নবীজির সুপারিশ
আবদুল কাইয়ুম শেখ
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাশরের ময়দানে দীর্ঘ সময় দণ্ডায়মান থাকা থেকে মুক্তি লাভ ও সৃষ্টির মাঝে ফায়সালা শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। এই সুপারিশের নামই মাকামে মাহমুদ বা প্রশংসিত স্থান। তাছাড়া বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি দলের জন্য বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করার সুপারিশও করবেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেসব মুসলমানের জন্যও সুপারিশ করবেন, যারা জাহান্নামের যোগ্য হয়ে গিয়েছে। জান্নাতে লোকদের মর্যাদা উঁচু করার জন্যও সুপারিশ করবেন। যেসব লোক চিরকাল দোজখে থাকবে, তাদের আজাব লঘু করার জন্যও সুপারিশ করবেন। তাছাড়া পৌত্তলিকদের শিশু-সন্তানদের আজাব না দেওয়ার জন্যও সুপারিশ করবেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশের দরুন তার উম্মতের গুনাহগার বান্দাদের ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডএর সুপারিশ সম্পর্কে হজরত ?আনাস (রা.) বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের একত্রিত করবেন। তখন তারা বলবে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে কোন সুপারিশ যদি নিয়ে যেতাম, তাহলে তিনি আমাদের এ স্থান থেকে বের করে শান্তি প্রদান করতেন। এরপর তারা হজরত আদম (আ.)-এর কাছে গিয়ে বলবে, হে আদম (আ.)! আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? অথচ আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে তিনি তাঁর ফেরেশতারা দিয়ে সেজদা করিয়েছেন। আর আপনাকে সব জিনিসের নাম শিখিয়েছেন। কাজেই আপনি আমাদের পালনকর্তার কাছে সুপারিশ করুন, যেন এ স্থান থেকে সরিয়ে তিনি আমাদের স্বস্তি দেন। হজরত আদম (আ.) তখন বলবেন, এ কাজের জন্য আমি উপযুক্ত নই। হজরত আদম (আ.) তাদের কাছে নিজের ভুলের কথা স্মরণ করে বলবেন, তোমরা বরং নূহ (আ.)-এর কাছে যাও- কেন না, তিনিই আল্লাহর প্রথম রাসুল। যাকে তিনি পৃথিবীবাসীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা নূহ (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তিনি তাঁর কৃত ভুলের কথা স্মরণ করে বলবেন, তোমরা বরং আল্লাহর খলিল ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে যাও। তখন তারা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনিও তাদের কাছে স্বীয় ভুলের কথা উল্লেখ করে বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মূসা (আ.)-এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা যাকে আল্লাহ তাওরাত দিয়েছিলেন ও তাঁর সঙ্গে তিনি সরাসরি কথা বলেছিলেন। তারা তখন হজরত মূসা (আ.)-এর কাছে আসবে। মূসা (আ.)-ও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। তাদের কাছে তিনি নিজের ভুলের কথা উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা বরং ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও! যিনি আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসুল, কালেমা ও রূহ। তখন তারা হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে আসবে। তখন ঈসা (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডএর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা, যার আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে অনুমতি চাইব। আমাকে এর অনুমতি দেওয়া হবে।
আমি আমার রবকে যখন দেখতে পাব, তখন তাঁর সামনে সেজদায় পড়ব। আল্লাহ তাঁর মর্জি অনুসারে যতক্ষণ আমাকে সেভাবে রাখার রেখে দেবেন। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান ও বলুন, শোনা হবে। চান, দেওয়া হবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হবে। তখন আমার রবের শিখিয়ে দেওয়া প্রশংসা দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব। তারপর সুপারিশ করব। আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। এরপর আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে ফিরে আসব। যখন আমার প্রতিপালককে দেখতে পাব, তখন তাঁর জন্য সেজদায় পড়ে যাব। আল্লাহর মর্জি মোতাবেক যতক্ষণ আমাকে এভাবে রাখতে চাইবেন রেখে দেবেন। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হবে। চান, দেওয়া হবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হবে। তখন আমার রবের শিখিয়ে দেওয়া প্রশংসা দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব ও সুপারিশ করব। তখনো আমার জন্য একটা সীমানির্দিষ্ট করা হবে। আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে আবার ফিরে আসব। আমি এবারও আমার প্রতিপালককে দেখামাত্র সেজদায় পড়ে যাব। আল্লাহতায়ালা তাঁর মর্জি মোতাবেক যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে ওই অবস্থায় রাখবেন। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠান! বলুন, শোনা হবে। চান, দেওয়া হবে। সুপারিশ করুন, কবুল করা হবে। তখন আমার রবের শেখানো প্রশংসা দ্বারা প্রশংসা করে সুপারিশ করব। তখনও আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট থাকবে। আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেব। অতঃপর তাঁর কাছে ফিরে গিয়ে বলব, হে আমার রব! এখন একমাত্র তারাই জাহান্নামে বাকি আছে, যাদের কোরআন আটকে দিয়েছে ও যাদের ওপর স্থায়ীভাবে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছে, আর তার হৃদয়ে একটি যবের ওজন পরিমাণ ঈমান আছে, তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তারপর বের করা হবে জাহান্নাম থেকে তাদেরও, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছে ও তার অন্তরে একটি গমের ওযন পরিমাণ ঈমান আছে। জাহান্নাম থেকে সর্বশেষে তাকে বের করা হবে, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছে ও তার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান আছে। (বোখারি : ৭৪১০)।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১।