ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উত্তম স্ত্রীর গুণাবলি

শরিফ আহমাদ
উত্তম স্ত্রীর গুণাবলি

সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে আল্লাহর বিধান ও নবীজির সুন্নাহ মেনে চলতে হয়। তবেই গড়ে ওঠে পবিত্র ভালোবাসার স্থায়ী মজবুত বন্ধন। সংসারে সুখের ফুল ফোটাতে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর প্রধান ভূমিকা পালন করতে হয়। একজন নারী তার চুম্বক সাদৃশ্য গুণের সাহায্যে পৃথিবী বানাতে পারে জান্নাতের অংশ। আর এ জন্য উত্তম স্ত্রীর গুণাবলি সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী জীবন গঠন করা প্রত্যেকটি স্ত্রীর জন্য অপরিহার্য। নিচে উত্তম স্ত্রীর কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।

সতী সাধ্বী হওয়া

মুসলিম নারীদের কিছু উত্তম আদর্শ আছে, যা ইসলাম তাদের দিয়েছে। এই আদর্শগুলো যে স্ত্রীদের মধ্যে থাকবে, তারাই উত্তম এবং জান্নাতি নারী বলে বিবেচিত হবে। উত্তম স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, পুরুষ নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণে যে, পুরুষরা নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সতীসাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা হয়ে থাকে। পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজতে (তার অধিকারগুলো) হেফাজত করে। (সুরা নিসা : ৩৪)।

ওই আয়াতে উত্তম নারীর তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। এক. দীনদার ও সতী সাধ্বী হওয়া। দুই. স্বামীর বিশ্বস্ত ও অনুগতা হওয়া। তিন. স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব এবং স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা। সুরা নূরের ২৬ নং আয়াতে পবিত্র ও চরিত্রবান হওয়াকেও উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু সম্পদস্বরূপ আর দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো সতী-সাধবী, নেককার স্ত্রী। (মুসলিম : ২৬৬৮)।

স্বামীর আনুগত্য করা

উত্তম স্ত্রীর প্রধান একটি গুণ হলো স্বামীর আনুগত্য করা। কেননা, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সমন্বয়ে সংসারের সূচনা হলেও পুরুষ স্ত্রীর উপর কর্তৃত্বশীল। কোরআনে এসেছে, পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল। (সুরা নিসা : ৩৪)। পারিবারিক শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বামীর আনুগত্য স্ত্রীর জন্য প্রয়োজন। স্বামীর আনুগত্যের গুরুত্ব বোঝাতে হাদিসে এসেছে, হজরত মুয়াজ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি যদি কোনো ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সিজদা দিতে। (কিন্তু সিজদা আল্লাহ ছাড়া কাউকে দেওয়া জায়েজ নয়, তাই এ আদেশ দেওয়া হয়নি) (মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ৮৭৮৫, সুনানে দারেমি : ১৫০৪, আবু দাউদ : ২১৪০)। হাদিসের প্রসিদ্ধ ছয় গ্রন্থের অন্তর্গত নাসাঈ শরিফে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কে একদা জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, কোনো নারী সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, যে নারী স্বামীকে আনন্দিত করে, যখন স্বামী তার দিকে তাকায়। যে নারীর স্বামীর আনুগত্য করে, যখন স্বামী তাকে নির্দেশ দেয়। যে নারী স্বামীর সম্পদ ও নিজ নফসের ব্যাপারে এমন কোনো কর্মে লিপ্ত হয় না, যা স্বামীর অপছন্দ। (সুনানে নাসায়ি : ৩২৩১)। অত্র হাদিসে স্বামীর আনুগত্য করাকে উত্তম নারী বলা হয়েছে। অন্য হাদিসে আছে, নবীকারিম (সা.) বলেন, তোমাদের সেসব স্ত্রী জান্নাতি, যারা মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারিণী, পতির সঙ্গপ্রিয় (প্রেমময়ী), যে স্বামী রাগ করলে সে তার হাতে হাত রেখে বলে আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি দুনিয়ার কোনো স্বাদ গ্রহণ করব না। (সহি হাদিস সংকলন ২৮৭)।

ধৈর্যশীল হওয়া

ধৈর্য একটি মহৎ গুণ। এটি সাফল্যের সোপান। একজন ধৈর্যশীলা স্ত্রী পরিবারের সবাইকে যেকোনো ধরনের মারাত্মক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে এবং নিজেও বিভিন্ন সমস্যাবলি থেকে বাঁচতে পারে। কোরআনে এসেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ( সুরা বাকারাহ : ১৫৩)।

জীবন চলার পথে হঠাৎ করে বিপদ আপদ আসতে পারে। পরিবারের ছোট বড় যে কোনো সদস্য অসুস্থ হতে পারে। সেই বিপদের দিনেও ধৈর্য ধারণ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে এবং গোনাহ মাফের বড় একটি সুযোগ করে দেয়। এ সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, মোমেন নর-নারীর জানমাল ও সন্তানের ওপর বিপদাপদ আসতেই থাকে। অবশেষে আল্লাহর সঙ্গে সে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে তার আর কোনো গোনাহ থাকে না। (তিরমিজি : ২৩২৩)।

পর্দা ও লজ্জাশীল হওয়া

মহান আল্লাহ মোমেন নারী পুরুষের প্রতি পর্দা ফরজ করেছেন। পর্দা হলো একজন আদর্শ ও সম্ভ্রান্ত স্ত্রীর প্রতীক। মহান আল্লাহ মহিলাদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখাকে ফরজ করেছেন। পর্দা মানুষের মধ্যে লজ্জা সৃষ্টি করে এবং গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সাবধান থাকার পরামর্শে নবীজি (সা.) বলেন, কোনো পুরুষ একজন মহিলার সঙ্গে নির্জনে মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান। (তিরমিজি, মিশকাত : ৩১১৮)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ। তাই একজন উত্তম গুণবতী নারী যার তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে না। পর্দা রক্ষা করে প্রয়োজন মতো খেদমতের হাত বাড়িয়ে দেয়। আর এই পর্দা ও লজ্জা তাকে অনিষ্ট থেকে হেফাজতে রাখে।

ব্যবহারে কোমল হওয়া

সত্যবাদী ও মিষ্টভাষী মানুষ সর্বত্রই সমাদৃত। একজন সত্যবাদী ও মিষ্টভাষী গুণসম্পন্ন স্ত্রী পরিবারের জন্য বিরাট নেয়ামত। এরকম নারীকে মহান আল্লাহ পছন্দ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ হলেন নরম ব্যবহারকারী, তিনি নরম ব্যবহার পছন্দ করেন। আর তিনি নরম ব্যবহারকারীকে যে সাওয়াব দেন, কঠোর ব্যবহারকারীকে তা দেন না। (আবু দাউদ : ৪৭৩২ )।

উত্তম ব্যবহার উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। যে স্ত্রী তার স্বামী ও স্বামীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে সে উত্তম নারী হিসেবে পরিগণিত। দুনিয়াতে সে সবার কাছে আদরের পাত্র বলে গণ্য হয়। তবে আদর্শবান নারীরা পরপুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা কর্কশ স্বরে বলে থাকেন যেন ওই পুরুষ ব্যক্তির অন্তর নারীর প্রতি প্রলুদ্ধ না হয়।

অল্পে তুষ্ট থাকা

অল্পে তুষ্ট থাকা মোমেন নর-নারী চরিত্রের ভূষণ। সুখী জীবন লাভের বড় হাতিয়ার। অল্পে তুষ্টির এই অনন্য গুণটি যে নারী অর্জন করতে পারে জীবনের শত দুঃখণ্ডকষ্ট ও অপূর্ণতায় তার কোনো আক্ষেপ থাকে না। ইসলামে নারীদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পিত। পুরুষরাও রক্ত ঘাম পানি করে কঠোর পরিশ্রম করে। একজন উত্তম নারী তার স্বামীর কাছে কোনো কিছুর দাবি করার আগে স্বামীর সামর্থ্য বিবেচনা করে। সামর্থ্যরে বাইরে কোনো অনর্থক দাবি করে না। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকে সন্তুষ্ট থাকে। এ সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতে পরিতুষ্ট থাকে, সেই সফলকাম হয়েছে। (ইবনে মাজাহ : ৪১৩৮)।

লেখক : কবি ও আলেম

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত