মানবিক ও আদর্শিক জাতি গঠনের যাবতীয় উপকরণ রয়েছে নবী (সা.)-এর জীবনে। তাই নবীজির জীবনচরিত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা প্রতিটি সচেতন মুসলিমের জন্য আবশ্যক। নবী (সা.)-এর উত্তম আদর্শ গ্রহণের মাধ্যমে আদর্শ জাতি গঠিত হয়। জানা কথা, আদর্শ জাতি ছাড়া শান্তিময় সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। মানব জীবনে সর্বময় শান্তি ও পরকালের সফলতানির্ভর করে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ ও প্রায়োগিক জীবনে এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে। সঙ্গত কারণেই বলা চলে সীরাতপাঠ মোমেনের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। এর অনেকগুলো কারণ আছে। উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ তুলে ধরা হলো :
১. নবীজিকে জানা : নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গভীর থেকে জানার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে সীরাতবিষয়ক বই পাঠ করা। যে মহামানব আমাদের জীবনের সর্বোচ্চ আদর্শ, তাকেই যদি জানা না হয়, চিনা না হয়, তবে তার অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তাই সীরাত পড়া জরুরি নবীজিকে জানার জন্য। তাকে চেনার জন্য।
২. ঈমানের দাবি পূরণ : নবীজিকে ভালোবাসা ঈমানের দাবি। কারো ঈমান নবীজির ভালোবাসা ছাড়া কখনো পূরণ হতে পারে না। হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মোমেন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে স্বীয় পিতা, সন্তান ও সব মানুষ থেকে বেশি প্রিয় হব।’ (বোখারি : ১৫)। এই ভালোবাসা সৃষ্টির জন্যও সীরাত পাঠ করতে হয়। একজন পাঠক নবীজিকে যত বেশি জানবেন, তার চরিত্রসুষমা তাকে তত বেশি মোহিত করবে। সে তত বেশি নবীজিকে আপন করে নেবে। এভাবে ধীরে ধীরে নিজের ঈমানেও পূর্ণতা আসবে।
৩. ইসলামের সঠিক দীক্ষা লাভ : সঠিক ইসলাম পালনে সহায়ক হওয়ার কারণেও সীরাত পাঠ জরুরি। সীরাত পাঠকের সামনে নবীজির জীবনচিত্র তুলে ধরে। নবী-জীবনী জানার ভেতর দিয়েই তিনি জানতে পাবেন ইসলাম কীভাবে মানতে হবে, কীভাবে পালন করতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ-দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহযাব : ২১)।
৪. ন্যায় ও সত্যের দিশারী : সীরাত একজন মোমেনের জীবন চলার পাথেয়। অন্ধকার রাতের আলোকোজ্জ্বল মশাল। সেই মশালের আলোতে মোমেন খুঁজে পায় তার হারানো পথের দিশা। কোথাও দিকহারা হলে সীরাত তার সামনে তুলে ধরে মুক্তির উপায়। মেলে ধরে সমস্যার সঠিক সমাধানের পথ। খতিব বাগদাদী (রহ.) বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) হলেন সবচেয়ে বড় মানদ-। তার জীবনাচার ও চরিত্রের সামনে সবকিছুকে তুলে ধরতে হবে। তারপর যা কিছু এর সঙ্গে খাপ খাবে, সেটাই সত্য হিসেবে বরিত হবে। আর এর বিপরীত যা প্রকাশ পাবে তা বাতিল হিসেবে বিবেচিত হবে।’ (আল জামি লি-আখলাকির রাবি : ১/৭৯)।
৫. দরুদ পাঠের সৌভাগ্য লাভ : সীরাত পাঠে অন্য কোনো উপকার হোক বা না হোক, একটা উপকার হবেই। তা হলো প্রচুর পরিমাণে দরুদ পড়ার সৌভাগ্য লাভ করা। সীরাত পাঠকালীন যতবার রাসুল (সা.)-এর নাম আসবে, ততবার দরুদ পাঠ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ আসে সীরাত পাঠকের জন্য। এটি একজন পাঠকের জন্য কত বড় শুভ পরিণাম বয়ে আনবে তা হাশরের ময়দানে বোঝা যাবে। এক হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহর হাবিব (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে সেসব লোক, যারা আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করেছে। (তিরমিজি : ৪৮৪)।
৬. উল্লেখযোগ্য সীরাতগ্রন্থ : রাসুল (সা.)-এর জীবনীগ্রন্থ বহু ভাষায় বহু লেখকের মাধ্যমে রচিত হয়েছে। আমাদের দেশে হাতের নাগালে পাওয়া যায় এবং গ্রহণযোগ্যতায় বিবেচিত হয়, এমন কিছু গ্রন্থের নাম এখানে তুলে ধরছি। ১. সীরাতে ইবনে হিশাম ২. সীরাতে মুস্তফা- ইদ্রীস কান্ধলবি ৩. আর রাহীকুল মাখতুম ৪. সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া-মুফতি মুহাম্মদ শফি ৫. সীরাতে হালবিয়া ৬. তোমাকে ভালোবাসি হে নবী- আবু তাহের মেসবাহ, ৭. রাসুলে আরাবি-সফিউর রহমান মুবারকপুরি। এছাড়া শিশুদের জন্য সীরাত সিরিজ আছে প্রতিথযশা বিভিন্ন লেখকের। এর মধ্যে অগ্রগণ্য আবু তাহের মেসবাহ রচিত সীরাত সিরিজ, জিয়াউল আশরাফ রচিত ‘শিশুদের প্রিয়নবী’। নবীন লেখকদের রচিত বেশ চমৎকার কিছু শিশুতোষ সীরাতগ্রন্থ বাজারে পাওয়া যায়।