ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কবর জিয়ারতের নিয়মকানুন

শরিফ আহমাদ
কবর জিয়ারতের নিয়মকানুন

মৃত্যু আল্লাহর এক অঘোম বিধান। মৃত্যুকে অস্বীকার করা কিংবা মৃত্যু থেকে পালাবার কোনো পথ নেই। মহান আল্লাহ বলেন, প্রত্যক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সুরা আনকাবুত : ৫৭) মৃত আত্মীয়-স্বজনদের জন্য জীবিতদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- গত-হওয়া আপনজনের কবর জিয়ারত করা। এ জন্য কবর জিয়ারতের গুরুত্ব, উপকারিতা ও নিয়মকানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা সবার জন্য জরুরি।

কবর জিয়ারতে আখেরাতের স্মরণ : দৈনিক মৃত্যুকে স্মরণ করার কারণে মানুষের গোনাহ কমে যায়। আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। হাদিসে মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বেশি করে স্বাদ বিনাশকারী মৃত্যুকে স্মরণ কর। (তিরমিজি : ২৩০৭)। কবর জিয়ারতে হৃদয় বিগলিত হয়। চোখের কোণে জমে বিগলিত হৃদয়ের তপ্তজল। রাসুল (সা.) বলেন, আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা, তা দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ : ১৫৭১)।

কবর জিয়ারতের উপকারিতা : কবর জিয়ারতের অনেক উপকারিতা আছে। জিয়ারতকারী সওয়াব লাভ করে। এর মাধ্যমে জীবিত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ব্যক্তিজীবনে পরকালের প্রস্তুতিগ্রহণের তাড়া অনুভব সদা জাগ্রত থাকে। কবরবাসীদের হক আদায় করা যায়। এগুলো কবর জিয়ারত করার অন্যতম উপকারিতা। হজরত আবু উসাইদ মালিক ইবনে রাবিয়া সায়িদী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করে, ইয়া রাসুলুল্লাহ! পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার কোনো সুযোগ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ? তুমি তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করবে। তাদের অসিয়ত পুরা করবে। তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তা বজায় রাখবে এবং তাদের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। (আবু দাউদ : ৫০৫২ )।

কবর জিয়ারতের দোয়া : কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গিয়ে প্রথমে কবরবাসীদের উদ্দেশ্যে সালাম দিতে হয়। সালাম দেওয়া সংক্রান্ত তিনটি হাদিস রয়েছে। সহজ ও ছোট্ট দোয়া দুটি হলো এক. হজরত আব্দল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়াটি পাঠ করেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার। (তিরমিজি : ১০৫৩)। দুই. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মুয়মিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। (মুসলিম : ২৪৯)।

কবর জিয়ারতের পদ্ধতি : হাদিসে কবর জিয়ারতের নির্ধারিত বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেই। নির্ধারিত কোনো সুরা বা দরুদ পাঠের কথাও আসেনি। তবে এ ক্ষেত্রে সুরা মুলক তেলাওয়াত করা উত্তম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। একবার এক সাহাবি একটি কবরের উপর তার তাঁবু স্থাপন করেন। তিনি ধারণা করতে পারেননি যে এটি একটি কবর। হঠাৎ তিনি অনুভব করেন যে কবরে একজন লোক সুরা মুলক তেলাওয়াত করছেন। অবশেষে তিনি তা পাঠ শেষ করেন। তিনি পরে নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি এক স্থানে আমার তাঁবু ফেলি। আমার ধারণা ছিল না মে এটি একটি কবর। হঠাৎ অনুভব করি একজন লোক সুরা মুলক তেলাওয়াত করে খতম করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটি হলো প্রতিরোধক। এটি হলো মুক্তিদায়ক। এটি কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়। এটি কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯০) এ ছাড়াও সুরা ইয়াসিন, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস এবং কয়েকবার দরুদ পাঠ করে ইসালে সাওয়াব উত্তম।

কবর জিয়ারতের সাবধানতা : বর্তমান সমাজে কবর নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিলক্ষিত হয়। দেশের আনাচে-কানাচে প্রচলিত মাজারগুলো? এক জমজমাট ব্যবসা। কবরকে লক্ষ্য করে চারপাশে তাওয়াফ করা, কবরে শায়িত ব্যক্তিকে নাজাতের উসিলা মনে করা, নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য আবেদন করা এবং সিজদা করা সবই কুফর ও শিরক। ঈমান বিধ্বংসী এসব কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কোনো কামেল-অলি ব্যক্তি তার ভক্তদের কখনোই এ আদেশ করেন না যে, তার মৃত্যুর পর তার কবরকে তারা যেন সিজদা করে। ফুল দিয়ে সাজায়। এগুলো ধর্ম সম্পর্কে অবোঝ সাধারণ মানুষের বাড়াবাড়ি। মনে রাখতে হবে, সিজদার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহতায়ালা। অলিরা আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি। সম্মানের পাত্র। তবে সিজদার উপযুক্ত নন।

লেখক : আলেম ও কবি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত