ভাষা মহান রবের নেয়ামত

মুফতি আইয়ুব নাদীম

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পবিত্র কোরআনের বিশাল অংশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, আল্লাহতায়ালার নানাবিধ নেয়ামতের বিস্তারিত বিবরণ। আল্লাহর দেওয়া এসব নেয়ামতের প্রকৃত সংখ্যা জীবনভর গণনা কিংবা চিন্তা-গবেষণা করেও বের করা সম্ভব নয়।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামতগুলো গুনতে শুরু করো, তবে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। বস্তুত আল্লাহতায়ালা অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সুরা নাহল : ১৮)। বোঝা গেল, আল্লাহতায়ালার নেয়ামত এত বিপুল পরিমাণ যা গণনা করা সম্ভব নয়।

আল্লাহর বিপুলসংখ্যক নেয়ামতের ভেতরে অনন্য একটি নেয়ামত হলো ভাষা। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। তাইতো আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তিনি তো রহমানই, যিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।’(সুরা আর-রহমান : ১-৪)।

ভাষার ভিন্নতা আল্লাহর নিদর্শন : প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের নয়নাভিরাম দৃশ্যে ভরা এই পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালার কত-শত নিদর্শনাবলি রয়েছে, এসবের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন হচ্ছে, মানুষের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। মানুষের ভাব প্রকাশের ভাষা, শুধু একটি ভাষাতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কালে-কালে, যুগে-যুগে, মানুষের রুচি ও চাহিদাভেদে, স্থান ও কালের ভিন্নতায় মানুষের ভাষাও বহুরূপে রূপান্তরিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে এবং তার নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন আছে জ্ঞানবানদের জন্য।’ ( সুরা : রূম : ২২)। বোঝা গেল, আল্লাহতায়ালা মানুষকে তাদের মনের আকুতি প্রকাশের জন্য দান করেছেন ভাষা বা বাকশক্তি। এটা আল্লাহপাকের দেওয়া এক বড় নেয়ামত। আল্লাহপাক প্রত্যেক জাতিকে, প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষকে, পৃথক-পৃথক ভাষা দান করেছেন। সবগুলো ভাষা আল্লাহর দেওয়া দান। কাজেই এটা আল্লাহর ভাষা, ওটা আল্লাহর ভাষা নয়, এমন বলা ঠিক নয়। ভাষা আল্লাহর, ব্যবহার মানুষের। মানুষ তার সভ্যতা ও ধর্মানুসারে ভাষাকে ব্যবহার করে। তাই জাতি ও সভ্যতাভেদে ভাষার ভিন্নতা গড়ে ওঠেছে। কিন্তু সব ভাষাই আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত।

আদম আলাইহিস সালামের ভাষা জ্ঞান : আল্লাহপাক হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে তাকে শিক্ষা দিয়েছেন জ্ঞান। পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (আল্লাহ) আদমকে সব নাম শিক্ষা দিলেন। তারপর তাদের ফিরিশতাদের সামনে পেশ করলেন এবং (তাদের) বললেন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আমাকে এসব জিনিসের নাম জানাও।’ (সুরা বাকারা : ৩১) এ আয়াতের ব্যাখায় তাফসিরে রুহুল বয়ানে আছে, সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত যা- কিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে, আল্লাহপাক সব ভাষায়, সব সৃষ্টির নাম, অবস্থান, দোষ-গুণ, বৈশিষ্ট্য, ইহকালীন ও পরকালীন উপকার-অপকার, জান্নাত-জাহান্নাম এবং তথাস্ত যত কিছু আছে,সবকিছু হজরত আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহতালা শিখিয়েছেন। (তাফসিরে রুহুল বয়ান : ১/১০০)। তাফসিরে রুহুল বয়ানে আরো আছে, আল্লাহপাক হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সাত লাখ ভাষা শিখিয়েছেন?। তিনি সাত লাখ ভাষায় কথা-বার্তা বলতে পারতেন, কেয়ামত পর্যন্ত তার সন্তান- সন্ততিরা সাত লাখ ভাষায় কথাবার্তা বলবে। (প্রাগুক্ত)।

মহানবী (সা.)-এর ভাষা দক্ষতা : আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতে যত নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, প্রত্যেক নবী-রাসুলকে তাদের জাতীয় ভাষায় অভিজ্ঞ করে প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি যখনই কোনো রাসুল পাঠিয়েছি, তাকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের সামনে সত্যকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে, তারপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন, যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন।

তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা ইব্রাহীম : ৪)। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) যেহেতু আরবি ভাষাভাষীদের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, তাই আল্লাহপাক তাকে আরবি ভাষায় অভিজ্ঞ করে পাঠিয়েছিলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ আমাকে আরব দেশে প্রেরণ করেছেন, আরবি ভাষায় আমাকে পাণ্ডিত্য দান করেছেন এবং আমি বিশুদ্ধ আরবি ভাষা জানি।

(আল-মুজামুল কাবির ৫/৩৬)। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো জ্ঞান না থাকার পরেও, রাসুলের মুখ নিঃসৃত শব্দগুলো ছিল ভাষা শৈলীর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা-সাহিত্যের মানদ-ে অত্যন্ত উঁচু মাপের। আজও আল্লাহর রাসুলের হাদিসগুলো সাহিত্যের সমৃদ্ধ ভান্ডার হিসেবে পরিচিত।

ভাষা শুদ্ধিকরণ সবার জন্য জরুরি : শুরু হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, এই মাসের দাবি অনুযায়ী আমাদের মাতৃভাষা চর্চায় মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া বিশুদ্ধভাবে মাতৃভাষা চর্চা করা এবং বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলা মহানবীর আদর্শ। অন্যতম একটি সুন্নত।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল।