ঘুমের আগে নবীজির আমল
মুহাম্মদ আবু সালেহ
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঘুম আল্লাহর দেওয়া বান্দার প্রতি বিশেষ এক অনুগ্রহ ও নেয়ামত। ঘুম মানুষের ক্লান্তি-অবসাদ দূর করে। ঘুমের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়।’ (সুরা নাবা : ৯-১১)। অন্যদিকে ঘুমও একটি ইবাদত। যদি তা হয় আল্লাহতায়ালার হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী। সারাদিনের কাজকর্ম শেষে মানুষ যখন রাতে ঘুমোতে যায়, তখন বিশেষ কিছু আমল বা দোয়া পড়লে ঘুমটিও ইবাদতে পরিণত হয়।
ঘুমের আগে রাসুল (সা.) যা করতে বলেছেন : রাসুল (সা.) ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সন্ধ্যাবেলায় তোমাদের বাচ্চাদের ঘর থেকে বের হতে দিও না, কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও (প্রভাব ফেলে) করে। ঘুমের আগে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা, অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্জ্বলিত সলিতাযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরের লোককে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। ’ (বোখারি : ৩৩১৬)।
ঘুমের আগে ১০ আদব
(১) এশার নামাজ পড়ে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া : এশার নামাজের পর অনর্থক গল্পগুজব করা এবং দীর্ঘ রাত পর্যন্ত অহেতুক জেগে থাকা মহানবী (সা.) অপছন্দ করতেন। তবে দ্বীনিশিক্ষা দিতে তিনি কখনো কখনো রাত জাগতেন। মুসলমানদের সম্পর্কে কল্যাণকর পরামর্শের জন্য অনেক সময় রাতে তিনি আবু বকর (রা.)-এর বাসায় যেতেন। (তাহাবি শরিফ : ৭২০৩)।
(২) বিছানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা : রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্র হয়ে শোয়া সুন্নত। তাই ঘুমানোর আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবে, যাতে খাবারের কোনো কিছু লেগে না থাকে। শয্যা গ্রহণের আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া উচিত। যাতে ক্ষতিকর পোকামাকড় এর দংশন থেকে বাঁচা যায়। ধুলো বা ময়লার কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কামুক্ত থাকা যায়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন কাপড় (তার লুঙ্গির) দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না।’ (বোখারি : ৬৩২০)।
(৩) অজু করা : ঘুমের আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হওয়া ও অজু করা সুন্নত। হজরত বারা ইবনে আযিব হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন নামাজের মতো অজু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।’ (বোখারি : ২৪৭, মুসলিম : ২৭১০)।
(৪) আয়তাল কুরসি পাঠ করা : ঘুমের আগে সুরা বাকারার ২৫৪ নং আয়াত (আয়াতুল কুরসি) পাঠ করা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ (বোখারি : ২৩১১)।
(৫) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা : ঘুমের আগে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) পাঠ করা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (আ-মানার রাসুলু বিমা...) তেলাওয়াত করবে, এটা তার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (বোখারি : ৪০০৮)।
(৬) সুরা মুলক পাঠ করা : ঘুমের আগে সুরা মুলক পুরো পাঠ করা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)। (তিরমিজি : ২৮৯১)।
(৭) সুরা ইখলাস, নাস ও ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া : আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে হাতের তালুতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বোখারি : ৫০১৭)।
(৮) চোখে সুরমা লাগানো : ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রতি রাতে (ঘুমানোর আগে) তিনি ডান চোখে তিনবার এবং বাঁ চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। (শামায়েলে তিরমিজি : ৪১)।
(৯) ডান কাত হয়ে ঘুমানো : বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে। তারপর ডান কাতে শুয়ে পড়বে...।’ (বোখারি : ২৪৭)।
(১০) ঘুমের আগে দোয়া পাঠ : হজরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় নিজ বিছানায় শোয়ার (ঘুমানোর আগে) সময় নিজ হাত গালের নিচে রাখতেন। অতঃপর বলতেন, আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনারই নামে মৃত্যুবরণ করি আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।
লেখক : সহকারী মুফতি, মারকাযুদ্ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ ঢাকা।