সালাম শান্তির বাহন

আশরাফ জিয়া

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সালাম মুসলিম সভ্যতার অন্যতম একটি উপকরণ। সালাম একদিকে সভ্যতা অন্যদিকে ইবাদত। সালামে নেকি লাভ হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সালাম রাসুল (সা.) এর সুন্নত। ধর্মমতে সুন্নতের অনুসরণ মানুষকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাতে পরিণত করে। আর সালাম এমনই একটি সুন্নত, যা পরস্পর সাক্ষাতে কথা বলার আগে মুসলমানরা অভিবাদন হিসেবে বলে থাকে; যার মর্মার্থ একে অন্যের জন্য শান্তি ও রহমত কামনা করা। আরবিতে বলা হয় ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বাংলা অর্থ : আপনার ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। কী চমৎকার অভিবাদন! কত আন্তরিকপূর্ণ কল্যাণ কামনা! সালামের মাধ্যমে সমাজ থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা দূর হয়। তাই রাসুল (সা.) বেশি বেশি সালামের প্রচার ও প্রসার করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন।

সালাম জান্নাতের অভিবাদন : সালাম শুধু দুনিয়ার অভিবাদনই নয়। পরকালে মোমেনদের জান্নাতে সালাম বলে অভিবাদন জানানো হবে। ফেরেশতারা তাদেরকে ‘সালাম’ অভিবাদনের মাধ্যমে বেহেশতে অভ্যর্থনা জানাবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা তাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে। তথায় তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। (সুরা ইবরাহীম, আয়াত: ২৩)। রাসুল (সা.) আগে সালাম দিতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ গুণ ছিল, তিনি সবসময় আগে সালাম দিতেন। কী ছোট, কী বড়, কী মধ্যবয়সি, কেউ তাঁকে আগে সালাম দিতে পারতেন না। তিনি সর্বদা আগে সালাম দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি কখনো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আগে সালাম দিতে পারিনি। তিনি সবসময় আগে সালাম দিতেন। একদিন আমি দরজার পেছনে লুকিয়ে ছিলাম, এটা ভেবে যে, আজকে রাসুল (সা.) কে আমি আগে সালাম দেব, কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ির বাইরে থেকেই সালাম দিয়ে ফেললেন এবং সেদিনও বিজয়ী হলেন।

 

আন্তরিক হৃদ্যতা ও দৃঢ় বন্ধন : সালামের মাধ্যমে পারস্পরিক হৃদ্যতা তৈরি হয়। আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা দূর হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না; যতক্ষণ না তোমরা মোমেন হবে এবং তোমরা মোমেন হতে পারবে না; যে পর্যন্ত না তোমরা পরস্পরে ভালোবাসা রাখবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যখন তোমরা তা করবে, তখন তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমরা পরস্পরে সালাম প্রচার কর। (মুসলিম : ৫৪, তিরমিজি : ২৬৮৮, আবু দাউদ : ৫১৯৩)।

সালামে অহংকার দূর হয় : অহংকার পতনের মূল। অহংকারী ব্যক্তিকে সবাই ঘৃণা করে। আল্লাহতায়ালাও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। যে ব্যক্তি আগে সালাম দেন তিনি অহংকার থেকে মুক্ত হন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম সালাম প্রদানকারী অহংকার থেকে মুক্ত থাকে। (বায়হাকি : ৪৬৬৬)।

জান্নাত লাভের মাধ্যম : সালামের মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি, সম্প্রীতির প্রসার ঘটে। সালাম চর্চার মধ্যদিয়ে একজন মানুষ জান্নাতি মানুষ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামাজ পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো। (ইবনে মাজাহ : ৩২৫১, তিরমিজি : ২৪৮৫, দারিমি :১৪৬০)।

মানবজাতির সর্বপ্রথম অভিবাদন : পৃথিবীতে অনেক জাতি ও অনেক ধর্মের মানুষ আছে। তারা বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে পারস্পরিক অভিবাদন সম্পাদন করে থাকেন। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও সুন্দর অভিবাদন হলো সালাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী? সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহতায়ালা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর আল্লাহ আদম (আ.) কে বললেন, যাও। ওই ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কীভাবে দেয়, তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ সেটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম (আ.) ফেরেশতাদের বললেন, ‘আস্সালামু ‘আলাইকুম’। ফেরেশতামন্ডলী তার উত্তরে ‘আস্সালামু ‘আলাইকা ওয়া রহ্মাতুল্লাহ’ বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে ‘ওয়া রহ্মাতুল্লাহ’ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। (মুসলিম : ২৮৪১, আহমাদ : ৮১৭৭)।

পৃথিবীর অন্য সব অভিবাদন পদ্ধতির মধ্যে সামান্য হলেও ত্রুটি আছে। কিন্তু সালাম ত্রুটিমুক্ত। যেমন গুড মর্নিং, গুড ইভিনিং, গুড নাইট ইত্যাদি বলা হয়। পৃথিবীর অনেক জায়গায় রাত নেই, অনেক জায়গায় বিকাল নেই। সেখানে গুড মর্নিং, গুড ইভিনিং অর্থহীন। অন্যদিকে সালাম সর্বদা সকল জায়গায় অর্থবহ। এছাড়া সালাম আদান-প্রদানে রয়েছে পার্থিব ও পরকালীন অনেক উপকারিতা।

লেখক : শিক্ষক, আল আবরার ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার