ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পারিবারিক সংকটের নেপথ্যে

পারিবারিক সংকটের নেপথ্যে

আশপাশে অনেক শিক্ষিত ও রিলিজিয়াস পরিবারে পারিবারিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে পারিবারিক সংকটের পেছনে পরকীয়াকে সামনে নিয়ে আসলেও বর্তমানে আরেকটি বিষয় পরিবারগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর তা হচ্ছে- ‘বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা কার কাছে থাকবে।’ বাংলাদেশ তথা মুসলিম পরিবারগুলোর একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা ছিল বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে ছেলেদের তত্ত্বাবধানে থাকবে। কিন্তু এর মধ্যে এর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে, কারণ মেয়েরা পরিবারগুলোর মেইন চালিকাশক্তি হয়ে উঠছেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। সুতরাং ছেলের বউ যদি না চায়, ছেলে বাবা-মাকে তার সঙ্গে রাখতে পারেন না।

রাখলে সংসারে অশান্তি হয়। অনেক মেয়ে শর্তই দেন তোমার বাবা-মা সঙ্গে থাকলে আমি চললাম। আবার ঠিক সেই মেয়েটিই তার নিজের বাবা-মা অসুস্থ হলে চান নিজের কাছে রাখতে। এতে করে একজন ছেলে নিজে যেখানে তার বাবা-মাকে রাখতে পারছেন না সেই জায়গায় বউয়ের বাবা-মাকে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এই যে মনঃকষ্টের সৃষ্টি হয়, তা থেকেই পরিবারগুলো আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শুধু তাই নয়, অনেক মেয়েকে দেখেছি শুধু বাবার বাড়ির ভাই-বোনকে উঠাতে গিয়ে নিজের সংসার নেই। বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন। এখন আর কেউ তাকে বিবাহ করে না। হ্যাঁ, করে যদি মেয়ের ভালো চাকরি থাকে, মেয়ের সম্পদ থাকে। কিন্তু আগের ঘরের সন্তানদের সঙ্গে আর এডজাস্ট হয় না। আপনি যদি সংসার জীবনে সুখী দাম্পত্য জীবন চান মেয়ে হিসেবে আপনাকে মেনে নিতে হবে যে, আপনি যাকে বিয়ে করেছেন, সেই ছেলেই তার বাবা-মার দায়িত্ব পালন করবে। এটি মেনে নেয়ার মধ্যেই কল্যাণ। আপনি হয়তো বলবেন, স্বশুর-শাশুড়ির সেবা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। সেই আপনিই সমাজ কল্যাণের নামে দুস্থদের সেবা করতে হবে বলে মঞ্চে বক্তব্য দিয়ে বেড়ান, সেই আপনিই ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেন সামাজিক সুবিচারের, দুর্বলের পাশে থাকবার। অনেকে নিজেকে সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে মরিয়া। সেই আপনিই আপনার নিকটজনের সহায়তায় ন্যূনতম উদারতা দেখাতে পারছেন না। একটু ভাবুন আপনি যেই ছেলেকে খুব যত্নে বড় করছেন, মনে মনে ভাবছেন আমার ছেলে একদিন বড় হবে। ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে। বুড়ো হলে আমার যত্ন করবে। সেই ছেলে বড় হয়ে আপনার দেখভাল না করে বউয়ের মা-বাবার যত্ন করছে। ভাবুন তো বিষয়টা কতটা নির্মম! আসলে আমরা কেউই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না। তবে আমি একথা বলছি না যে, আপনি আপনার বাবা-মার জন্য করবেন না। অবশ্যই করবেন।

যদি আপনার সাধ্য থাকে। যেমন ধরুন আপনার স্বামীর প্রচুর টাকা-পয়সা। আপনার এবং পরিবারের বরণ পোষণ করার পর তার উদ্ধৃত অনেক টাকা-পয়সা থাকে। সেই টাকা আপনি আপনার বাবা-মা ও ভাই-বোনদের উন্নয়ন ও সেবায় খরচ করতে স্বামীকে উৎসাহিত করতে পারেন। কারণ তারা আপনার আপনজন ও তাদের অধিকার রয়েছে আপনার অর্থের মাধ্যমে তাদের জীবনধারায় পরিবর্তন আনার। অনেকে বলে থাকেন, আমি আমার বাবা-মার জন্য করি, নিজের ইনকাম দিয়ে। স্বামীর ইনকাম দিয়ে নয়। এই যে আপনি আপনার ইনকাম দিয়ে বাবা-মার জন্য করতে যান বিনিময়ে আপনার স্বামী দিনের পর দিনে সংসার চালাতে গিয়ে আরো অভাবগ্রস্ত হচ্ছেন। অভাব দূর করতে গিয়ে হয় তিনি দু’টো চাকরি করেন। নতুবা সাইট বিজনেস করেন। এতে তিনি কিন্তু আপনাকে কিংবা পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারেন না। আর আপনিও চাকরি করার কারণে পরিবার কিংবা স্বামী কোয়ালিটি টাইম দিতে পারেন না। এই না পারা থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্ব থেকে পারিবারিক সংকট আরো প্রকট হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।

- লেখক : মুহাম্মদ ইমরান হুসাইন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত