রমজান মোমেনের জন্য মহাআনন্দের মাস। ইবাদতের মাধ্যমে জান্নাত লুফে নেওয়ার ও রবের সান্নিধ্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ। এই মাসে আল্লাহ তার বান্দাকে ক্ষমার ঘোষণা দেন এবং বান্দার জন্য রাখেন বিশেষ ও মহাপ্রতিদান। সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো- রব রোজাদারকে নিজ হাতেই রমজানের প্রতিদান দিবেন। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার জন্য। কেন না, রোজা হলো আমার জন্য। আর আমি নিজেই তার প্রতিদান দিব। রোজাদারের মুখের গন্ধ (ক্ষুধার কারণে যা সৃষ্টি হয়) আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। (বোখারি-১৮৯৪) কোরআনে পাকের মধ্যেও এমন প্রতিদানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মোমেনরা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেমন করা হয়েছে, তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। (সূরা বাকারা-১৮৩)। আর তাকওয়া একমাত্র আল্লাহর জন্যই হয়। তার প্রতিদানও মহান রব নিজে দিবেন। আল্লাহ নিজ হাতে কেমন পুরস্কার দিবেন তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে বর্ণনা করেছেন। যেমন রোজাদার ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চিন্তা থাকবে। রবের নিজ হাতে দেওয়া প্রতিদানে হবে মহাখুশি। তাদের সঙ্গে আল্লাহ বিশেষভাবে সাক্ষাৎ করবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময়। অন্যটি হলো রবের সঙ্গে মিলনের মহিমান্বিত মুহূর্ত। (বোখারি-৭৪৯২)।
রোজাদারের জন্য অপর আরেকটি পুরস্কার হলো তা বান্দাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে। জাহান্নামের সামনে তা রোজাদারের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়াবে। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজা হলো জাহান্নাম থেকে নিজেকে বাঁচানোর ঢালস্বরূপ। (আল মুজামুল আউসাত-১/২১)। রোজাদারকে আল্লাহ পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দান করবেন। তারা সেখানে তাদের জন্য নির্ধারিত একটি বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যার নাম হলো রাইয়্যান। তা দিয়ে অন্য কারো প্রবেশ করার অধিকার থাকবে না। হাদিসে এসেছে, সাহাল ইবনে সাদ আস সায়িদী (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি নেক কাজের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার একটি করে বিশেষ দরজা থাকবে। আর রোজার জন্য নির্ধারিত দরজাকে বলা হয় রাইয়্যান। (সিলসিলায়ে জায়িফা-৫৯৩৯)। রোজা বান্দার দেহকে পবিত্র করে। এবং তার মধ্যে ইবাদতের স্বাদ সৃষ্টি করে। বান্দার জন্য অন্যান্য ইবাদতের দরজা খুলে দেয়। হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রতিটি জিনিসকে পবিত্র করার একটি মাধ্যম আছে। সুতরাং দেহকে পবিত্র করার মাধ্যম হলো রোজা। (ইবনে মাজাহ-১৭৪৫) অন্যত্রে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রতিটি জিনিসের একটি দরজা আছে। আর ইবাদতের দরজা হলো রোজা। (তাখরিজুল ইহয়া-১/৩১০)।
ওলামায়ে কেরামগণ বলেন, হাদিসে উল্লিখিত প্রতিদান ছাড়াও আল্লাহ রোজাদারের জন্য এমন কিছু পুরস্কার লুকায়িত রেখেছেন যা তাদের অন্যদের থেকে মর্যাদাবান করবেন। যেমন কেউ কেউ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন রোজাদারের প্রতিদান হলো স্বয়ং আল্লাহ নিজেই। অর্থাৎ আল্লাহ তাকে তার প্রিয় করে নিবেন। তাই গত হওয়া দিনগুলোর পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে আগামীর দিনগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারি।
লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।