ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মায়ের সেবায় সন্তানের সুখ

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ খান
মায়ের সেবায় সন্তানের সুখ

মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত : রাসুল (সা.) এক সাহাবিকে জিহাদে যাওয়ার পরিবর্তে মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকার পরামর্শ দেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একদিন মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?’ জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, তোমার মা আছেন? তিনি বলেন, আছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো। কেননা, তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’ (সুনানে নাসায়ি : ৩১০৬)

‘মা’ সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার : ইসলামে মায়ের মর্যাদা অনন্য। পিতামাতাকে সামান্য কষ্ট দিয়ে ‘উফ’ শব্দ উচ্চারণেও সন্তানকে সতর্ককরা হয়েছে। কোরআনে কারীমে আল্লাহ বলেন : ‘এবং (আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন) পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ বল না এবং তাদের ধমক দিও না; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বল’। (সুরাবানী ইসরাইল আয়াত : ২৩)।মায়ের সঙ্গে সর্বদা সদাচারণ করতে হবে। কখনোই কটু ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। কারণ হাদিসের ভাষ্যে তিনিই সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার। হাদিসের মধ্যে এমনটিই ইরশাদ হচ্ছে, একবার এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহারের বেশি হকদার?’ তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বলেন, ‘তোমার বাবা।’ (মুসলিম : ৪৫৮০)।

অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা : ইসলামি শরিয়তে সন্তানকে দুধ পান করানো ও তাকে লালন-পালন করা মায়ের দায়িত্ব নয়। তবে এটা তার নৈতিকতা ও সর্বোচ্চ অনুগ্রহের প্রকাশ্যরূপ। তাই আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে তার ও পিতামাতার (বিশেষত মায়ের) প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে বলেন : ‘আমি তো মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভেধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) এবং তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা লুকমান : ১৪)। মায়ের প্রতি সর্বদা থাকতে হবে কৃতজ্ঞ। যদি তিনি কখনো খারাপ আচরণ করেনও, তবুও সংবরণ করতে হবে নিজেকে। পরিচয় দিতে হবে আখলাকে হাসানার। বৃদ্ধকালে মায়ের সেবা শুশ্রষা করলে পাওয়া যায় কবুল হজ্বের সওয়াব। রাসুল (সা.) হাদিসে বলেন ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান (বৃদ্ধকালে) নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহতায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (সুনানে বায়হাকি : ৪২১)।

মায়ের সেবায় সফলতা : উয়াইস আল কারনি ও বায়জিদ বোস্তামি (রহ.) উভয়ে সর্বদা মায়ের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। মায়ের দোয়ায় অর্জন করেছেন যুগের উপমাও। উয়াইস (রহ.) ছিলেন ইয়েমেনের অধিবাসী। তিনি সর্বদা বৃদ্ধ মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। রাসুলের যুগের হওয়া সত্ত্বেও সাহাবী হতে পারেননি। তবে নবীর প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। রাসুল (সা.) তাকে ‘শ্রেষ্ঠ তাবেয়ি’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। সাহাবায়ে-কেরামকে তার থেকে দোয়া নেওয়ার জন্যও বলেছেন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘আমি মহানবী (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘অবশ্যই তাবেঈনদের মধ্যে সে লোক শ্রেষ্ঠ যে ‘উয়াইস’ নামে খ্যাত। তার একমাত্র মা আছেন এবং তার কুষ্ঠরোগ হয়েছিল। তোমরা তার কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে’। (মুসলিম : ৬৩৮৫)। মাকে হেলা নয়, সর্বোচ্চ সম্মানপ্রদর্শন ও সেবা করা সন্তানের কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, মায়ের দোয়ায় সন্তান দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হয়।

মায়ের অবাধ্যতার শাস্তি : শরয়ি নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বদা মায়ের সেবা যত্ন করতে হবে। কখনোই অবাধ্য হওয়া যাবে না। তার অবাধ্যতা সন্তানের জন্য দুর্ভোগ, হতে পারে জান্নাতে প্রবেশের বাঁধা। হাদিসে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরাইরা (রা.) বলেন একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা!’ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মাতাপিতা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (মুসলিম : ৬২৭৯)। অন্য আরেক হাদিসে মায়ের অবাধ্য হওয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহতায়ালা মায়ের অবাধ্য হওয়াকে তোমাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম : ৪৫৮০)।

লেখক : শিক্ষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত