রজব মাসের আবেদন
শাহাদাত হোসাইন
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রজব আমাদের কাছে আসে রমজানের সওগাত নিয়ে। পয়গাম দেয়, আল্লাহর দয়া-মাগফেরাতের মাস সন্নিকটে হওয়ার। আহ্বান জানায় রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার। তাই তো নবীজি রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুত হতেন। রমজানের প্রতিটি ক্ষণ যেন সঠিকভাবে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করা যায়, সেই প্রশিক্ষণ নিতেন রজব-শাবানে। মুসলিম জীবনে এ মাসের গুরুত্ব, ফজিলত ও তাৎপর্য অনেক বেশি।
হায়াত বৃদ্ধির প্রার্থনা : রজব মাস শুরু হলে নবীজি একটি দোয়া অত্যধিক পরিমাণে পাঠ করতেন। তাতে নবীজি আল্লাহতায়ালার কাছে হায়াত বৃদ্ধির আবেদন করতেন। দোয়াটি হলো, আল্লাহুম্মা বারিক-লানা ফি-রজাবা ওয়া-শাবান, ওয়া-বাল্লিগনা রমাদান। দোয়াটির মমার্থ এমন, হে আল্লাহ রজব শাবানে বরকত দাও (জীবনকাল বৃদ্ধির মাধ্যমে) এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও (যাওয়ায়েদুল-মুসনাদ : ২৩৪৬)।
রজবে নবীজির রোজা : রজব থেকেই শুরু হয় রমজানের প্রশিক্ষণ। তাই প্রিয়নবী (সা.) এ মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। সাহাবি আবু হোরায়রাহ (রা.) বলেন, রমজান ব্যতীত নবীজি কোন মাসের রোজা পরিপূর্ণ করতেন না। তবে রজব ও শাবানের কথা ভিন্ন (মাজমাউজ-জাওয়ায়েদ ৩ : ১৯১)।
রাত্রি জাগরণ ও রোজার প্রতিদান : রজব মাস বরকতময় একটি মাস। এ মাসে রাত্রি জাগরণ এবং দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে তিনটি পুরস্কারের কথা বর্ণনায় এসেছে। সাহাবি আলি (রা.) বলেন, নবীজি বলেছেন। যে ব্যক্তি রজবে রাত্রি জাগরণ করবে এবং দিনে রোজা রাখবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতি ফল খাওয়াবেন। তাকে জান্নাতি রেশমের কাপড় পরিধান করাবেন এবং রাহিকুল মাখতুম নামক পানীয় পান করাবেন (তানজিহুশ-শরিয়াত ২ : ১৬৪)। এই হাদিস থেকে রজবে রোজার পাশাপাশি রাত্রি জাগরণের কথাও পাওয়া যায়। তাই এমাসের অন্যতম আবেদন, রাতে জাগ্রত থেকে বেশি বেশি আল্লাহতায়ালার ইবাদত করা।
জান্নাত এবং দিবসের প্রার্থনা : রজব মাসে যারা রোজার আমল করে, জান্নাত তাদের জন্য মাগফেরাতের প্রার্থনা করে। সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি বলেছেন। রজব সম্মানিত মাসগুলোর অন্যতম। তার দিনগুলো ষষ্ঠ আসমানের দরজাগুলোতে লেখা রয়েছে। অতএব, যখন কোনো ব্যক্তি রজবের কোনো একদিন রোজা রাখে এবং একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই রোজা পালন করে। তাহলে জান্নাতের সেই দরজা এবং সেই দিবসটি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, হে আমাদের প্রতিপালক তাকে ক্ষমা করুণ (ফাজলুস-সিয়াম : ৪২)।
ক্ষমার ঘোষণা : প্রত্যেক মোমেন ব্যক্তির জীবনের পরম চাওয়া আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া। ক্ষমা পাওয়ার সেই ঘোষণা যদি আগেই আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া যায়, তা কতই না আনন্দ দায়ক! এমন সু-সংবাদই পাওয়া যাবে যদি কোনো ব্যক্তি রজবের ১০ দিন রোজা রাখে। হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেছেন, রজব আল্লাহর মহিমান্বিত মাস। যে ব্যক্তি রজবের একদিন রোজা রাখবে, সে একমাস রোজা রাখার সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি সাতদিন রোজা রাখবে, তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি আটটি রোজা রাখবে, তার সম্মানে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর যদি কেউ ১০টি রোজা রাখে, তাহলে আসমানে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, আল্লাহতায়ালা তোমাকে ক্ষমা করেছেন (শুয়াবুল-ঈমান ৭ : ৩৮৩)।
রজবে রোজা রাখার তিন পুরস্কার : আমরা সবাই আল্লাহর কাছে পুরস্কার লাভের সুপ্ত বাসনা মনে লালন করি। হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি রজবে রোজা রাখবে, সে আল্লাহর ওপর তিনটি জিনিস অবশ্যক করবে, তার বিগত সব গোনাহের জন্য ক্ষমা লাভ। বাকি জীবনে নিষ্কলুষতা অর্জন সর্বোপরি, কেয়ামতের কঠিন দিনে পিপাসা থেকে নিরাপদ থাকা (জুজ-উন-ফিহি-হাদিসানে : ৩৩৯)।
জান্নাতি ঝরনাধারা : রজব আল্লাহতায়ালার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত একটি মাস। এ মাসের সম্মান ও ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবি আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবীজি বলেছেন, জান্নাতে রজব নামে একটি ঝরনাধারা আছে। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে আল্লাহতায়ালা তাকে সেই ঝরনাধারার পানি পান করাবেন (শুয়াবুল-ঈমান : ৩৮০০)।
জান্নাতের নিশ্চয়তা : রজব মাসের একনিষ্ঠ আমলে জান্নাতের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। খালিদ ইবনে মা’দান বলেন, বছরে পাঁচটি রাত আছে, যে ব্যক্তি সাওয়াবের আশায়, সত্যনিষ্ঠ প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস রেখে আমল করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর তা হলো, রজবের প্রথম রাত, অর্ধ-শাবানের রাত, ঈদুল ফিতর ও আজহার রাত এবং আশুরার রাতে ইবাদত করা পাশাপাশি দিবসে রোজা রাখা (শুয়াবুল-ঈমান ৭ : ৩৮৩)।
লেখক : শিক্ষা পরিচালক, ভরসা মাদ্রাসা, রংপুর।