মানুষ মরণশীল। প্রত্যেক মানুষের জীবন-মরণ আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত এবং প্রত্যেক মানুষ নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত আছে, ‘যখন তাদের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে, তারা এক মুহূর্তও আগপিছ করতে পারবে না।’ (সুরা আরাফ : ৩৪)। কিন্তু হাদিসে বর্ণিত কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে দেন।
হায়াত বাড়ার কয়েকটি অর্থ হতে পারে।
১. আল্লাহ তার কাজকর্মে অধিক বরকত দান করেন, ফলে অল্প সময়ে তার অধিক নেক কাজ সম্পাদন করা সম্ভবপর হয়। ২. তার দ্বারা এমন নেক কাজ করান যে, মৃত্যুর পরও যুগ যুগ ধরে মানুষ তাকে স্মরণ করে। তার সৎকর্মের কারণে মানুষের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকেন বছরের পর বছর। ৩. বাস্তবিকভাকেই তার হায়াত বাড়িয়ে দেন। সেক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালা কর্তৃক হায়াত নির্ধারণ করাটা হবে শর্তযুক্ত। অর্থাৎ, এভাবে হায়াত নির্ধারিত হয় যে, স্বাভাবিকভাবে তার হায়াত ৬০ বছর নির্ধারিত। যদি এসব আমল করে তবে তা বাড়িয়ে ৮০ বছর করা হবে। নিম্নে এ বিষয়ক কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো।
মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা : আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাতাপিতার আনুগত্য করা এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। তাদের সম্মান করা ও খেদমত করা। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেছেন, ‘দোয়া ছাড়া কোনো কিছু ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না এবং মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ছাড়া কোনো কিছু হায়াত বৃদ্ধি করতে পারে না।’ (তিরমিজি : ২১৩৯)।
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা : আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা ইসলামের একটি আবশ্যকীয় বিধান। হাদিসে আত্মীয়তা ছিন্নকারীকে জাহান্নামি ঘোষণা করা হয়েছে। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে রিজিক ও হায়াতে বরকত হয়। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি রিজিকের বরকত চায় এবং হায়াত বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে।’ (বোখারি : ৫৫৫৯)।
প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা : নবীজি (সা.) প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম আচরণ করতেন। কখনো তাদের কষ্ট দিতেন না। নিয়মিত তাদের খোঁজখবর রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখলে, সুন্দর চরিত্র গঠন করলে এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করলে দেশ আবাদ থাকে এবং হায়াত বৃদ্ধি পায়।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৫২৫৯)। আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দিন।
লেখক : আলেম, ছড়াকার ও গল্পকার