বিয়ে অর্থোপার্জনের মাধ্যম নয়

ইসমাঈল সিদ্দিকী

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিবাহ হলো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং একটি পবিত্র বন্ধন। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে অন্যের কাছে উপকৃত ও পরিতৃপ্ত হওয়ার মাধ্যম। এটি ব্যবসা বা অর্থোপার্জনের মাধ্যম নয়। তেমনি বর-কনেও ব্যবসার পণ্য নয়,যাদেরকে বিক্রি করে পয়সা কামানো হবে। অতএব, একটি হালাল বন্ধনকে হারাম অর্থোপার্জনের মাধ্যম বানানো কোনো সুস্থ বিবেকবান ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। যৌতুক দাবির ফলে দাম্পত্য সম্পর্কের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। পরিবারে শান্তির বদলে অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকে। ঝগড়া-বিবাদ গালিগালাজ এমনকি মারধর পর্যন্ত গড়ায়। অনেক ফ্যামিলি আছে, যারা দিন আনে দিন খায়, অনেক টানাপোড়নে সংসার চালায়, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এরকম ফ্যামিলির অভিভাবকরা মেয়ের যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে করতে এক সময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। তবুও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেদের সর্বোচ্চটা বিলিয়ে দেয়। তবে হ্যাঁ, কন্যার বিবাহের সময় বা রুখসতির সময় পিতা নিজ সাধ্য অনুসারে তাকে যে গহনাগাটি বা সামানপত্র শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উপহার দেয়, যাকে আরবিতে বলে ‘জাহায’, এটি বৈধ এবং প্রচলিত যৌতুকের সঙ্গে-এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তবে শর্ত হলো, তা হতে হবে কোনো প্রকার সামাজিক চাপ ছাড়া,স্বতঃস্ফূর্ত ও সন্তুষ্টচিত্তে। নবি কারিম (সা.) ও নিজ কন্যা ফাতিমার বিয়ের সময় উপঢৌকন হিসেবে একটি পশম-নির্মিত সাদা রংয়ের চাদর, একটি ইযখির ঘাস-নির্মিত বালিশ এবং চর্ম নির্মিত পানির মশক দিয়েছিলেন। (ইবনে মাজাহ : ৬৪৩)।

যৌতুক প্রথার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কারণ জড়িত। এসব কারণের মধ্যে সামাজিক কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস, সামাজিক প্রতিপত্তি ও প্রতিষ্ঠা লাভের মোহ, দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের বাসনা, পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের নিম্ন আর্থসামাজিক মর্যাদা ও অসহায়ত্ব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কারণ বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করে থাকেন। এসব জাহেলি সংস্কৃতি নির্দিষ্ট কোনো সময় বা স্থানের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, বরং তা হচ্ছে হৃদয়, আত্মা, চিন্তা, বুদ্ধি ও জীবনের একটা বিশেষ রূপ ও প্রকৃতি, যা তখনই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যখন মানবজীবনের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত মৌলিক মূল্যবোধগুলোর পতন ঘটে এবং ওইসব কৃত্রিম মূল্যবোধ তার স্থলবর্তী হয় যার ভিত্তি হচ্ছে লোভ-লালসা, ভোগবাদ ও বস্তুবাদ। ১৪০০ বছর আগের মতো আজো বিশ্বমানবতার উদ্দেশে মুসলিম উম্মাহর প্রতি একই দাওয়াত, একই পয়গাম, অর্থাৎ হে মানুষ, এক আল্লাহকে বিশ্বাস করো। আল্লাহর রাসুলের নিঃশর্ত অনুসরণ করো। আখেরাত ও বিচারদিবসে বিশ্বাস করো। লোভ-লালসা পরিত্যাগ করো। মানুষের সম্পদ অন্যায় আর অন্যায্যভাবে নিজায়ত্তে আনার মানসিকতা পরিহার করো। তবেই এসব অভিশপ্ত অপসংস্কৃতি আর কুসংস্কার সমাজ থেকে চিরতরে বিদায় নিবে। সঙ্গে সঙ্গে নারীকে পণ্যদ্রব্য হিসেবে বিবেচনা না করে নিজেদের অর্ধাঙ্গী হিসেবে সঠিক মর্যাদা দিতে হবে সমাজের প্রত্যেক পুরুষকে। পুরুষদের অর্থলোভ ত্যাগ করে নারীর গুণ ও গৌরবের তাৎপর্য উপলব্ধি করে সমাজে নারীর শরয়িগত প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যৌতুক দেওয়া ও নেওয়াকে ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে সবাইকে বিবেচনা করতে হবে।

লেখক : তরুণ আলেম