জুলুম কী? : শাব্দিকভাবে সীমালঙ্ঘন এবং অপাত্রে স্থাপন করাকে জুলুম বলে। পরিভাষায় সত্য বিচ্যুত হয়ে মিথ্যা পক্ষাবলম্বন করাই জুলুম। অন্যভাবে বললে, প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু যার দ্বারা অন্যকে আঘাত পৌঁছানো হয়, তাই জুলুম (আল-ফকিহ ওয়াল-মুতাফাক্কিহ : ৩৯৪)। মুসলমানদের উচিত জুলুমকে ভয় করা। তা হতে বিরত এবং দূরে থাকা। জুলুমের মতো আখের বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া।
জুলুমের প্রকারভেদ : আনাস ইবনে মালেক (রা.) নবীজি থেকে বর্ণনা করেছেন। জুলুম তিন প্রকার। প্রথমত. এমন জুলুম যা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। দ্বিতীয়ত. এমন জুলুম যা তিনি ক্ষমা করবেন। তৃতীয়ত. এমন জুলুম যা আল্লাহ ছেড়ে দেবেন না। আল্লাহ শিরকের (আল্লাহর অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করা ) জুলুম ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না (সুরা নিসা : ৪৮)। আল্লাহ এবং বান্দার অভ্যন্তরীণ জুলুমকে তিনি ক্ষমা করবেন। তবে ব্যক্তি কর্তৃক ব্যক্তির প্রতি জুলুমকে আল্লাহ ছেড়ে দেবেন না। যতক্ষণ মাজলুম ব্যক্তি ক্ষমা করবেন না, ততক্ষণ জালেমকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না (মাজমাউজ-জাওয়ায়েদ ১০ : ৩৫১)। আমাদের আজকের মূল প্রতিপাদ্য এই তিন নম্বর জুলুম। বিষয়টি কতটা কঠিন, তা পাঠক মাত্রই বুঝতে সক্ষম।
রাজনৈতিক জুলুম : রাজনৈতিক নিপীড়ন। যে নিপীড়নে জর্জরিত গোটা পৃথিবী। রাজনৈতিক জুলুমে দেশে দেশে যত মানুষের হত্যা হয়েছে, অন্য কোনো জুলুমে এমনটা হয়নি। স্বৈরশাসকরা রাজনৈতিক অত্যাচারের মাধ্যমে ভিন্নমত দমন করে। সিংহাসনকে মজবুত ও দীর্ঘমেয়াদি করার প্রয়াস পান। তারা বুঝতে চায় না যে, ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা যে রাজত্ব কায়েম করা যায়, জুলুমের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। অত্যাচার দুষ্ট লোকদের একমাত্র হাতিয়ার। মনে রাখা দরকার, জুলুম (জুলুমকারী) কেয়ামতে অন্ধকারে থাকবে (মুসলিম : ২৫৭৮)।
জলেম নেতা হতে নবীজির আশ্রয় : আমরা অনেকেই অত্যাচারী ব্যক্তিকে নেতা ও অনুসরণীয় ব্যক্তি হিসাবে মান্য করি। জালেমরা এদের মাধ্যমে অন্যের ওপর নিগ্রহের স্ট্রিম রোলার চালায়। নেতাদের অত্যাচারের সহযোগী এই চ্যালা-চামুন্ডারা। এরা বুঝে না পাপিষ্ট নেতা তাদের কতটা ক্ষতি করছে। অজান্তেই তারা নিজেদের আখেরাত ধ্বংস করছে। নবীজি এমন নেতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। যারা তাদের অনুসারীদের দ্বারা অত্যাচার চালায়। ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, নবীজি বলেছেন, হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি অনিষ্টকারী পাপিষ্ঠ নেতা থেকে। যারা আমার উম্মতকে জুলুমের অনিষ্টের দিকে নিয়ে যায় (মুজামুল আওসাত ৫ : ৯৬)।
জালেম নিজের ক্ষতি করে : অন্যের প্রতি অত্যাচারের মাধ্যমে জালেম নিজেরই ক্ষতি করে। কিন্তু অহমিকার কারণে সে তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। আবু হোরায়রা (রা.) একজন ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, অত্যাচারী স্বীয় অত্যাচারের কারণে নিজেরই ক্ষতি করেন। তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহর শপথ! জুলুমের কারণে পাপিষ্ঠরা স্বীয় আসনে লাঞ্ছনাকর মৃত্যু মুখে পতিত হয় (হেদায়াতুর রুয়াত : ৫০৬৪)। সাখাবি (রহ.) হতে বর্ণিত, অত্যাচারীর ঘর নষ্ট হবেই যদিও সেটা কয়েক যুগ পরে হয় (আল মাকাসেদুল হাসানা : ২৫১)। জালেম স্বীয় ধ্বংস ও বিনাস কোনোভাবেই রক্ষা করতে পারবেন না। পৃথিবীর ইতিহাস এর জলন্ত প্রমাণ।
লেখক : শিক্ষা পরিচালক-ভরসা মাদ্রাসা রংপুর।