ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধর্ম প্রচারকের গুণাবলি

শরিফ আহমাদ
ধর্ম প্রচারকের গুণাবলি

ধর্ম প্রচার করা একটি শ্রেষ্ঠ কাজ। আল্লাহপাক বলেন, আর তার কথার চেয়ে কে উত্তম, যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে। (সুরা হা মীম সাজদা : ৩৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার কথা অন্যদের কাছে পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়। (বোখারি : ৩২১৫) কোরআন হাদিসের বক্তব্য অনুধাবন করে অনেক আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান দ্বীন প্রচারের কাজ করেন। অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেন। ধর্ম প্রচারকের কিছু গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ইখলাস ও একনিষ্ঠতা : প্রথমত একজন ধর্ম প্রচারককে সহি নিয়তে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করতে হয়। ইখলাসের সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে পরিশ্রম করতে হয়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা থাকতে হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, তাদের কেবল এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করবে এবং নামাজ কায়েম করবে ও জাকাত প্রদান করবে। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম?। (সুরা বাইয়্যিনা : ৫)।

সচেতন আলেম হওয়া : একজন ধর্ম প্রচারকের ইসলামের মৌলিক বিষয়ের জ্ঞান থাকতে হয়। দক্ষ ও সচেতন আলেম হতে হয়। অন্তত আলেমের সান্নিধ্য প্রাপ্ত হতে হয়। গবেষক আলেমদের কিতাব পত্র ঘাটতে হয়। তবেই সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। ওদের প্রশ্নোত্তর দেওয়া যায়। এবং নিজের আমলের সঠিক চর্চা হয়। জ্ঞানী মানুষের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, বল যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা জুমার : ৯)।

হেকমতের সঙ্গে কাজ করা : সাধারণ মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিবেক এক নয়। আবেগ এবং চাহিদাও এক নয়। তাই একজন ধর্ম প্রচারককে তাদের মেজাজ ও মন-মানসিকতা অনুসারে কাজ করতে হয়। কখনো দলিল সমৃদ্ধ আলোচনা করে, কখনো উপদেশমূলক কথাবার্তা এবং কখনো যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে নিতে হয়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হেকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক কর সদ্ভাবে। (সুরা নাহল : ১২৫)।

সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলা : শ্রোতাদের কাছে বক্তব্যকে হৃদয়গ্রাহী করে তোলার জন্য কথাকে সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে হয়। সুন্নাহসম্মত আকর্ষণীয় বর্ণনা ভঙ্গি থাকতে হয়। স্থান-কাল-পাত্র বুঝে যথাযথ শব্দ প্রয়োগ করতে হয়। অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য শব্দ পরিহার করতে হয়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী যখন কোনো কথা বলতেন, তখন তা বুঝে নেওয়ার জন্য তিনবার বলতেন। আর যখন কোনো গোত্রের কাছে এসে সালাম দিতেন, তাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন। (বোখারি : ৯৪)।

শ্রোতাদের বিরক্ত না করা : দীর্ঘ সময় লাগাতার ওয়াজ নসিহত কিংবা এমন কোনো কাজ না করা, যাতে মানুষের মনে বিরক্ত ভাব সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-এর নীতি অনুসরণ করতে হয়। কেননা, তিনি সংক্ষিপ্ত ওয়াস নসিহত করতেন। ওয়াজের মধ্য প্রায় সময় প্রশ্ন করতেন। শ্রোতারা সচেতন ও সক্রিয় হয়ে উঠতেন। সহজভাবে মানুষের কাছে দাওয়াত পেশ করতেন। তিনি আবু মুসা আশআরী (রা.) ও মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) কে ইয়ামানের গভর্নর ও কাজী বানিয়ে প্রেরণ করেছিলেন। তাদের দাওয়াতের নীতিমালা দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা লোকের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করবে, কঠোর ব্যবহার করবে না। শুভ সংবাদ দেবে এবং তাদের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করবে না। আর তোমরা দুজনের মধ্যে সম্ভাব বজায় রাখবে। (বোখারি : ৫৬৯৫)।

ধর্ম প্রচারকের সাবধানতা : একজন ধর্ম প্রচারককে মোত্তাকি, পরহেজগার ও দুনিয়াবিমুখ হতে হয়। সাবধানতা অবলম্বন করে প্রত্যেকটি কাজকর্ম করতে হয়। সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। পরিবার পরিজন এবং নিজের মধ্যে আমলের পরিবেশ তৈরি করতে হয়। এতে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হয়। দ্বীনের পথে সহজে পা বাড়ায়। আল্লাহপাক বলেন, তোমরা কি অন্য লোকদের পুণ্যের আদেশ করো আর নিজেদের ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত কর। তবুও তোমরা কি চিন্তাভাবনা করো না? (সুরা বাকারা : ৪৪)। উল্লিখিত গুণাবলির প্রতি নজর রেখে সমকালীন ধর্ম প্রচারকদের অনলাইন অফলাইনে কাজ করে যাওয়া উচিত।

লেখক : তরুণ আলেম ও কবি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত