ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সত্য দমনে নবীকে বয়কট

শরিফ আহমাদ
সত্য দমনে নবীকে বয়কট

প্রকাশ্য ইসলাম প্রচারের অপরাধে মহানবী ও সাহাবীদের ওপর নেমে আসে অকথ্য জুলুম-নির্যাতন। তৎকালীন আরব নেতারা সত্য দমনে মহানবী (সা.) কেসহ বনু আব্দুল মুত্তালিব এবং বনু হাশেমকে শিয়াবে আবি তালিবে বয়কট করে। ৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে কুরাইশ নেতৃবর্গ মক্কার প্রায় সব গোত্রের সমন্বয়ে চুক্তির মাধ্যমে বয়কট সূচনা করে। সংকীর্ণ গিরি দুর্গের মধ্যে প্রায় ৩ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন মহানবী ও তার দুই সম্প্রদায়। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে ভেস্তে যায় এ বয়কট। মুক্তি পান মহানবীর সঙ্গী সাথীরা। বয়কট চলাকালীন জুলুম-নির্যাতনের চিত্র সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

দাওয়াতের কাজে অনড় : মহানবী (সা.) সত্যের কালিমা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে প্রচার-প্রসার করতে থাকেন। মূর্তিপূজার শিরক থেকে মানুষকে বাধা দিতে লাগলেন। জাহেলিয়াতের আঁধারে আচ্ছন্ন আরবের লোকরা তখন অধৈর্য হয়ে পড়ল । আবু তালেবের কাছে এসে কঠোরভাবে ভাতিজাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলল। প্রয়োজনের যুদ্ধ করার হুংকার দিলো। চিন্তিত আবু তালেব মহানবীর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)বললেন, হে সম্মানিত চাচা! আল্লাহর কসম! আরবের মূর্তিপূজারিরা যদি আমার ডান হাতে সূর্য ও বাম হাতে চন্দ্র এনে দেয়, তবু আমি আল্লাহ কালেমা প্রচার হতে বিরত হব না। আবু তালেব ভাতিজার দৃঢ় প্রত্যয় দেখে সাহসের পরিচয় দিলেন। তিনি দীপ্ত কণ্ঠে বললেন, ঠিক আছে তুমি তোমার কার্যক্রম চালিয়ে যাও। আমি মেঘের মতো ছায়া হয়ে তোমার পাশে আছি। (সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া : ৩৬)।

সম্মিলিত বয়কটের ডাক : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রম কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। আবু জাহেল মহানবীকে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে গেছে চারদিক। তখন কাফের গোষ্ঠী রাগে-ক্ষোভে নিজের চুল ছিঁড়তে লাগল। সাহাবীদের ওপর সীমাহীন জুলুম করতে শুরু করল। নতুন কৌশল হিসেবে মহানবীকে নিয়ে উপহাস-ঠাট্টা, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে লাগল। অবমাননাকার উক্তি দিয়ে তার জীবন অতিষ্ঠ করতে চাইল। কেউ পাগল বলে চেঁচামেচি শুরু করল। কোরআনে এসেছে, তারা বলে, ওহে ওই ব্যক্তি যার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো অবশ্যই পাগল। (সুরা আল হিজর : ৬) কখনো কখনো তারা নবীজিকে জাদুকর এবং মিথ্যা অপবাদও দিতে লাগল। (সুরা সোয়াদ : ৪) কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টাও সফল হলো না। ইসলামের আলো সূর্যের মতো দীপ্তিমান হলো। মানুষ ইসলামের ছায়াতলে মানুষ আসতে লাগল। হজরত ওমর (রা.) এবং হামজা (রা.) মতো মহান ব্যক্তিরা ইসলাম গ্রহণ করল। মক্কার আশপাশে অঞ্চলে ইসলামের প্রভাব ছড়িয়ে যেতে লাগল। বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব যখন সম্মিলিতভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে সাহায্যদানে অঙ্গীকার করল, তখন মুশরিকদের হতবুদ্ধিতা আরো বেড়ে গেল। তারা মুহাসসাব উপত্যকায় খাইফে বনী কিনানাহর ভেতরে বনু হাশিম ও বনু আব্দুল মুত্তালিব গোত্রের সঙ্গে মক্কার অবশিষ্ট কুরাইশগণ এখন থেকে আর কোনো বিয়ে শাদী ও বেচাকেনা না করার সিদ্ধান্ত নিল। স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা কাবা শরিফের ভেতরে ঝুলিয়ে রাখল। (সীরাত ইবনে হিশাম : ৮৮) বিশুদ্ধ বর্ণনামতে এই চুক্তিনামার লেখক ছিল বোগায়েজ বিন আমির বিন হাশিম। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার প্রতি বদ দোয়া করেন। যার ফলে তার হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। (যাদুল মাআদ : ২/ ৪৬)। এই ঘটনার ফলে আবু লাহাব ব্যতীত বনু হাশিম এবং বনু মুত্তালিবের নারী-পুরুষ সব সদস্য আতঙ্কিত হয়ে শিয়াবে আবু তালিব গিরি সংকটে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এটা সংঘটিত হয়েছে নবুওয়াতের সপ্তম বর্ষের মুহররম মাসে (আর রাহীকুল মাখতুম : ১২৮)।

বয়কটের দিনগুলোর রিপোর্ট : ৩ বছর পর্যন্ত শিয়াবে আবু তালেবে বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব লোকজনের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ল। খাদ্যশস্য এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি ও পানীয় সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরিচিত মুখগুলো যেন অপরিচিত হয়ে যায়। মক্কার বাজারে দ্রব্যসামগ্রী যা আসত মুশরিকরা তাড়াহুড়ো করে ক্রয় করে নিত। পণ্যের দামও ব্যবসায়ীরা লাগামহীন বৃদ্ধি করে রাখে। এ কারণে গিরি সংকটে অবরুদ্ধদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ হয়ে পড়ল। খাদ্যের অভাবে তারা গাছের পাতা, চামড়া ইত্যাদি খেতে বাধ্য হলো। কখনো সখনো না খেয়ে থাকতে হতো। উপবাসে শিশু ও নারীরা মর্ম-বিদারক কণ্ঠে ক্রন্দন করতে থাকত। ইসলামের দাওয়াতের আগে মুহাম্মদ (সা.) পুরো আরবে আল আমিন নামে পরিচিত ছিলেন। যেই তিনি এক আল্লাহর প্রতি সবাইকে আহ্বান করলেন, তখন তিনি আরব নেতাদের শত্রুতে পরিণতা হলেন। তিনি নানান কষ্ট সয়েছেন তবুও দাওয়াতের কাজ ছাড়েননি।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত