রোজায় ওষুধ ও চিকিৎসা গ্রহণের মাসায়েল

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ওষুধের মাধ্যমে মহিলাদের মাসিক নিয়ন্ত্রণ : কোনো কোনো মহিলা রমজানের রোজা রমজান মাসেই পুরো করার উদ্দেশ্যে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রেখে থাকে। এ ব্যাপারে শরিয়তের মাসআলা হচ্ছে, যে পর্যন্ত একজন মহিলার মাসিক দেখা না দিবে ওই পর্যন্ত সে নিয়মিত নামাজ-রোজা করে যাবে; যদিও কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাসিক বন্ধ রাখা হোক না কেন। তবে এ ধরনের পদ্ধতি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না, সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নেওয়া উচিত।

রমজানে ডাক্তারি পরীক্ষা ও ওষুধ ব্যবহার

এন্ডোস্কপি : এ পরীক্ষা করার সময় লম্বা চিকন একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়; যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে আর নলটির অপর প্রান্ত থাকে মনিটরের সাথে। এভাবে চিকিৎসকগণ রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করে থাকেন। যেহেতু এন্ডোস্কপিতে নল বা বাল্বের সঙ্গে কোনো মেডিসিন লাগানো হয় না, তাই এর কারণে সাধারণ অবস্থায় রোজা ভাঙার কথা নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থেকে জানা গেছে এবং প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে যে, এন্ডোস্কপির সময় টেস্টের প্রয়োজনে চিকিৎসকরা কখনো কখনো নলের ভেতর দিয়ে পানি ছিটিয়ে থাকেন; যা সরাসরি রোজা ভঙ্গের কারণ। সুতরাং যদি কারো ক্ষেত্রে পানি বা ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করানো ছাড়াই টেস্টটি সম্পন্ন হয়, তাহলে তার রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। অন্যথায় রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। এন্ডোস্কপি করা হয় খালি পেটে, তাহলে একজন রোজাদার রোজা অবস্থায় এ টেস্টটি না করাতে পারলে কীভাবে তা করাবে? এ প্রশ্নের জবাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বললেন, এক্ষেত্রে রোগীর পানি পান করতে বাধা নেই। তাই রোগী ইচ্ছা করলে শুধু পানি দ্বারা ইফতার করে টেস্টটি করিয়ে নিতে পারে।এন্ডোস্কপির মতোই মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে আরেকটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে।

এনজিওগ্রাম : সাধারণ পদ্ধতির এনজিওগ্রামের কারণে রোজা নষ্ট হয় না।

ইনজেকশন ও ইনসুলিন : ইনজেকশনের কারণে রোজা ভাঙে না। এমনিভাবে একজন রোজাদার ইফতারের আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে। অবশ্য যেসব ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোজা মাকরূহ হবে।

স্প্রে জাতীয় ওষুধ : বর্তমানে এ্যারোসল জাতীয় বেশ কিছু ওষুধ দ্বারা বক্ষব্যাধি, হার্টএ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে। গ্যাস জাতীয় এসব ওষুধ রোগীর মুখের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। নিম্নে রমজানে এ ওষুধগুলো ব্যবহারের হুকুম বর্ণনা করা হলো।

নাইট্রোগ্লিসারিন : অ্যারোসোল জাতীয় ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যবহার করে থাকে। জিহবার নিচে ২/৩ বার ওষুধ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। ডাক্তারদের মতে সঙ্গে সঙ্গে ওই ওষুধ শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ হিসেবে এ ওষুধ ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোগীর কর্তব্য হলো, জিহবার নিচের ওষুধটি দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তা গিলে না ফেলা।

ভেন্টোলিন ইনহেলার : বক্ষব্যাধির জন্য এ ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রোগীদের মুখের ভেতর এমনভাবে ওষুধটি স্প্রে করতে বলা হয়, যাতে তা সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দিকে চলে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে খাদ্যনালী হয়ে ওষুধটি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সচিত্র ব্যাখ্যা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেছে, ওষুধটি স্প্রে করার পর এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতেও প্রবেশ করে। সুতরাং এ ধরনের ইনহেলার প্রয়োগের কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। চিকিৎসকরা বলেছেন যে, মারাত্মক জটিল রোগী ছাড়া অন্য সকলেরই সাহরিতে এক ডোজ ইনহেলার নেওয়ার পর পরবর্তী ডোজ ইফতার পর্যন্ত বিলম্ব করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং রোগীর কর্তব্য হলো, বিষয়টি তার চিকিৎসক থেকে বুঝে নেওয়া এবং সম্ভব হলে রোজা অবস্থায় তা ব্যবহার না করা। অবশ্য যদি কোনো রোগীর অবস্থা এত জটিল হয় যে, ডাক্তার তাকে অবশ্যই দিনেও ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে ওই রোগীর এ সময়ে ইনহেলার ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে রোজা কাযা করে নিবে। (সূত্র : মাসিক আল কাউসার : ১৪৩৫ হিজরি শাবান-রমজান সংখ্যা)।

লেখক : মুফতি ও শিক্ষাবিদ