হিজরি বর্ষের নবম মাস রমজান। রমজান হলো দোয়া কবুলের মাস, রহমত-মাগফিরাত-নাজাতের মাস, তাকওয়া অর্জনের মাস, আল্লাহর সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি লাভের মাস, কোরআন নাজিলের মাস; অসংখ্য ফজিলত দিয়ে পরিপূর্ণ এই মাস। রমজানের শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো সিয়াম সাধনা। সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের গন্ধের চেয়েও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।’ (বোখারি : ১৭৭৩)।
রোজার ফজিলতের দিকে লক্ষ্য রেখে বুদ্ধিমানদের উচিত রমজানের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা। নারী-পুরুষ উভয়কেই আগ থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। তবে নারীদের কিছু ভিন্ন আঙিকে সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।
১. প্রস্তুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় একটি কাজ হলো : হায়েজকালীন ভাঙা সাওম পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় (কাযা) করে নেওয়ার চেষ্টা করা। ২. রমজানের দিনগুলোর জন্য কাজের তালিকা তৈরি করে নেওয়া। যাতে ইবাদতগুলো সঠিক ও দীর্ঘ সময় ধরে করতে পারে। কেন না, নারীদের বাসায় সাহরি-ইফতার তৈরি করতে হয়, পাশাপাশি ঘরের কাজও সম্পাদন করতে হয়; নামাজ সঠিক সময়ে আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ন-ইসলামি বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য সময় নির্ধারণ করা, সঠিক সময়ে যাতে ইফতার-সাহরি সম্পন্ন হয় সেদিকে নজর রাখা। এসব কাজ আঞ্জাম দিয়েও নিজের ইবাদত, দোয়া আজকার করার জন্য নিজেকে সব কাজ থেকে মুক্ত করে নিরিবিলি আল্লাহর কাছে পেশ করার একটি মুহূর্ত তৈরি করা।
৩. রমজানের চাঁদ দেখার নিয়ত করা ও দেখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে চাঁদ উঠেছে কি না, তার তল্লাশি চালাতে অভ্যস্ত। কিন্তু চাঁদ দেখা নবি করিম (সা.)-এর সুন্নাহ। এই মর্মে একটি হাদিস : উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে তাঁর সময় হিসাব করে (৩০ দিন) পূর্ণ করবে।’
৪. রমজানে অধিক দান করার নিয়ত করা। কারণ নবী করিম (সা.) রমজানে সর্বাধিক দান করতেন।
৫. নারীরা যেহেতু স্বভাবগতভাবে বেশি কথা বলে থাকে, সঙ্গে পরনিন্দা-পরচর্চা করা নারীদের স্বভাব। রমজানে সেগুলো পরিহার করা, যাতে উত্তমভাবে সাওম পালন করা যায়, সেজন্য এই বদ অভ্যাসটি থেকে সর্বদা দূরে থাকার চেষ্টা করা।
৬. রমজান আসার আগেই তওবা- ইস্তেগফার করা। যাতে তওবা করার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়।
৭. রমজানে যেহেতু শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়, তাই বান্দা-বান্দিদের ইবাদত কবুল হওয়ার ও ইবাদত করার সুযোগ বেশি থাকে; কারণ পিছুটানের শয়তান তখন বন্দি থাকে। তাই নারীদের রমজানের আমল সম্পর্কে জানতে প্রস্তুতি হিসেবে বেশি বেশি ইসলামি বই, আমলি তালিম করা এবং জিকির, দরুদ পাঠ, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি বেশি বেশি করা।
৮. সাওম ভঙ্গের যথাযথ কারণ সম্পর্কে অবগত হওয়া।
৯. রমজানে মেয়েদের মাসিক হলে বা সন্তানপ্রসব হলে নারীর রোজার বিধান কী হবে সে সম্পর্কে দ্বীনি মাসয়ালা-মাসায়েল জানা। কী কী কারণে রোজা ভেঙে যেতে পারে, সে সম্পর্কে বিধি বিধান জানা। এ ক্ষেত্রে মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)-এর বেহেশতি জেওর, মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন রচিত আহকামুন নিসা বা ফিকহুন নিসা নামের যে কোনো একটি বই সংগ্রহ করে নারীর ইবাদতের বিধি বিধান সম্পর্কে অবগত হওয়া যেতে পারে।
১০. রমজানের শেষ দশকে ইত্তেকাফ করার জন্য নিজের ঘরে নামাজঘরের পরিবেশ তৈরি করা। ঘরে সুগন্ধি ব্যবহার করা। ইবাদতময় পরিবেশ গড়ে তোলতে চেষ্টা করা। স্বামী ও ছেলে সন্তানকে মসজিদে তারাবিহ পড়তে উৎসাহ দেওয়া আর নিজে ঘরে তারাবিহ নামাজ পড়া।
লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়