মাথার ওপর খুঁটিহীন নীল আকাশ! আকাশের কোলে ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়ায় নানা জাতের পাখি! দিনের শুরুতে পুব আকাশে লাল টুকটুকে সূর্য ওঠে। সূর্যের দেখা পেয়ে ঘাসের ডগার বিন্দু-বিন্দু শিশির কোথায় যে হারিয়ে যায়! আর দেখা যায় না। রোজ রোজ ভোর-বিহানে গাছের ডালে দলবেঁধে পাখিরা কিচির-মিচির করে। সবুজ মাঠে ছুটে বেড়ায় হালের গরু। পালের পশু। এসব দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে সূর্যটা মাথার ওপর ওঠে। সূর্যের তেজ বাড়ে। সূর্যের আলোয় পৃথিবী আলোকিত হয়। যখন আকাশে সূর্য ওঠে। তখন পৃথিবীতে দিন আসে। দিনের বেলা মানুষজন নিজ নিজ কাজে যায়। ব্যস্ত সময় কাটায়। সারাদিন গা-গতরে খেটে বা মেধা খরচ করে মানুষ নিজ নিজ কাজ আঞ্জাম দেয়। এক সময় সূর্যটা পশ্চিম আকাশে গিয়ে পানিতে ডুব দেওয়ার মতো ডুবে যায়। সূর্য ডুবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে অন্ধকার নামে। রাত হয়, চাঁদ ওঠে। মধুর ও মিষ্টি আলো ছড়ায়। মিটমিট করে তারা জ্বলে। রোজ রোজ পৃথিবীতে দিন ও রাত আসে। আলো ও অন্ধকার নামে। এসব দেখে ছোট্ট মনে কত কি প্রশ্ন জাগে! সূর্য কীভাবে পৃথিবীকে আলো দেয়? সে আলো কোত্থেকে আসে? সূর্যের সঙ্গে কেন দিন আসে? সূর্য ডুবে গেলে কেন রাত হয়? দিনে কেন মানুষ কাজ করে? রাতে কেন ঘুমায়? আকাশের রং কেন নীল? ঘাসের রং কেন সবুজ? গাভির দুধ কেন সাদা? গাভি তো সবুজ ঘাস খায়! সবুজ ঘাস খেলে গাভি প্রচুর দুধ দেয়। সবুজ ঘাস থেকে সাদা দুধ কীভাবে আসে? দুধের রং তো সবুজও হতে পারত? সাদা হলো কেন? এসব পরিবর্তন কেন হয়? কে করে? দিন-রাতের পরিবর্তন কে করে? হ্যাঁ,সেকথাই বলছি, দিন-রাতের পরিবর্তন যিনি করেন, সবুজ ঘাস থেকে যিনি সাদা দুধ তৈরি করেন- তিনিই আল্লাহ। তিনিই একমাত্র উপাস্য। ইবাদতের উপযুক্ত। তার ইশারায়ই চাঁদ-সুরুজ, তারা-নক্ষত্র পৃথিবীকে আলোকিত করে। চাঁদ-সুরুজ, তারা-নক্ষত্র নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি। কেউ একজন সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই আল্লাহ। গাছ-পালা, পশু-পাখি, ফল-মূল, পাহাড়-পর্বত সাগর-নদী, মানব-দানব, জিন-পরিও নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি। কেউ একজন এসব সৃষ্টি করেছেন। যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন, তিনি সাত আসমান, সাত জমিনও সৃষ্টি করেছেন। আসমান ও জমিনের মাঝে যা কিছু আছে সেসব কিছুও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনি গোটা জগতের সৃষ্টিকর্তা। পৃথিবীর মানুষ মেধা বা বুদ্ধি ব্যবহার করে অনেক কিছু তৈরি করে। বানায় বা আবিষ্কার করে। নানান জিনিস তৈরি করতে মানুষের মেধা ও বুদ্ধি লাগে। বিভিন্ন জিনিসের দরকার হয়। মানুষ বা প্রাণীর মেধা-বুদ্ধিও কেউ একজন সৃষ্টি করেছেন। জগতের কোনও জড়বস্ত বা কোনো একটি পদার্থও নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি। কেউ একজন সৃষ্টি করেছেন। যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন তার গুণবাচক নাম খালেক। আল্লাহ খালেক আর বাকি সব মাখলুক। খালেক মানে সৃষ্টিকর্তা। মাখলুক মানে সৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তাকে আমাদের বাংলা ভাষায় স্রষ্টাও বলা হয়। খালেক; সৃষ্টিকর্তা বা স্রষ্টা হওয়া বা কোনো কিছু সৃষ্টি করা এক পবিত্র সত্তার একটি পূর্ণাঙ্গ গুণ। এমন আরো অনেক পূর্ণাঙ্গ গুণ যার মাঝে আছে, তাকে আল্লাহ বলে। রব, রাজ্জাক, মালেক, সামী’, বাছির, আলিম, খাবির এগুলো আল্লাহর গুণবাচক নাম। এমন আরো অনেক নাম আছে তার। ‘আল্লাহ’ ছাড়া আরো ৯৯টি নাম আছে তার। এ নামগুলোকে আসমাউল হুসনা বলে।
গোটা জগতের সব প্রশংসার উপযুক্ত যিনি এবং সারা পৃথিবীর সবার ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত সত্তা যিনি, তিনিইি হলেন আল্লাহ। আল্লাহ এক পবিত্র সত্তা। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। না গুণে, না ইবাদতে। তিনি সবকিছুর আগে ছিলেন। সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও একমাত্র তিনিই থাকবেন। তার স্ত্রী নেই। ছেলে বা মেয়ে নেই। তিনি কাউকে জন্ম দেননি। তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তার সমান কেউ নেই। আল্লাহর ঘুম-ঘুম ভাব হয় না। তিনি ঘুমান না। তার মৃত্যু হবে না। তিনি সব সময়ই জীবিত থাকবেন। তিনি দেখা-অদেখা সব খবর জানেন। সব কিছু দেখেন। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সবকিছু তিনি জানেন। মানুষের মনের খবরও তিনি জানেন।
আল্লাহ বিধানদাতা। আল্লাহর আদেশেই সবকিছু হয়। আল্লাহ নেক কাজের পুরস্কারদাতা। বদ কাজের শাস্তিদাতা। তিনি হাশরের মাঠে সবার হিসাব নেবেন। আল্লাহ নেককার লোকদের চির শান্তিতে থাকার জায়গা জান্নাত দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল। বেহেশতি লোকেরা জান্নাতে নিজ চোখে আল্লাহকে দেখবে।
আল্লাহতায়ালা কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে বলেন, ‘হও’ সঙ্গে-সঙ্গে সেটি হয়ে যায়। আল্লাহর ইরাদা ও ইচ্ছায় সবকিছু হয়। তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
লেখক : মুহাদ্দিস ও মিডিয়াকর্মী