ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বউ-শাশুড়ি সম্পর্কের রূপরেখা

শরিফ আহমাদ
বউ-শাশুড়ি সম্পর্কের রূপরেখা

পরিবার-পরিজন আল্লাহপাকের দেওয়া এক বিশেষ নেয়ামত। জন্মসূত্রে পরিবারে সবার আলাদা পরিচয় থাকে। অর্পিত থাকে দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোরআন সুন্নাহর বিধান অমান্য কিংবা একচেটিয়া মনোভাব দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে। শরিয়াতের দৃষ্টিতে বউ-শাশুড়ি সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

বউ-শাশুড়ি সম্পর্ক : বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক হতে হয় মা-মেয়ের মতো। একজন স্ত্রীকে স্বামীর মাতা-পিতা অর্থাৎ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান দিতে হয়। মনেপ্রাণে ভালোবাসার নজির পেশ করতে হয়। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়ি পুত্রবধূর সুবিধা-অসুবিধার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হয়। নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসার বন্ধনে আগলে রাখতে হয়। স্ত্রী শ্বশুর-শাশুড়ির কল্যাণেই স্বামীর হাত ধরে নতুন ঠিকানায় আসে। আর তারাও বংশবাতি বৃদ্ধি করার মাধ্যম খুঁজে পায়। এজন্য বউ-শাশুড়ি পরস্পর কৃতজ্ঞ হতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। (আবু দাউদ : ৪৭৩৬ )।

শাশুড়ি কর্তৃক জুলুম : একজন পুত্রবধু নিজের মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে আসে। সংসারে তার মন বসা কিংবা কাজে কর্মে দক্ষ হয়ে ওঠতে কিছুটা সময় লাগে। মানবিক কারণে তার প্রতি সহানুভূতির হাত সর্বদা ঊর্ধ্বে রাখতে হয়। সামান্য ভুলত্রুটির জন্য ঝগড়াঝাটি ও শাশুড়ি কর্তৃক বউকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সম্পূর্ণ জুলুম। যার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। কথায় কথায় খোঁটা দেওয়া কিংবা ঝগড়াটে বউ-শাশুড়ি কপালপোড়া। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সেই লোক সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে। (বোখারি : ২২৯৫)।

সাংসারিক কাজ বোঝা নয় : সাংসারিক কাজ নারীদের দায়িত্ব। এটা কোন বাড়তি বোঝা নয়। এই বুঝ বউ-শাশুড়ির মধ্যে থাকলে অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ফাতেমা (রা.)-এর জীবনী থেকে নারীদের অনেক শিক্ষা রয়েছে। তিনি সংসারের কাজে প্রচুর পরিশ্রম করতেন। রাসুল (সা.) আহলে সুফফা ও বিধবাদের প্রয়োজনের অগ্রাধিকার দিয়ে তাকে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করেছিলেন। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। ফাতেমা (রা.) আটা পিষার কষ্টের কথা জানান। তখন তার কাছে সংবাদ পৌঁছে যে, রাসুল (সা.)-এর কাছে কয়েকজন বন্দি আনা হয়েছে। ফাতেমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে একজন খাদেম চাইলেন। তিনি তাকে না পেয়ে তখন তা আয়েশা (রা.)-এর কাছে উল্লেখ করেন। তারপর রাসুল (সা.) এলে আয়েশা (রা.) তার কাছে বিষয়টি বললেন। আলী (রা.) বলেন, নবী (সা.) আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা শয্যা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা উঠতে উদ্যত হলাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাকো। আমি তার পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা যা চেয়েছ আমি কি তোমাদের তার চাইতে উত্তম বস্তুর সন্ধান দেবো না? তিনি বললেন, যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করবে তখন ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ বলবে। এই তোমাদের জন্য তার চাইতে উত্তম যা তোমরা চেয়েছ। (বোখারি : ২৮৯৩)।

শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত : কোরআন ও হাদিসে পিতামাতার খেদমতের দায়িত্ব ছেলেকে দেওয়া হয়েছে। পুত্রবধূর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। তাকে খেদমত করতে বাধ্য করা নিষেধ। সে কাজের মেয়ে নয়। তবুও নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের ভিত্তিতে তাকে শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করতে হয়। এটাকে পরম সৌভাগ্য ও সাওয়াবের মাধ্যম বানিয়ে নিতে হয়। কেননা, শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমতে নমুনা সাহাবীদের যুগেও ছিল। কাবশা বিনতে কাব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি আবু কাতাদা (রা.)-এর পুত্রবধূ ছিলেন। একদা আবু কাতাদা গৃহে আগমন করলে তিনি তাকে

অজুর পানি এগিয়ে দিলেন...। (আবু দাউদ : ৭৫)

স্বামীর আদেশে খেদমত : মা-বাবার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা সবার থাকে। প্রত্যেকটি ছেলে কামনা করে তার স্ত্রী পিতা-মাতার খেদমত করুক। তাদের খেদমতে মনোযোগী স্ত্রী সহজেই স্বামীর হৃদয় জয় করতে পারে। আর স্বামী যদি শরীয়তের ভেতরে থেকে স্ত্রীকে শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমতের আদেশ করে তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে স্বামীর আদেশ মানতে হবে। স্বামীর আনুগত্য ছাড়া কোনো নারীর নামাজও কবুল হয় না। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তি এমন যাদের নামাজ তাদের কানও অতিক্রম করে না। এক. পলাতক গোলাম যতক্ষণ না সে (মালিকের কাছে ফিরে আসে)। দুই. এমন মহিলা যে স্বামীর অসন্তুষ্টিতে রাত্রিযাপন করে (অথবা যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করেছে, সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত) এমন ইমাম মুসল্লিরা যাকে অপছন্দ করে। (তিরমিজি : ৩৬০, আস সিলসিলাতুস সহিহা : ২৮৮)। বউ-শাশুড়ির সুন্দর সম্পর্কেও পেছনে পুরুষদেরও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। তবেই সুখী হয়ে ওঠে প্রতিটি পরিবার।

লেখক : কবি ও আলেম

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত