ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতিবেশীর সঙ্গে রাসুলের আচরণ

মুফতি দিদার শফিক
প্রতিবেশীর সঙ্গে রাসুলের আচরণ

রাসুল (সা.) প্রতিবেশীর প্রতি কতটা সদয় ও আন্তরিক ছিলেন, তা রাসুলের হাদিস পাঠ করলেই সুস্পষ্ট বুঝা যায়। রাসুলের সিরাত পাঠ করলে আরো স্পষ্ট হয় তাঁর অনুপম চরিত্র মাধুর্য। প্রতিবেশীর সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, কেমন আচরণ করা হলে প্রতিবেশীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে এবং ভালোবাসা সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে, সেসব কথা হাদিসে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। যদি হাদিসের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করা হয়, তাহলে বোঝা যায় রাসুল (সা.) প্রতিবেশীর প্রতি কতটা দরদি ও মানবিক ছিলেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি মোমেন নয়, যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (আল আদাবুল মুফরাদ : ১১২)।

রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা হাদিয়া আদান-প্রদান করো। এর মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। (আল আদাবুল মুফরাদ : ৫৯৪)। রাসুল (সা.) হজরত আবু যর (রা.) কে বললেন, হে আবু যর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো। (মুসলিম : ২৬২৫)। রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন প্রথম বাদী ও বিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী। (মুসনাদে আহমাদ : ১৭৩৭২)।

প্রতিবেশীর গুরুত্ব : আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা ইবাদত করো এবং কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক করো না। এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা নিসা : ৩৬)।

রাসুল (সা.) বলেছেন, জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি তাগিদ দিয়েছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে মিরাছ (মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি) এর অংশীদার বানিয়ে দেয়া হবে। বোখারি : ৬০১৪)। বর্তমান সময়ে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। অথচ কাছের বা দূরের আত্মীয় ও প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করা, তাদের কষ্ট না দেয়া, তাদের খোঁজখবর রাখা এবং বিভিন্ন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করাকে ঈমানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে। (মুসলিম : ১৮৫)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (মুসলিম : ১৮৩)।

উত্তম প্রতিবেশী : রাসুল (সা.) বলেছেন, যে নিজ প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে ভালো, সেই সর্বোত্তম প্রতিবেশী। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৫৬৬)। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা মন্দ প্রতিবেশী থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। (সুনানে নাসায়ী : ৫৫০২)। দুই প্রতিবেশী নারীর ঘটনা হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি এসে রাসুল (সা.) কে বলল, এক নারীর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ, সে বেশি বেশি (নফল) নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দুই হাতে দান করে। কিন্তু মুখের কথায় নিজ প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। (তার অবস্থা কী হবে?)। রাসুল (সা.) বললেন, সে জাহান্নামে যাবে। আরেক নারী বেশি (নফল) নামাজও পড়ে না, খুব বেশি রোজাও রাখে না আবার তেমন দান সদকাও করে না; সামান্য দুয়েক টুকরা পনির দান করে। তবে সে মুখের কথায় প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না (এই নারীর ব্যাপারে কী বলেন?)। রাসুল (সা.) বললেন, সে জান্নাতি। (বোখারি : ১১৯)। হাদিসের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, প্রতিবেশীর হক অত্যাধিক। তাদের সঙ্গে সদাচরণ মোমেনের বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া সমাজকে সুসংগঠিত ও সুন্দর রাখার জন্যও প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্প্রীতি সদ্ভাব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এতে সমাজ সুন্দর ও শান্তিময় হয় এবং পার্থিব জীবনের পাশাপাশি পরকালীন জীবনেও অনেক লাভবান হওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস ও মিডিয়াকর্মী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত