জুমার দিন জুমার নামাজের জন্য যিনি যত তাড়াতাড়ি মসজিদে আসবেন, তিনি তত বেশি সওয়াব পাবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভি সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দপ্তর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বোখারি : ৮৮২)। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। (বোখারি : ৬৪০০)। জুমার গুরুত্ব আল্লাহতায়ালার কাছে এত বেশি যে, কোরআনে ‘জুমআ’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মোমেনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচাকেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমআ : ০৯)।
জুমার দিনের বিশেষ আমল : রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেন না তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ :১০৪৭)।
তিরমিজি শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন। সুতরাং, আমাদের জুমার দিন অন্যান্য আমলের সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে।
দোয়া কবুলের দিন জুমা : জুমা দিনের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন দোয়া করলে তা কবুলের আশা করা যায়। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় একথা এসেছে। হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনের যে মুহূর্তে (দোয়া কুবুল হওয়ার) আশা করা যায়, তা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে তালাশ করো।’ (তিরমিজি, মুসলিম, মিশকাত, তালিকুর রাগিব)। মহজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)।
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কখন? : জুমার দিনের দোয়া কবুল হওয়ার সময় এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। এ সময়টিতে দোয়া করলে তা কবুল হয়, যা হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সে সময়টি হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, তিরমিজি)।
সুরা কাহফ তেলাওয়াত : ১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত নূর হবে।
২. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয়, তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।
৩. অন্য রেওয়ায়েতে আছে এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গোনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য। কারণ, ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হচ্ছে যে, কবিরা গোনাহ তাওবা করা ছাড়া মাফ হয় না। কেউ যদি পুরো সুরা তেলাওয়াত করতে না পারে তবে কমপক্ষে সুরাটির প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করবে। এর মাধ্যমেও পুরো সুরা তিলাওয়াতের উল্লিখিত বিশেষ ফজিলত পাওয়া যাবে।
জুমার দিনের হাদিসে বর্ণিত কিছু আমল : ১. ফজরের ফরজ নামাজে সুরা সাজদা ও সূরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা ২. উত্তম পোশাক পরা ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা ৪. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া ৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা ৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সারাদিন যথাসম্ভব বেশি দরুদ পাঠ করা ৭. মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করা ৮. ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা ৯. মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা ১০. খুৎবা চলাকালে কোনো কথা না বলা ১১.দুই খুৎবার মাঝের সময়ে মনে মনে দোয়া করা ১২. আসরের পর মাগরিবের আগে দোয়া করা।