ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রবিউল আউয়াল সিরাত চর্চার মাস

সাঈদ আহমাদ
রবিউল আউয়াল সিরাত চর্চার মাস

চলছে হিজরি সনের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। এটা সিরাতুন্নবী (সা.)-এর সঙ্গে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাস। এই মাসেই পৃথিবীতে আগমন করেন মহানবী (সা.)। এ মাসেই তার নবুওয়াত, হিজরত এবং ওফাত সংঘটিত হয়েছে। নবীর ছেঁরয়ায় মহিমান্বিত এ মাস সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নিচে রবিউল আউয়াল মাসে সিরাত চর্চার গুরুত্ব পথ ও পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।

সিরাত চর্চার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

সিরাত চর্চা করা মুসলিমদের নৈতিক দায়িত্ব।? কেননা, এটা ঈমান আকিদার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সিরাত মানে রাসুল (সা.)-এর পুরো জীবন। তার জীবনের শুরু শেষ ঘটনাবলি। রাসুল (সা.)-এর জীবনীই হলো মূলত সিরাত। রাসুল (সা.)-এর জীবনযাপন পদ্ধতি, আচরণ সমষ্টি, সামাজিকতা, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাব্যবস্থা, ইবাদত আরাধনা এক কথায় নবী (সা.)-এর পুরো জীবনই হলো সিরাত। রাসুলের জীবন থেকে নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষা নেওয়াই সিরাত পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কোরআনে বলা হয়েছে, বস্তুত রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। এমন ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে। (সুরা আহযাব : ২১) এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি তো আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে সর্বোত্তম চরিত্রমাধুরীর পূর্ণতা বিধানের জন্যই প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫১)।

সিরাত চর্চার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

একজন মোমেনের জীবনে সিরাত পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ সিরাত পাঠের দ্বারা সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, শিরক-বিদয়াত ও গোমরাহি থেকে বাঁচা যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত তা ধরে রাখবে পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহতায়ালার কিতাব ও নবীর সুন্নাত।? (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ৬৮৫, মুস্তাদরাক হাকেম : ৩১৯)। নবীর সুন্নাত অনুসরণের মাধ্যমেই তার ভালোবাসা অর্জিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী! (মানুষকে) বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো, তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আল ইমরান : ৩১)। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে সে অবশ্যই আমাকে ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। (তিরমিজি : ২৭২৬)। বুঝা গেল সুন্নাত অনুসরণের মধ্যে দুনিয়া-আখেরাতের সফলতা ও কল্যাণ।

সিরাত চর্চার পথ ও পদ্ধতি

মুসলিম উম্মাহ সব যুগেই সিরাত চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রচারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সব লেখক তার মনের মাধুরী মিশিয়ে শব্দের সানাই বাজিয়ে ভাবের সৌরভে ডুবে নবীজি (সা.)-এর জীবনের প্রত্যেকটি সাইট সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকাশিত হয়েছে হাজার হাজার বই। আর এ জন্যই মূলত বাজারে সিরাত বিষয়ে নানান বইয়ের ছড়াছড়ি। বয়স অনুপাতে সিরাতের বই নির্বাচন করা, আলেম ও যোগ্য লেখকের বই বাছাই করা অনেকটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো নিকটস্থ বিজ্ঞ আলেমণ্ডওলামা থেকে বইয়ের লিস্ট নিয়ে তারপর বই সংগ্রহ করা এবং রুটিন করে নিয়মিত পাঠ চালিয়ে যাওয়া। সুযোগ বুঝে সিরাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা। এছাড়া সর্ববিষয়ে কোরআন ও রাসুলের অনুসরণ করেন এমন বিজ্ঞ আলেমদের সংস্পর্শে থেকে তাদের পরামর্শ মেনেও রাসুলের সিরাতের চর্চা করা যায়।

সিরাতের নির্বাচিত কয়েকটি বই

সবার জীবনে আছে ব্যস্ততা। ব্যস্ততার ভিড়ে অনেক সহজ কাজ নির্ধারিত সময়ে করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবুও সময় বের করে সিরাত পড়া উচিত। সিরাত পাঠ মোমেনের জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি কর্ম। অল্প সময়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত এই গ্রন্থগুলো পাঠ করা যায়। শামায়েলে তিরমিজি, সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, নবীয়ে রহমত, আর রাহীকুল মাখতুম, নবীজির সংসার, নবী জীবনের গল্প ইত্যাদি। হাতে সময় বেশি থাকলে এই গ্রন্থগুলো পাঠ করা যায়। সিরাতুন্ন নবী, আসাহহুস সিয়ার, সিরাতে মুস্তফা? ও সিরাত বিশ্বকোষ। ছোটদের জন্য সিরাতবিষয়ক নির্বাচিত কয়েকটি বই- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রচিত কাসাসুন নাবিয়্যিন, মাওলানা আবু তাহের মিসবাহের লেখা শিশু সিরাত সিরিজ, মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ অনূদিত গল্পে আঁকা সিরাত, ইকবাল কবীর মোহনের ছোটদের মহানবী ইত্যাদি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত