে তৎপর ও সচেষ্ট থেকে বিবিধ কল্যাণ ও বড়ো বড়ো প্রতিদান লাভ করা উচিত। (৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর নামাজের পর পর্যন্ত নারী-পুরুষ, মুকিমণ্ডমুসাফির, সবাই শুধু ফরজ নামাজের পর সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে একবার তাকবির পড়বে। একবার তাকবির পড়া ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চ আওয়াজে আর নারীরা হালকা আওয়াজে তাকবির পড়বে। এ তাকবিরকে তাকবিরে তাশরিক বলে)। (সুরা বাকারা :২০৩, মুসতাদরাকে হাকেম : ১/২৯৯ হাদিস : ১১৫২-১১৫৭)। তাকবিরে তাশরিক হলো, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৫৬৭৯, ৫৬৯৬৫৬৯৭, ৫৬৯৯)।
(১৬ জুন ২০২৩ তারিখের মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন- মুফতি দিদার শফিক)