শীতকালে নামাজের বিধান
শরিফ আহমাদ
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শীতকাল আল্লাহর বিশেষ একটি নেয়ামত। রাত লম্বা আর দিন ছোট হওয়ার কারণে বিভিন্ন ইবাদতের সুযোগ তৈরি হয়। এ জন্য হাদিসে শীতকালকে ইবাদতের বসন্ত বলা হয়েছে। শীতকালে নামাজ ও আনুষঙ্গিক বিধান নিয়ে আলোচনা করা হলো।
শীতকালে অজুর সওয়াব : নামাজের জন্য অজু পূর্বশর্ত। কনকনে শীতে অজু করা ভীষণ কষ্টকর। শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে অজু করে মোমিনগণ। লাভ করে বহুগুণ সওয়াব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের এমন (কাজের) কথা বলব না, যা দ্বারা আল্লাহপাক পাপরাশি দূর করে দিবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দিবেন। সাহাবীগণ আরজ করলেন, হ্যাঁ অবশ্যই ইয়া রাসুলুল্লাহ। তিনি বললেন, তা হলো অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে অজু করা। মসজিদে আসার জন্য বেশি পদচারণা এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। জেনে রাখ এটাই হলো রিবাত। অর্থাৎ নিজেকে আটকে রাখা ও শয়তানের মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত রাখা। (মুসলিম : ৪৮০)।
চামড়ার মোজায় মাসেহ করা : আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। সহজে পবিত্রতা হাসিলের পদ্ধতি শিখিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না। (সুরা বাকারা : ১৮৫)। শীতের মৌসুমে অজু সহজভাবে করার জন্য পা ধৌত করার বিকল্প হিসেবে চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করার বিধান দেওয়া হয়েছে। আলী (রা.) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সা.) মোজার ওপর মাসেহের মেয়াদ মুকিমের জন্য একদিন এক রাত এবং মুসাফিরের জন্য ৩ দিন ৩ রাত নির্ধারণ করেছেন। (মুসলিম : ২৭৬)।
শীতকালে নামাজের বিধান : মহান আল্লাহ নামাজকে সময়ের সঙ্গে খাস করে দিয়েছেন। প্রত্যেক নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয়ই মোমিনদের ওপর নামাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরজ করা হয়েছে। (সুরা নিসা : ১০৩)। শীতকালে নামাজ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করতে হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) প্রচণ্ড শীতের প্রথম ওয়াক্তেই নামাজ আদায় করতেন। আর প্রখর গরমের সময় ঠান্ডা করে (বিলম্বে) নামাজ আদায় করতেন অর্থাৎ জুমার নামাজ। (বোখারি : ৮৬০)।
নামাজ আদায়কালে নাক-মুখ না ঢাকা : শীতকালে ফজরের ওয়াক্তে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে। গরম কাপড় গায় জড়িয়ে নাক মুখ ঢেকে নামাজিরা মসজিদে আসে। তখন নাক মুখ খোলা রেখে নামাজ পড়তে হয়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কোনো ব্যক্তিকে নামাজে থাকাকালীন তার মুখ ঢাকতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ : ৯৬৬)।
নামাজে চাদর ব্যবহারে সতর্কতা : শীতকালে শাল বা রুমাল ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বারংবার শাল খুলে গিয়ে আমলে কাছির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা নামাজ ভঙ্গের একটি কারণ। নামাজে ছোট রুমাল কাঁধে ঝুলিয়ে রাখাও নিষেধ।
উবাদা ওয়ালীদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলে তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কোনো এক যুদ্ধে যাই। তিনি নামাজ পড়ার জন্য দণ্ডায়মান হন। এ সময় আমার গায়ে একটি ছোট চাদর ছিল। আমি তা আমার কাঁধের দুই পাশে রাখার জন্য চেষ্টা করি। কিন্তু তা ছোট থাকায় কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছেনি। আমার চাদরের লম্বা আঁচল ছিল। আমি সামান্য নত হয়ে ওই আঁচলদ্বয় কাঁধের ওপর এমনভাবে বেঁধে দেই, যাতে তা সরে না পড়তে পারে। অতঃপর এ অবস্থায় আমি রাসুলের বাম পাশে গিয়ে নামাজে দাঁড়াই। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তার ডান পাশে দাঁড় করান। এ সময় ইবনে সাখরা (রহ.) এসে তার বাম পাশে দাঁড়ান।
অতঃপর তিনি নিজের দুই হাত দিয়ে আমাদের উভয়কে ধরে তার পেছনে দাঁড় করান। অতঃপর নামাজান্তে রাসুল (সা.) বলেন, হে জাবের! আমি বলি লাব্বাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বলেন, যখন তোমার চাদর বড় হবে তখন তা তুমি তোমার কাঁধে দুই পাশে জড়িয়ে রাখবে। আর যখন তা ছোট হবে, তখন তা কোমরের সঙ্গে শক্তভাবে বেঁধে রাখবে। (আবু দাউদ : ৬৩৪)। ওলামায়ে কেরাম বলেন, চাদর বা রুমাল কাঁধের দুই পাশে ঝুলিয়ে দিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ।
শীতকালে ফজর ও আসরের নামাজ : ফজর ও আসরের নামাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে এই দুটি নামাজ আদায় করা খুবই কষ্টসাধ্য। আসরের নামাজ সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা নামাজগুলোর প্রতি পুরোপুরি যত্নবান থেক এবং বিশেষভাবে মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি। (সুরা বাকারা : ২৩৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আসরের) নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে। (বোখারি : ৫৪৭)।
নামাজের ফজিলত : শীতকালে অনেক গাছের পাতা ঝরে যায়। কোনো কোনো গাছে একটি পাতাও অবশিষ্ট থাকে না। তদ্রূপ ইখলাছের সঙ্গে মোমিন বান্দার নামাজ আদায় ছোট ছোট গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়। আবু জার গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম (সা.) একবার শীতকালে বাইরে তাসরিফ আনলেন। তখন গাছ থেকে পাতা ঝরার মৌসুম ছিল। রাসুল (সা.) গাছের একটা ডাল হাত দিয়ে ধরলেন। ফলে তার পাতা আরো বেশি করে ঝরতে লাগল। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবু জার! আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি হাজির আছি। তখন রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন, মুসলমান বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ আদায় করে, তখন তার থেকে গোনাহগুলো ঝরে পড়ে, যেমন এই গাছের পাতা ঝরে পড়ছে। (মুসনাদে আহমদ : ২১৪৪৮)।
লেখক : কবি ও শিক্ষক