ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সমাজ ও রাষ্ট্রে ইমামের প্রভাব

সমাজ ও রাষ্ট্রে ইমামের প্রভাব

ইমাম। সমাজের আইডল। সমাজের নেতা। মানুষের ভালোবাসা। সমাজের সুখ-দুঃখের সাথী। একজন ইমাম সমাজজীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলে যাচ্ছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে কী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন সেসব নিয়ে আলোকিত বাংলাদেশকে তথ্য জানিয়েছেন রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ তিন মসজিদের ইমাম। তাদের সঙ্গে কথা বলে সাজিয়েছেন- হাসান আল মাহমুদ।

ইমামের কাজের সুফল গোটা দেশ ভোগ করে

মুফতি মুহিউদ্দিন কাশেম

পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা

সমাজে ইমামদের দায়িত্ব-ভূমিকা অনেক বেশি। এর কারণ হলো রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘কেয়ামতের ময়দানে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অধীনস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ তো, অধীনস্থ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। বাবার অধীনে ছেলে, সেও একজন অধীনস্থ। এরকমভাবে কর্মচারীসহ নানাভাবেই হয়ে থাকে অধিনস্থ। বিশেষ করে যারা ইমাম রয়েছেন, তাদের অধিনস্থ সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ। তাই, তাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে সমাজের যতো অন্যায়-অবিচার, পাপাচার আছে, সবগুলোকে সুন্দরভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরে দিকনির্দেশনা দেওয়া একজন ইমামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এতে কোনো ব্যক্তির কষ্ট পাওয়া উচিত নয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের সমাজে ইমামগণ সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রোষানলের স্বীকার হচ্ছেন। অনেকের ইমামতিও ইস্তফা দিতে হয়। এটা খুবই দুঃখজনক। সমাজের উচিত ইমামের মূল্যায়ন করা। একজন ইমামকে যদি সঠিক ও বিশুদ্ধ তরিকায় নববী কাজ করতে দেওয়ার সুুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে এর সুফল শুধু সমাজই নয়, বরং গোটা দেশ ভোগ করে।

এজন্য বাস্তবজীবনে দেখা যায়, যে মহল¬ায় ইমামকে স্বাধীনভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়, আর ইমামও সঠিক আক্বিদায় নববী পদ্ধতিতে কাজ করেন, সে মহল¬া অন্যায়, নাচগান, শিরিক-বিদাত মুক্ত থাকে। আর যে মহল¬ার ইমামকে চুপ করে থাকতে দেয়া হয়, সে মহল্লা অন্যায়, সুদ-ঘুষ, শিরিক-বিদআতের আখড়া বনে যায়।

অপকর্ম দূরীকরণে ইমামদের ভূমিকা অনন্য

মুফতি আজিজুর রহমান মাদানী

ইমাম, বায়তুল মা’মূর জামে মসজিদ, ফলফট্টি মিরপুর-১০, ঢাকা

আমাদের সমাজের ইমামের জায়গাটায় ছিলেন দোজাহানের বাদশাহ সৃষ্টিকূলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হজরত মোহাম্মদ (সা.)। তিনি যত দিন জীবিত ছিলেন, ততোদিন তিনি আমানত হিসাবে পালন করে গেছেন। তিনি শুধু মসজিদের নয়, বরং গোটা সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থার ইমাম ছিলেন। ইমামের মর্যাদা হিসেবে রাসুল (সা.)-এর যে অবস্থান ছিল, তার প্রতিনিধি হিসেবে সমাজে একজন ইমামের মর্যাদাও কম নয়। কারণ, একজন ইমাম রাসুল (সা.)-এর প্রতিনিধি। তাই তার সম্মানও মানুষের কাছে অনেক বেশি।

সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আমাদের ইমামগণ আলহামদুলিল্লাহ নানা ভূমিকা ও প্রভাব রেখে যাচ্ছেন। ইমামগণ মানুষের অন্তর থেকে বাতিল আকিদা-চিন্তা দূর করে সঠিক বিশ্বাস-আকিদা প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন। সমাজের মসজিদকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে শৃঙ্খলাময় জীবনযাপনে অভ্যস্থ করে তোলেন। চুরি-ডাকতি, সুদ-ঘুষসহ নানা অপকর্ম দূরীকরণে ইমামগণ সমাজ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। অনেক মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প শোনে সে অনুযায়ী ইসলামিক ফর্মূলা দিচ্ছেন। দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ান। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও একজন ইমামকে দেখা যায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। সব মানুষের ভালোবাসায় তিনি হয়ে ওঠেন অনন্য।

আধ্যাত্মিক পরিবর্তনে ইমামের প্রভাব অনস্বীকার্য

হাফেজ মাওলানা আব্দুল হাফিজ মারূফ

ইমাম, মসজিদুল তাকওয়া, ধানমন্ডি, ঢাকা

একজন ইমাম হচ্ছেন এলাকার প্রতিনিধি ও নেতা। সম্মানিত ও মান্যবর। মানুষের সত্যিকার ভালোবাসার পাত্র। মানুষ ইমাম সাহেবকে মন থেকেই ভালোবাসেন কোনো রকমের স্বার্থ ছাড়া। আমি একজন ইমাম হিসেবে তেমনই দেখে আসছি।

ইমাম যেহেতু সমাজের প্রধিনিধত্ব করেন, তাই তিনি যে ধ্যান-ধারণা লালন করেন কিংবা ইমাম যে মাসলাকের হন, মতাদর্শের অধিকারী হন, ধীরে ধীরে দেখা যায় সে এলাকার মানুষও তাদের ভেতরে সেসব ধারন করা শুরু করে। ইমামকে তারা ফলো করে। এজন্য একজন ইমাম যদি সঠিক বিশদ্ধ চিন্তার অধিকারী হন, তাহলে তাকে অনুসরণকারী মুসল্লিরাও বিশুদ্ধ চিন্তা পান। আর যদি একজন ইমাম বাতিল চিন্তার অধিকারী হন, তাহলে তাকে অনুসরণকারীরা গুমরাহ হয়। এজন্য সমাজজীবনে ইমামদের প্রভাব অনস্বীকার্য। একজন ইমাম ওই এলাকার মানুুষের অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করেন। আত্মা উন্নয়ন করার চেষ্টা করেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, আত্মা উন্নয়ন করতে পারলে সমাজেরও উন্নয়ন ঘটবে। যদিও মুসল্লিরা ইমামের সব কথাকে বাস্তবায়ন করতে নাও পারেন, কিন্তু ধর্মের বিশ্বাসটাকে তারা লালন করেন- হ্যাঁ এটাতো স্বাধীনভাবে করা উচিত। রাত-দিনের মেহনতের ফসলে সমাজের অনেকেরই আত্মোন্নয়ন হয়। এই আধ্যাত্মিক পরিবর্তন সমাজজীবনে একজন ইমামের প্রভাব অনস্বীকার্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত