মানবজীবনের ঘটনাপ্রবাহে মিথ্যার মিশ্রণহীন নিরেট সত্যের উপস্থাপনকে সততা বলে। সততা একটি মহৎ গুণ। এই গুণ নির্মল জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। সততা জীবনের পরতে পরতে পবিত্রতা ও প্রশান্তির ছোঁয়া আনে। জীবনের এপিট-ওপিঠ সাজায় বর্ণিল সৌন্দর্যে।? সততা ও সত্যবাদিতা গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিবর্গ মহান আল্লাহ থেকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত। এ সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদের তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মোনাফেকদের শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ২৪)। সততার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো জান্নাত। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আজকের দিনে সত্যবাদিদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্য উদ্যান রয়েছে, যার তলদেশে ঝরনা প্রবাহিত হবে।? তারা তাতে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এটিই মহান সফলতা। (সুরা মায়েদা : ১১৯)।
সততার পুরস্কার : সততা বজায় রেখে জীবন যাপন করা কঠিন। তবুও যারা সাগর সমান দুঃখ ও পাহাড়সম বিপদের মধ্যে সততার পথে ছোটেন তারাই কামিয়াব। তাদের জন্য রবের পক্ষ থেকে খুলে যায় রহমতের দুয়ার। তারা দুনিয়াতে পেয়ে যান নগদ পুরস্কার। এ সম্পর্কে হাদিসে চমৎকার একটি উপমা এসেছে। হজরত হাম্মাদ ইবনে মুনাব্বিহ (রহ.) বলেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) যে সকল হাদিস আমাদের বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে একটি এই যে, নবীজি (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির কাছে থেকে একখণ্ড জমি ক্রয় করে। যে ব্যক্তি ভূমি ক্রয় করেছিল, সে তার কেনা সম্পত্তিতে একটি কলসি পেল। তাতে স্বর্ণ ছিল। যে সম্পত্তি ক্রয় করেছিল সে বিক্রেতাকে বলল, তুমি আমার কাছ থেকে তোমার স্বর্ণ বুঝে নাও। আমি তো তোমার কাছ থেকে ভূমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ খরিদ করিনি। তখন যে ব্যক্তি সম্পত্তি বিক্রি করেছিল সে বলল, আমি তো তোমার কাছে ভূমি এবং ভূমির মধ্যে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, তারপর উভয়েই এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে ফয়সালা চাইল। তখন সে বলল, তোমাদের কি কোনো সন্তান আছে? তাদের একজন বলল যে, আমার একটি ছেলে আছে এবং অপরজন বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। তখন তিনি বললেন, তোমার ছেলেটিকে মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে দাও এবং এই উপলক্ষ্যে তোমরা তোমাদের উপর তা খরচ করো এবং (এ থেকে) সাদকা করো?। (মুসলিম : ৪৩৪৮)।
হাদিসে সততার পুরস্কার : মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে সততার সবক শিখেছেন সাহাবায়ে কেরাম। তারাই প্রথম শুনেছেন সততার পুরস্কার সংক্রান্ত হাদিসগুলো এবং তারাই প্রথম আমল করে ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকতের ভান্ডার খুলেছেন। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি ক্রেতা-বিক্রেতা সত্য বলে এবং ভালো-মন্দ প্রকাশ করে দেয়, তাহলে তাদের লেনদেন বরকতময় হবে। আর যদি উভয়ে মিথ্যা বলে এবং দোষত্রুটি গোপন করে, তাহলে এই লেনদেন থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে। (মুসলিম : ১৫৩২)। সততা অবলম্বনকারীদের জন্য মহানবী (সা.) কেয়ামতের ময়দানে সুপারিশ করবেন মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেন, আমার সুপারিশ তার জন্য যে সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। এমন নিষ্ঠার সঙ্গে যে তার অন্তর তার মুখকে সত্যায়ন করবে এবং মুখ অন্তরকে সত্যায়ন করবে। (মুসনাদে আহমদ : ৮০৭০)।
সততার পথে থাকার উপায় : মানুষের সততার চাবি তার নিজের হাতে। কে তা ভেঙে ফেলবে আর কে যতনে রাখবে, এটা তার একান্তই নিজের ইচ্ছা ও সাধনার বিষয়। তবে সততার সঙ্গে হকের ওপর অবিচল থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। তাদের জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশনা, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সুরা তাওবা : ১১৯)। এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো, সততা বজায় রাখতে হলে সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকা জরুরি। অসৎ লোকের সঙ্গ পরিহার করা আবশ্যক। সত্যবাদী কারা এবং তাদের সঙ্গে থাকার গুরুত্ব বোঝানোর লক্ষ্যে মহান আল্লাহ আরো বলেন, আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তার রাসুলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাদের সঙ্গী হবে।? তারা হলেন নবী, সিদ্দিক,শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম। (সুরা আন?নিসা : ৬৯)। উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ কিংবা তাদের সঙ্গে থেকে সততার পুরস্কারের যোগ্য বলে গণ্য হওয়া মিথ্যার জয়জয়কার এ যুগে প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য একান্ত প্রয়োজন।
লেখক : কবি ও আলেম।