মাহে রমজানের শেষ দশক অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই সময়ে অধিক ইবাদাত বন্দেগির করতে হয়। রমজানের অফুরন্ত রহমত বরকত আর মাগফিরাত লুফে নিতে হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুল (সা.) তার লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বোখারি : ১৮৯৭, মুসলিম : ২৬৫৮) শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি আমল উল্লেখ করা হলো ??।
তাহাজ্জুদ আদায় করা : রমজান তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মোক্ষম সময়। সাহরিতে উঠে সবার এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়। রাসুল (সা.) সারা বছর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। রমজানের শেষ দিকে তাহাজ্জুদের দিকে আরো বেশি মনোযোগী হতেন। দীর্ঘ সময় দিয়ে নামাজ পড়তেন। হজরত আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজান মাসে রাসুল (সা.)-এর নামাজ কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসুল (সা.) রমজান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলা) ১১ রাকাতের অধিক নামাজ আদায় করতেন না। তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তুমি সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তুমি সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর তিনি তিন রাকাত বিতির নামাজ আদায় করতেন। (বোখারি: ১০৮০)।
ইতিকাফ করা : রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাত। ২১ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত নারীরা ঘরে এবং পুরুষরা মসজিদে ইতিকাফ করতে হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন।? তার ওফাত পর্যন্ত এই নিয়ম ছিল। এরপর তার সহধর্মিণীরা ও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (বোখারি : ১৮৯৯)।
লাইলাতুল কদরের তালাশ : লাইলাতুল কদরের এক রাতের ইবাদত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ জন্য এ রাতে জাগ্রত থেকে বিভিন্ন ইবাদাত করতে হয়। হাদিসে লাইলাতুল কদরের অনেক ফজিলত বয়ান করা হয়েছে। শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে কদর তালাশের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (বোখারি : ১৮৯৩) ইতেকাফ কারী ব্যক্তির ভাগ্যে সহজে লাইলাতুল কদর নসিব হয়।
বেশি বেশি দোয়া করা : রমজানে দোয়া কবুলের সুবর্ণ সুযোগ। ইফতার ও সাহরিতে প্রচুর দোয়া কবুল হয়। শেষ দশকের প্রত্যেকটি রাতে গুরুত্বের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহতায়ালা প্রতিরাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছো এমন, যে আমাকে ডাকবে আমি তার সাড়া দেব। কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে তা দিব। কে আছো এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তোকে ক্ষমা করে দেবো? (বোখারি : ১০৭৮) হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) রমজানে চারটি কাজ বেশি করতে বলেছেন, তার মধ্যে দুটি হলো- এক. আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা, দুই. জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়া। (সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৮৮৭; বায়হাকি :৩৬০৮)।
তাওবা ইস্তেগফার করা : রমজানের শেষ দশককে বলা নাজাত। এই সময়ে অধিক পরিমাণে তাওবা ইস্তেগফারের নাজাত নিতে হয়। তাওবার অশ্রু জলে অতীতের পাপরাশি ধুয়ে মুছে নব উদ্যমে জীবন সাজাতে হয়। রমজান পাওয়া সত্ত্বেও মাগফিরাত না পেলে ধ্বংস অনিবার্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলি মলিন হোক, যার কাছে আমার উল্লেখ করা হলো অথচ আমার উপর দরুদ পাঠ করলো না। ঐ ব্যক্তির নাক ধূলি মলিন হোক, যার জীবনে রমজান মাস এলো; কিন্তু তাকে ক্ষমাপ্রাপ্ত না করেই তা অতিবাহিত হলে গেল । ঐ ব্যক্তির নাক ধূলি মলিন হোক, যে তার পিতা-মাতাকে (বা তাদের একজনকে) বৃদ্ধাবস্থায় পেল; কিন্তু তাদের খেদমত করার মাধ্যমে সে জান্নাতি হতে পারল না।
(তিরমিজি : ৩৫৪৫, আল-আদাবুল মুফরাদ : ৬৪৬)।