মায়ের আঁচল ধরেই সন্তান বেড়ে ওঠে। মায়ের শরীরের গন্ধে শিশু সন্তানের কান্না থামে। মায়ের স্বভাব ও আচরণেই গড়ে ওঠে সাধারণত অধিকাংশ সন্তানের স্বভাব চরিত্র। চিন্তা ও মানসিকতা। তাই সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। মা চাইলেই একটি সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। হয়ে ওঠতে পারেন আদর্শ। এ লেখায় আদর্শ মায়ের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
কালিমা শিক্ষা দেওয়া : জীবিকার তাগিদে ঘরের পুরুষরা বাইরে বাইরে ছুটে বেড়ান। বিভিন্ন পেশায় ব্যস্ত থাকেন। এ জন্য সন্তানের লালন-পালন, শিক্ষা দীক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের প্রধান ভূমিকা থাকে। সন্তান কথা বলা আরম্ভ করলে মায়ের দায়িত্ব সালাম, কালিমা ইত্যাদি বিষয় শেখানো। একজন আদর্শ মায়ের এটি একটি অন্যতম গুণ যে, তিনি তার সন্তানকে প্রথম কথা শেখাবেন তার রবের নাম। ইব্রাহীম আততাইমি (রহ.) বলেন, সাহাবীগণ শিশু কথা বলা শিখলেই তাকে কালিমার তালকিন করতেন (মুখে মুখে বলা শেখাতেন) যাতে শিশুর প্রথম কথা হয় লা ইলাহা ইল¬াল¬াহ। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ৩৫১৯)।
সন্তানকে নামাজের অভ্যাস করানো : দৈনিক নামাজের ওয়াক্ত হলেই মায়ের কর্তব্য ছেলে সন্তানকে সাজিয়ে গুছিয়ে স্বামী বা পরিবারের বড়োদের সঙ্গে মসজিদে পাঠিয়ে দেওয়া। আর কন্যা সন্তানকে নিজে সাথে নিয়ে নামাজ আদায় করা। এতে সন্তান নামাজের প্রতি আকৃষ্ট হবে। নিয়মণ্ডকানুন খুব সহজে আয়ত্ত করতে পারবে। আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা নিজ সন্তানদের সাত বছর বয়স থেকে নামাজের নির্দেশ দাও। আর ১০ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাদের প্রহার কর এবং বিছানা পৃথক করে দাও। (আবু দাউদ : ৪৯৫)।
কোরআন শিক্ষা দেওয়া : সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সবার জন্য কোরআন শিক্ষা করা আবশ্যক। ছোট থেকেই তাদের কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়ে মায়ের তৎপর থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা বেশি। সন্তান কোরআন তেলাওয়াতের কারণে মাতা-পিতার সম্মান বেড়ে যায়। মুয়াজ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল কোরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, কেয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে নূরের টুপি পরানো হবে। যদি সূর্য তোমাদের গৃহে প্রবেশ করত, তাহলে ওই সূর্যের আলো অপেক্ষাও ওই টুপির আলো উজ্জ্বলতর হবে। এখন তোমরা চিন্তা করো, যে ব্যক্তি আল-কোরআনের নির্দেশ অনুসারে আমল করে তার মর্যাদার অবস্থা কত উত্তম হবে? (আবু দাউদ : ১৪৫২)।
সন্তানকে শাসন করা : অতি আদর আর অতি অবহেলায় সন্তান ভুল পথে পা বাড়ায়। পরিবারে মধ্যমপন্থায় শাসনের ব্যবস্থা রাখা মায়ের বড় দায়িত্ব। সন্তানকে অনর্থক বকাঝকা করা, অভিশাপ দেওয়া কিংবা রাগের মাথায় বিচার করা থেকে বিরত থাকতে হয়। আব্দুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বাকরা তার ছেলেকে লিখে পাঠালেন, তুমি রাগের অবস্থায় বিবাদমান দু’ব্যক্তির মাঝে ফায়সালা করো না। কেননা, আমি নবী কারিম (সা.) কে বলতে শুনেছি, কোন বিচারক রাগের অবস্থায় দুজনের মধ্যে বিচার করবে না। (বোখারি : ৬৬৭২, মুসলিম : ১৭১৭)।
উত্তম পরিবেশ তৈরি করা : প্রত্যেকটি সন্তান পরিবেশ দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। আর এজন্য বাইরে ঘরে দ্বীনের পরিবেশ কায়েম করতে হয়। উত্তম পরিবেশ আকাশ থেকে নেমে আসে না। একজন আদর্শ মাকেই তৈরি করে নিতে হয়। মায়ের প্রতিটি পদক্ষেপের প্রভাব সন্তানদের ওপর পড়ে। তাই সন্তানকে মিথ্যা কথা বলা কিংবা মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমার আম্মা আমাকে কিছু একটা দেবেন বলে কাছে ডাকলেন। রাসুল (সা.) তখন আমাদের বাড়িতে বসে ছিলেন। তিনি আমার আম্মাকে বললেন, তুমি কি সত্যিই তাকে কিছু দিবে? আম্মা বললেন, হ্যাঁ তাকে খেজুর দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। রাসুল (সা.) বললেন, যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে, তবে তোমার এ কথাটি মিথ্যা বলে গণ্য হতো। (আবু দাউদ : ৪৯৯১)
লেখক : তরুণ আলেম ও কবি